মহান ধর্ম ইসলামে সন্তানের জীবনে একজন বাবার ভূমিকা শুধু তাঁর বস্তুগত চাহিদা বা ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করা নয়| সন্তানের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনে বাবার ভূমিকা অপরিসীম| মানব তথা এ মহাবিশ্বের স্রস্টা পবিত্র কোরআনে বলেন-
” হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে নরকের ভয়াবহ অগ্নি হতে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতা সম্প্রদায়, আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে ব্যাপারে কস্মিনকালেও তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়।” (সূরা আত তাহরীম, অধ্যায় ৬৬ ; আয়াত ৬)|
আর মানবের জন্য প্রেরিত আল্লাহর শেষ বার্তাবাহক মহানবী মুহাম্মদ (সঃ) এ প্রসংগে বলেন, একজন মাতা অথবা পিতা উভয়ই তাঁর সন্তানকে যে শ্রেষ্ঠ উপহার টি দিতে পারে তা হচ্ছে সদাচরণ (manner) তিনি আর ও বলেন ” পিতামাতা হচ্ছে সন্তানের জন্য এক রাখাল সদৃশ | পিতা তাঁদের ভরণ পোষণের দায়িত্বে নিয়োজিত এক জন রাখাল, আর মা হচ্ছেন পুরো গৃহ-কে আগলে রাখায় নিয়োজিত থাকা একজন রাখালের ন্যায়||
সন্তানের জন্য পিতার মৌলিক কার্য সমূহ:
• তাঁর পরিবারকে পার্থিব ও আধ্যাত্বিক জ্ঞানার্জনে একনিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতিন
• তিনি সন্তানের যাবতীয় ভরণ পোষণের দায়িত্ব পালন করবেন এবং সন্তানদের ন্যায় ও সৎ পথে পরিচালিত করতে নিজেই হবেন এক আদর্শ উদাহরণ|
• তিনি নিজে আল্লাহর নির্দেশিত নির্ভুল গ্রন্থ হতে সত্য ও বিশুদ্ধ জ্ঞানার্জন করবেন (spiritual and worldly) এবং আমৃত্যু সন্তানকে আল্লাহ এবং তাঁর প্রেরিত শেষ বার্তাবহকের জীবন অনুসরণে উৎসাহ প্রদান করবেন|
• সন্তানদের কে পারস্পরিক মূল্যবোধ এবং সমস্ত সৃষ্টির প্রতি দয়ালু হতে শিক্ষা প্রদান করবেন|
• একজন সদ্য বেড়ে ওঠা শিশু তাঁর পিতা মাতার কথা যতটুকু না অনুসরণ করে, দেখে শেখে তাঁর কয়েক গুণ বেশি| তাই উভয়েরই নিজেদের আচরণে অত্যন্ত সতর্ক হতে হতে হবে|
এ প্রসংগে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা (প্রেসিডেন্ট)হজরত (জনাব) উমর ফারুক রাঃ (আল্লাহ তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন) এর সময়কার একটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে:
এক পিতা উমর ফারুক (রাঃ) এর কাছে তার সন্তানের (ছেলের) খারাপ ব্যবহারের বিষয়ে অভিযোগ করতে এসেছিলেন| কারণগুলি অনুসন্ধান করার পর উমর (প্রেসিডেন্ট)জানতে পেরেছিলেন যে একজন পিতা হিসাবে, লোকটি কখনও তার পুত্রকে কোনও ধর্মীয় বা নৈতিক মূল্যবোধ শেখায়নি: উমর বলেছিলেন, “আপনি চলে যান, আপনার ছেলের দুর্ব্যবহার সম্পর্কে অভিযোগ করার অধিকার আপনার নেই!” প্রেসিডেন্ট (উমর ফারুক) বলতে চেয়েছিলেন, যেহেতু একজন পিতা হিসাবে লোকটি তার ছেলের প্রতি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছিল, তাই তার ছেলের কাছ থেকে এর চেয়ে ভাল কিছু আশা সে করতে পারে না|
সুতরাং পিতা তাঁর সন্তানের ভরণ পোষণ সহ তাঁদের সুশিক্ষা,নৈতিক মূল্যবোধ, সততা ও নিষ্ঠা অর্জনে সর্বদা নিয়োজিত থাকবেন| অন্যথায় সন্তানের পাপকার্যে পিতা-কে স্রষ্টার নিকট জবাবদিহি করতে হবে| আর সন্তানের ভালো কর্মের বদৌলতে পিতা মাতা উভয়েই আল্লাহর আশীবার্দপুষ্ট হবেন সন্দেহ নাই।
Views: 338