মেয়েটি আকাশ হতে চেয়েছিল…
পেঁজা তুলো মেঘের মতো সব স্বপ্নরা তার
সেথা সাজানো ছিল থরে থর,
আকাশে ফানুস ওড়ানোর লোভ দেখিয়ে
মেয়েটিকে ডেকেছিল, নিয়নের আলো ঘেরা
সর্বনাশা এক রঙিন শহর
আকাশ হতে চাওয়া মেয়েটা
হয়ে যায় আফসোসের এক নষ্ট প্রহর!
প্রাসাদ কিংবা অট্টালিকা চায়নি কভু
চেয়েছিল বাঁশের বেড়া পাতার ছাউনির ছোট্ট একটা ঘর
থাকবে তাতে বিশ্বাসের এক স্বচ্ছ দেয়াল
ঘোর আঁধারেও দেখা যাবে
খুব গহীনের সবটুকু মনের ভেতর।
চায়নি কভু রঙিন কাচের ঝলমল ঝাড়বাতি…
চেয়েছিল, প্রেমের আলোয়
কুঁড়েঘর তার হবে অমরাবতী।
চেয়েছিল, ভাঙা বেড়ার ফাঁক গলে
আসবে ঘরে নিম জোছনার আলো…
চেয়েছিল, একটা পুরুষ
পৃথিবী ভুলে পরাণ মেলে
শুধু তাকেই বাসবে ভালো।
চেয়েছিল, আঁচল খুলে আঙুলের খুনসুটিতে
প্রেমের মাদল বাজাবে তার সোহাগি পুরুষ…
চেয়েছিল, মন যমুনার উথাল পাথাল প্রেমের স্রোতে
মাঝি তার; বার বার চোখের তারায় হারাবে হুশ।
রাজপুত্র চায়নি কভু
চেয়েছিল, কোমর বিছার লাজুক ছোঁয়ার একটা আপন বর…
আদর সোহাগে যতন করে রাখবে তারে
যেমন থাকে ভালোবাসার ছোট্ট পাখি
খুব গহীনে বুকের ভেতর।
চায়নি কভু রূপার নূপুর, সোনার নোলক
চেয়েছিল একটা পুরুষ শুধু তারই হোক।
একদিন, আঁধার ঘনালে ‘পরে
শহর জুড়ে উঠে সর্বনাশী ঝড়…
লোলুপ হায়েনার কামনার রোষে পোড়ে মেয়েটির ভাঙা বেড়ার ছোট্ট বস্তি ঘর,
পুরুষটিরও তার নিত্য অভাব
ভাংয়ের নেশায় নষ্ট স্বভাব
সেও এখন এক সস্তা নটির বর
আঁকড়ে বাঁচার মানুষটা আজ হয়ে গেছে পর।
কষ্টগুলো তার কান্না হয়ে গলায় পরায় মালা,
এই শহরে কেউ নেই মেয়েটির মেটায় নাওলার জ্বালা।
পূজা পেয়ে দেবালয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমায় পূজিত রাম,
জঠর জ্বালায় আলো আঁধারির রাজপথে মেয়েটির
বদলে যায় পিতৃপ্রদত্ত নাম!
অতঃপর একটা চুরি হওয়া আকাশ…
ছেঁড়া ময়লা টাকার মতো হাত বদল হতে হতে বিবর্ণ।
অপেক্ষার প্রহর গুনে গুনে
শীতল হলদেটে বুড়ি হয় জুঁই ফুলের মতো সাদা ভাত,
লোভের শিথানে মাথা নত করে ঘুমায় লজ্জিত বসুধা
স্বপ্নের হাটে বিকি কিনি হয় খেয়ালী যৌবন
নতুন ভোরের প্রথম আলোয় জীবনের পসরা সাজায় নিকষ কালো রাত।
আমরা শহরের পাংশুটে মুখেরা, রাত্রিতে মিডিয়ায় দিন বদলের বুলি আওড়াই,
দিনের আলো ফুটতেই নির্দ্বিধায় ভুলে যাই…
আকাশ হতে চাওয়া মেয়েটি আফসোস হয়ে যায় বার বার,
তবুও, আঁধার ঘেরা আলোর শহর জুড়ে;
কাল কেউটের ফনায় দ্যুতি ছড়ায়
এই সমাজের মিথ্যে অহংকার!
Views: 101