বই: রিভেঞ্জ
লেখক: ইয়োকো ওগাওয়া
অনুবাদ: কৌশিক জামান
প্রচ্ছদ: কৌশিক জামান
প্রকাশনী: বাতিঘর
পৃষ্ঠা: ১৬০
মূল্য: ২০০/- টাকা
‘জীবন সৌন্দর্যে পূর্ণ। মৌমাছির দিকে তাকাও। শিশুদের হাসি মুখের দিকে তাকাও। বৃষ্টির ঘ্রান নাও। বাতাসের স্পর্শ নাও। জীবনকে পুর্ণ ভাবে উপভোগ করো। আর নিজের স্বপ্ন পূরনের জন্য প্রয়োজনে লড়াই করো।’
——- অ্যাশলি স্মিথ
উপভোগ যখন হারিয়ে যায় জীবনের মঞ্চে বিস্বাদের ছাঁয়ায়। বিস্বাদের সাথে সমাজ বিবর্তনের নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে, ভাবছেন আমি অহেতুক ভাবেই সমাজব্যবস্থাকে টেনে আনছি কি? যুক্তি দিয়ে পথ বিছিয়েছি। আসুন এক নজর দেখা যাক সেই পথের গল্পখানি। এই পথটার শুরু করেছি রিভেঞ্জ নামের উপাখ্যান দিয়ে। নিদিষ্ট করে বললে প্রথমে মনে হবে গল্পসংকলনের মোড়কে যেন এক নভেলা। প্রেক্ষাপট আধুনিক সমাজব্যবস্থার, গল্পটা বরাবর বিস্বাদকে নিয়ে। আধুনিক পুজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় মানুষ বিস্বাদের এক চক্রে যেন আবর্তিত। এজন্য এবার বইয়ের পৃষ্ঠা থেকে একটা থিওরি আনছি দৃশ্যত করতে। কয়েক শতাব্দী আগেই মার্ক্স এলিনিয়েশন থিওরি এনে হইচই বাঁধিয়েছিল, যেখানে মানুষ প্রতিনিয়ত শারীরিক আর মানসিক ভাবে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে সমাজ থেকে উৎপাদন ব্যবস্থার যাতাকলে। বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে কিছু ঘটনা মানুষকে বেধে ফেলছে বিমর্ষতার ছোঁয়াতে, প্রথমে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে সমাজ থেকে, আশেপাশের আপণ জগত থেকে আর শেষে গিয়ে নিজেই নিজের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
আধুনিক জাপানি সাহিত্যের মাঝেও এই বিস্বাদের ছোয়া তীব্রভাবে ফুটে উঠেছে। আমাদের বিস্বাদের এই কারিগরের নাম ইয়োকো ওগাওয়া। যার রিভেঞ্জ নামে গল্প সংকলনে মানুষের বেঁচে থাকা আর সম্পর্ক গুলোর দারুণ এক প্রতিফলণ এসেছে। রিভেঞ্জ হলো একশত ষাট পৃষ্ঠার আধুনিক মানুষের যাপনের চিত্র। গল্পগুলোতে প্রত্যেকটি প্রেক্ষাপট যেন একটি আরেকটির সাথে মিশে আছে। আসলে বিস্বাদের রঙ সব চেহারার একিভাবে প্রতিফলিত হয়, তাই আপাতদৃষ্টিতে গল্পগুলো মনে হয় কানেক্টেড প্রত্যেকটির সাথে। মোট এগারটি গল্পের সমন্বয়ে বইটি আধুনিক যাপনের এক যন্ত্রণার ভাষা!
১. আফটারনুন অ্যাট দ্যা বেকারিঃ
দিনটা ছিল রবিবার। বিকেলটা এক কথায় মনোমুগ্ধকর। শহরের মানুষ জন টাউন হল, ক্লক টাওয়ার আর স্কয়ারের দিকে ঘুরোঘুরি করে উইকেন্ড উপভোগ করছিল। আনন্দটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল মেঘহীন আকাশের সূর্যের মুক্তোর মত আলোর ঝলকানি। স্কয়ারের পাশেই রয়েছে ছোটখাটো একটা ছিমছাম বেকারি শপ। শহরে এ বেকারির বেশ খ্যাতি। দোকানের মেয়েটা বেশ ভালই চালাচ্ছিল সব। সেদিন বিকেলে দোকানে ক্রেতা ছিলনা একেবারেই। বিকেলের দিকে এক মহিলা এলো বেকারিতে। দেখে মনে হচ্ছিল শহরে নতুন এসেছে। ভিতরে কাউকে দেখতে না পেয়ে একটা টুলে বসে বসে দোকানের চারপাশে দেখছে। অনেকক্ষন ধরেই কারো দেখা নেই। একটু পরে ছোটখাট গড়নের বয়স্ক এক মহিলা এলো বেকারির মেয়েটার খোঁজে। তিনি এখানে মশলাপাতি সরবরাহ করে। তাকে দেখে টুলে বসা ভদ্র মহিলা বলে উঠল তিনি তার ছয় বছর বয়সে থেমে যাওয়া ছেলেটির জন্য শর্টকেক নিতে এসেছে।
২. ফ্রুট জুসঃ
স্কুলে অদ্ভুত রকমের মেয়েটা কখনোই কারোসাথে কথা বলত না। সহপাঠীরা কথা বলতে চাইলেও সে এড়িয়ে যেত কোনোভাবে। ফ্যাকাশে বর্ণের লম্বা চুলের মেয়েটি বেশ অন্তর্মুখী। বেশ সুন্দরীও বটে। ক্লাসের মধ্যে মেয়েটি সারাক্ষণ চুপ করে বসে থাকত, বাকিসময় লাইব্রেরিতে থাকত। কোনো ক্লাবের সদস্য ছিলনা, লাঞ্চের সময়ও সে সবসময় এক কোণায় বসে একাকী খেত। শোনা যেত সে তার মায়ের অবৈধ সন্তান। সেদিন স্কুলের সব ক্লাস শেষ। তাই লাইব্রেরিও প্রায় ফাঁকা হয়ে এসেছিল। মেয়েটা লাইব্রেরিতেই ছিল। একটা ছেলে বই পড়ছিল এক কোণাতে বসে, হুট করে মেয়েটি সামনে এসে রবিবারে একসাথে লাঞ্চের জন্য বলে, মনে হচ্ছিল বলার সময় ওর শরীর কাঁপছে।
৩. ওল্ড মিসেস জেঃ
চারপাশ জুড়ে বিভিন্ন ফলের সমাহারে আবৃত একটা পাহাড়, পাহাড়ের উপরের দিকে সুন্দর একটা বাড়ি, সে বাড়ির মালকিন এক বুড়ি, নাম মিসেস জে। বাচ্চাকাচ্চা নেই তাই স্বামীর মৃত্যুর পরে মিসেস জে একাই থাকেন। এদিকে, স্বামীর মৃত্যু ও রহস্যে ঘেরা। যাইহোক, বাড়ির অন্য অ্যাপার্টমেন্ট গুলো ভাড়া দিয়ে মিসেস জে বিভিন্ন ফলের বাগান করেছেন চারিপাশ জুড়ে। কিউয়ি নামের ফলে পুরো বাগান আচ্ছাদিত। তার অ্যাপার্টমেন্টে নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে, শোনা যাচ্ছে তিনি একজন লেখিকা। লেখিকা এডিটরের মাধ্যমে খোঁজ পেয়েছিল বাড়িটার। চারপাশের প্রাকৃতিক শোভা আর কিউকির সমাহার সবমিলিয়ে বেশ ভালই যাচ্ছিও দিন। হঠাৎ একদিন দেখা গেল বাগানের কিউয়িগুলো উধাও। এদিকে, বাগানে অদ্ভুত আকৃতির কিছু গাজর গজাচ্ছে যার কোনোটা একদম মানুষের হাতের মত। আঙ্গুলের সব আকৃতি ভেসে উঠেছে গাজর গুলোর গড়নে!
৪. দ্যা লিটল ডাস্টম্যানঃ
জন্মের সময় লোকটির জন্মদাত্রী মা মারা গিয়েছিল। মায়ের স্মৃতি বলতে লোকটার ছিল তার বাবার নতুন স্ত্রীর কথা। তিনি ছিল লেখিকা। লোকটি তাকে আম্মু ডাকতেন। আম্মু ছিল তার চেয়ে প্রায় চৌদ্দ বছরের বড়। শেষ বার আম্মুকে দেখেছিল ত্রিশ বছর আগে। হুট করে খবর এলো আম্মু আর নেই। মৃত্যুর খবরটাও তার গার্লফ্রেন্ড তাকে দিয়েছিল। তার গার্লফ্রেন্ড জব করত আর্টস এন্ড ক্রাফটস ম্যাগাজিনে। তার কথা অনুযায়ী খবরের কাগজ দিতে আসা ছেলেটি নাকি প্রথম দেখেছে লোকটার আম্মুর এর পরে থাকা লাশ। সে আরো বলল, আম্মুর ধারণা ছিল তার লিখাগুলো কারা যেন চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিল!
৫. ল্যাব কোটসঃ
একটা হাসপাতালের রেসপির্যাটরি মেডিসেনের একজন ডাক্তারকে সকাল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। হাসপাতালে সকাল থেকে তাকে খোঁজাখুঁজি চলছে। এখনো অব্দি পাওয়া যায়নি। এদিকে, হাসপাতালে আসা সার্জারী করার জন্য একটি মেয়ের ঠিক বুকের ভিতর খুচিয়ে গর্ত করে কে যেন ফেলে রেখে গেছে। এসবের মধ্যেই হাসপাতালের দুই সেক্রেটারি নিয়মমাফিক তাদের প্রতিদিনকার কাজগুলো করছিল যেমন মৃতদেহ থেকে কাপড় আর অন্যান্য জিনিষপত্র আলাদা করে, পরিষ্কার করে মার্কার দিয়ে নিদিষ্ট করে রাখা ইত্যাদি। হঠাৎ করে তারা খেয়াল করল ঝাঁকি খেয়ে কি একটা যেন একটা কোট থেকে বেরিয়েছে। একটা জিহবা বিড়বিড়িয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে! এদিকে, কোটটা যেন খুব পরিচিত মনে হচ্ছিল তাদের মধ্যে একজন সেক্রেটারির।
৬. সিউইং ফর দ্য হার্টঃ
ট্রেন স্টেশনের কাছে একটা ব্যাগের দোকান। প্রায় ত্রিশ বছরেরও বেশি হবে দোকানটার বয়স৷ দোকান ছোট হলেও বেশ সুন্দর গোছালো। দোকানে বসে থাকা লোকটা খুব ভাল ব্যাগ বানাতে পারে। তিনি হচ্ছেন তেমন যে দক্ষতার সাথে যেকোন ধরনের ব্যাগ নিমিষে বানিয়ে ফেলতে পারে। দোকানের উপরে দোতলায় ছোট দুইরুমের ঘরে লোকটার আবাস। তিনি অনেক বছর ধরে একাকী বসবাস করছে। সঙ্গী বলতে খাচায় বন্দী একটা হ্যামস্টার। কিন্তু লোকটা অদ্ভুত রকম ভাবে নিজের সৃষ্টিকর্মকে দারুণ ভালবাসে। নিবিষ্ট ভাবে ডিসপ্লেতে থাকা ব্যাগ গুলোতে পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দেয় যেন তার হৃদপিণ্ড এক একটি ব্যাগ। অনেকটা সবার থেকে আলাদা যাপনে অভ্যস্ত লোকটার কাছে একদিন একটা মেয়ে অদ্ভুত রকমের এক ব্যাগের বায়না নিয়ে আসলো। সেই ব্যাগটা যেন এক ধৈর্যের মত, গভীর ভাবে বিবেচনার বিষয়। ব্যাগের ম্যাপিংয়ের সময় লোকটার তীব্রভাবে যেন অন্তর আত্মা আকর্ষিত হতে লাগল। কি সেই অদ্ভুত মায়া আর মেয়েটিবা কি এমন ব্যাগ নিতে চেয়েছে !
৭. ওয়েলকাম টু দ্যা মিউজিয়াম অফ টর্চারঃ
অনেকদিন পরে উইকেন্ডে মেয়েটি তার বয়ফ্রেন্ডের জন্য রাতের খাবার তৈরি করছিল। অনেকদিন পরে প্রায় তিন সপ্তাহ পরে ভীষণ ব্যস্ত শিডিউল শেষ করে তারা একসাথে ছুটির দিন কাটাচ্ছে। খুব খুশি ছিল মনে মনে। তার বয়ফ্রেন্ড বাসায় ঢুকে দুজন ভালবাসার আবিষ্টে জড়িয়ে ধরল। তারা দুজন কথা বলছিল। মেয়েটি বলছিল উপরের ফ্লাটের একটা খুনের তদন্তের কথা। ডিটেকটিভ এসে তার থেকে বয়ান নিয়েছে। এসব কথার মধ্যেই হঠা তার বয়ফ্রেন্ড কিছু একটা কথায় চুপ হয়ে হাত ছেড়ে দিল। মুহুর্তে সবকিছু দুজনের খুশি আর আবেগকে যেন ছিন্নভিন্ন করে ফেলল। মেয়েটির সমস্ত বেদনা জমাট হয়ে ক্রোধে পরিণত হল। ইচ্ছে করছিল তার বয়ফ্রেন্ডকে কোনো এক টর্চার সেলে নিক্ষেপ করতে। যেখানে রয়েছে শতবছর ধরে রাখা মানুষকে নির্যাতনের কিছু নিগুঢ় সত্য দলিল। কিন্তু এ জগতে আদৌ কি রয়েছে তেমন কোনো কিছু!
৮. দ্যা ম্যান হু সোল্ড ব্রেইসেসঃ
ছেলেটার মামা আবর্জনা ভর্তি এক অ্যাপার্টমেন্টে মারা গিয়েছিল। তিনি তার নিজের অ্যাপার্টমেন্টে আবর্জনায় চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন। ঠিক মামা বললেও হয়না। আসলে তিনি হলেন ছেলেটার নানির দ্বিতীয় বিয়ের পরে নতুন স্বামীর আগের স্ত্রীর ছেলে। ফলে, ছেলেটার মা আর তার মামার মধ্যে বয়সের অনেকখানি ব্যবধান ছিল ইনফ্যাক্ট তারা কখনো এক বাড়িতে থাকেনি। তবু, ছেলেটার সাথে তার মামার জন্য অদ্ভুত রকমের এক মায়া খেলা করত। মারা যাওয়ার কিছুকাল আগে এক অদ্ভুত মিউজিয়ামের দায়িত্বে ছিল তার মামা, যার কেয়ারটেকার ছিল এক জমজ বুড়ি আর তাদের ছিল একটা পালিত রয়েল বেঙ্গল টাইগার! কিন্তু সেটা কিসের মিউজিয়াম হতে পারে?
৯. দ্যা লাস্ট আওয়ার অফ দ্যা বেঙ্গল টাইগারঃ
একজন মহিলার স্বামী তিনদিন আগে মেডিকেল কনফারেন্সে যোগ দিতে আমেরিকা গিয়েছে। তার স্ত্রী স্বামীর এই যাত্রার আসল উদ্দেশ্য ভালভাবেই বুঝতে পেরেছে। হাতে নাতে ধরার জন্য মহিলা গেল পিছুপিছু। জীবনের দারুণ কষ্টের কথা গুলো ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যাচ্ছিল৷ কিন্তু প্রতিমধ্যে বাইপাস থেকে বেরিয়ে ব্রিজ পার হওয়ার সময় একটা দুর্ঘটনায় সম্মুখীন হলেন তিনি। কিছুদুর এগিয়ে একটা বড় পাথুরে বাড়ির সামনে গিয়ে হাজির হলেন তিনি। গেট দিয়ে ঢুকতে দেখা গেল পানির ফোয়ারার পাশে একটা বাঘ, দুর্বলভাবে নিশ্বাস ফেলছিল ! বাঘটার পাশে একজন বয়স্ক মানুষ। মনে হচ্ছিল যেন শহরটা মুড়ে রাখা তাপদাহটা হঠাৎ করেই কমে গিয়েছে। কিন্তু এ নাগরিক শহরে একটা মুমূর্ষু বাঘের পাশে বৃদ্ধটি একা কি করছে!
১০. টমেটোস অ্যান্ড দ্যা ফুল মুনঃ
মেয়েদের একটা ম্যাগাজিনে একটা হোটেল নিয়ে লিখতে হবে। সেই আর্টিকেল লিখার জন্য এই হোটেলে উঠা মূলত লোকটার। অবশেষে হোটেলে পৌছতে বেশ সময় লাগল। ক্লান্তি পেরিয়ে যখন হোটেলে ডুকে নিজের কামড়ার দিকে লোকটা গেল, চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখে এক অদ্ভুত রকমের মহিলা বসে আছে। মহিলাটার পরনে একটা সাধারন স্কার্ট আর ব্লাউজ। একটা পার্সেলের মত কিছু বুকে ধরে রেখেছে। দেখে কাগজের বা আরো স্পেসিফিক করলে বললে পান্ডুলিপির মত কিছু একটা মনে হচ্ছে। তার হাতে একটা ফিতা ধরে রাখা অপর প্রান্তে একটা কুকুর বাধা। কিন্তু বন্ধ ঘরে এই মহিলা কিভাবে ঢুকল? এটা বেশ রহস্যময় ব্যাপার। তার চেয়েও বড় কথা মহিলার দাবি এটা নাকি তারই রুম! তাহলে কি একি চাবি কি করে দু’জনের থাকে। পরদিন, সকালে মহিলার সাথে আবার দেখা হোটেলের লঞ্চে। পরিচিত হয়ে জানা গেল তিনি একজন লেখিকা!
১১. পয়জন প্ল্যান্টসঃ
প্রায় চল্লিশ বছর ধরে একাকী বসবাস এক মহিলার। স্বামী মারা হয়েছে আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে। মহিলা বেশ ভাল পেইন্টিং করতে পারে। মুলত এ পেইন্টিংয়ের বদৌলতে তার স্বামীর সাথে চার পরিচয় হয়েছিল। তার স্বামী বেশ বড়লোক ছিল। তার বাগানের পেইন্টিং করতে গিয়ে দুজনের পরিচয়, পরে তা পরিণয়ে গড়ায়। সেসব বেশ আগেকার কথা। এখন সব স্মৃতি হয়ে একাকিত্ব যাপনে অভ্যস্ত তিনি। কিছুদিন আগে একটা চ্যারিটি কনসার্টে এ গিয়ে একটা ছোট ছেলের সাথে ভদ্র মহিলার পরিচয় হয়। কনসার্টের আয়োজক ছিলেন একজন স্থানীয় ব্যাংকার। যার সাথে মহিলার আগে থেকেই পরিচয় ছিল। লোকটা মহিলার পেইন্টিং কিনেছিল। তাই লোকটার মাধ্যমে মহিলা ছেলেটার জন্য পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দেয়। একাকিত্বের জগতে ছোট ছেলেটা যেন এলো এক আলোক ঝলকানির মত। শর্ত হলো প্রতি শনিবার ছেলেটা এসে তার পড়ার অগ্রগতির খবর জানাবে মহিলাটিকে আর তার বদৌলতে পাবে পড়ার সমস্ত খরচ। এভাবে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবেই চলছিল ব্যাপারটাএবং ছেলেটা সুবোধের মতই তার দায়িত্ব পালন করে আসছিল। হঠাৎ এক শনিবার ছেলেটার ফোন এলো। রিসিভার হাতে মহিলা অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। কিছু একটা হয়েছে ফোনের অপর প্রান্তে। কিন্ত সেটা কি ঘটনা?
গল্পের আকার ডার্ক ও থ্রিলার ঘরানার। এ গল্পগুলো ভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়েছে আর দশটা গল্পের কাহিনীর মত সরলীকরণ ভাবে এগোবেনা। তবে ভাবনার জগতে নাড়া দেবে। পড়তে গিয়ে প্রতিটা গল্পের সাথে সম্পর্ক আবিষ্কার হবে এমন ভাবনা আসবে। আমার গল্পের ব্যবচ্ছেদগুলো বেশ ভাল লেগেছে। সত্যি বলতে আমার ভাল লাগে যাপনের কথা যেখানে ফুটে উঠে মানুষের বেঁচে থাকার গল্প, টিকে থাকার সংগ্রাম। এখানেও সংগ্রাম রয়েছে তবে তা মনস্তাত্ত্বিক। আর দিন শেষে যাপনের কথাগুলো একি ভাবে ফুটে উঠে।
ইয়োগো ওগাওয়া আধুনিক মানুষের দুঃখের মালা গেঁথেছে বিস্বাদের চোখে, মানুষের বেঁচে থাকার বিতৃষ্ণার বিপরীতে বাস্তব সমাজের চিত্র রিভেঞ্জের মুল রিভেঞ্জ! জাপানী সাহিত্য জগতে প্রায় সব বড় পুরষ্কারই লেখিকা তার লিখার বদৌলতে তুলে নিয়েছে। তার মধ্যে আকুতাগাওয়া এবং তানিজাকি বিশেষভাবে উল্লেখ্য। লেখিকার উল্লেখযোগ্য কিছু বইয়ের তালিকাতে রয়েছে দ্য ড্রাইভিং পুল, হোটেল আইরিশ এবং দ্য হাউজকিপার অ্যান্ড দ্য প্রফেসর।
আর আমাদেরকে বরাবর জাপানী সাহিত্যের ছোঁয়া এনে দিয়েছে কৌশিক জামান। জামান সাহেবের জাপানী সাহিত্যের প্রতি তুমুল ঝোঁক রয়েছে, বিশেষ করে বিখ্যাত জাপানিজ লেখক হারুকি মুরাকামির নরওয়েজিয়ান উড অনুবাদের মধ্য দিয়ে তিনি এই জগতে প্রবেশ করেছিলেন। এরপর থেকেই একের পর এক ভিন্ন ধারার বই অনুবাদ করে পাঠককুলে দারুণ জনপ্রিয় হয়েছেন। তার উল্লেখযোগ্য অনুবাদগুলোর মধ্যে – কনফেশন – কানায়ে মিনাতো; মেন উইদাউট উইমেন, স্পুটনিক সুইটহার্ট – হারুকি মুরাকামি; গথ, জু – অৎসুইশি, পয়েন্টস অ্যান্ড লাইনস – সেইচো মাতসুমেসো ইত্যাদি।
রিভেঞ্জ মুলতঃ আমাদের চিরায়ত ধারণার রিভেঞ্জ নয়। আমরা সবসময় এলিজাবেথিয়ান পিরিয়ডের ট্রাজেডিতে রিভেঞ্জ আর লাভ এর মধ্যে যে সংঘাত তা দেখে রিভেঞ্জ অর্থ বুঝেছি সে জায়গাতে ইয়োগো ওগাওয়া আমাদের কষ্ট আর হারানোর আদলে নতুন রূপে হাজির করেছে রিভেঞ্জকে। বিস্বাদের এই যাত্রা অব্যাহত থাকুক।
রেটিং-৪/৫
Views: 73