দেশের বেসামরিক মেধাবীদের সবচে বড় চাকুরিদাতা পিএসসি । হাতেগোনা কিছু টেকনিক্যাল পদ ছাড়া, পিএসসি’র সব চাকুরির পরীক্ষাতেই প্রায় সব বিষয়ের স্নাতক/ স্নাতকোত্তররা বসতে পারেন( পালি- ফারসি থেকে ডাক্তার- ইন্জিনিয়ার) । পিএসসি’তে ফেলমারা(প্রায় ৮০ ভাগ) মেধাবীরা পরে সরকারি/বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখেন।
সত্যি কথা বলতে কী, দেশের শিক্ষিত মেধাবীদের সবচে বড় চাকুরিদাতা প্রতিষ্ঠান ব্যাংকিং সেক্টর। যে কোন বিষয়ে স্নাতক হয়েই এখানে জায়গা পাওয়া যায়।
তো কিভাবে তারা দক্ষ হয়ে ওঠেন ?
যোগদানের পরই দু/তিন দিনের একটি ওরিয়েন্টেশন। তারপর শাখাতে ক’মাস নাক ডুবিয়ে কাজ। এরমধ্যে ডাকপড়ে সাত সপ্তাহের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের। আবাসিক এ প্রশিক্ষণে দিন রাত এক। সবাই সবার সাবজেক্ট ভুলে ডেবিট/ক্রেডিটের জালে, শেষে একাডেমিক পরীক্ষা। এই শুরু, তারপর বছরে অন্তত দু’বার নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং মূল্যায়ন। পাঁচ বছরে একজন ব্যাংকারের একাডেমিক প্রশিক্ষণের যত সনদপত্র জমে তার ওজন নেহায়েৎ কম নয়। কিন্তু এই প্রশিক্ষণ আর তার তাড়াতাড়া সনদের কোনই দাম নেই ব্যাংকিং ডিপ্লোমার সনদের কাছে। হোক না সে বিআইবিএম।
এবার অন্যদিকে একটু তাকাই। দেশের সেরারা কী করেন? ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়াররা তাদের রাস্তায় বার বার একাডেমিক প্রশিক্ষণ নেন। বিসিএস ক্যাডাররা পিএটিসিতে চার মাসের একাডেমিক প্রশিক্ষণ এবং বার বার একাডেমিক প্রশিক্ষণ। শিক্ষকরা কী করেন? তারাও বার বার একাডেমিক প্রশিক্ষণ।
খোদ বাংলাদেশ ব্যাংক? তাদের প্রমোশনের রাস্তা এত মসৃণ যে, শোনা যায় একজন মূদ্রাপরীক্ষক যতদিনে এজিএম হয়, ডিপ্লোমার ফাঁদে পড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকের অফিসার ততদিনে হতে পারে না।
এসব সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা যাদের, তাঁদের কাছে করজোড়ে অনুরোধ, ডিপ্লোমা রাখুন।
কিন্তু একটু ভেবে দেখুন– সাহিত্য পড়া, ইতিহাস পড়া, পালি-সংস্কৃত পড়া, সামাজিক অনুষদে পড়া, বিজ্ঞান অনুষদে পড়া একজন ব্যাংকারের পক্ষে ননএকাডেমিক ভাবে এত কঠিন ডিপ্লোমা পাশের প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ কোথায়? তাই হয়তো অনেকটা বাধ্য হয়েই এই মেধাবীরা নানা অনৈতিকতার আশ্রয় নেন। আর এদের নিয়ে নানা ধরনের বাণিজ্য করে বিশাল প্রতারকচক্র। যা কান খাড়া করলেই কানে আসে।
বছরের পর বছর ধরে, পরীক্ষা দিয়ে পাশ করার সুযোগ থাকায় এ শিক্ষার তেমন কোন প্রভাব থাকে না। আবার বয়স্ক ব্যাংকাররা নানা সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হন। তাই অনুরোধ, এই ডিপ্লোমাকে একাডেমিক করুন অথবা সহজ করে দিন। যেন স্বাভাবিক ব্যাংকিং করা লোকজন সহজেই পাশ করতে পারেন।
আমার চেনা একজন খুবই দক্ষ ব্যাংকার, দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাথে প্রথম শ্রেণী পাওয়া, পঁচিশ বার পরীক্ষা দিয়েছেন। হিসাব বিজ্ঞানের প্রশ্নের উত্তর কলেজ শিক্ষকরাও করতে পারেন না।
একজন দক্ষ ব্যাংকার হন প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা, কর্মদক্ষতা, আনুগত্য আর নিষ্ঠায়। ডিপ্লোমার ভূমিকা তেমন একটা চোখে পড়ে না। নিজেও দু/একবার পরীক্ষা দিয়েছি। যে বিষয়ে ভালো পরীক্ষা দিলাম সেটায় ফেল আর যেটা পাশের জনের দেখে অর্ধেক লিখলাম সেটায় পাশ।
আমার মনে হয় এসব নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখার সুযোগ আছে। তাই স্যারদের আবার অনুরোধ, একটু ভাবুন।
লেখক- কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক
Views: 183