তুই!
আমার নিজস্ব নদীটা খুব বেশী শান্ত রে। আমি প্রতিদিন নদীটার তীরে বসি লোকচক্ষুর অন্তরালে। নদীটাকে লুকিয়ে রাখি। কত কথা হয়। পাড় ভাঙে, পাড় গড়ে। নদীটা আমারই থাকে।
কখনো খুব মন খারাপ হলে একটা ঢিল ছুঁড়ে দেই। জলের কাঁপন দেখি। তির তির কাঁপে জল, আমার নদী টলমল।
আজ আম্ফানের তাণ্ডবের সময় নদীটাও খুব অশান্ত হয়ে উঠেছে। বারান্দার গাছগুলোর সাথে বৃষ্টির সখ্যতা দেখেছি আজ। নদীটাকে আগলে রাখতে চেয়েছিলাম আমি। পারিনি রে… আমি আসলেই কিছু পারি না। যারা পারে, তারা পারে…. আমি হয়তো তাদের দলের নই।
ইলেকট্রিসিটি চলে গেলো। ঝড়োমেঘ আর বাতাস…. আমার সাথে নদীটাও চঞ্চল হয় মনে মনে। কেউ কি নাড়া দেয় এমন একাকী ক্ষণে?
বেশ তো আছি, ভালো’র মত আছি। দ্বিধা আর জড়তা নিয়ে নদীটার মত শান্তই তো আছি।
এমন তান্ডবে কেন যে অশান্ত করিস?
একাকী হবার সময় এটা। একা একা তো কেটেই গেলো জীবন বৈরাগ্যে! বৈরাগ্য আমার! নিজের সাথে অভিমান আমার!
আজ আমি নদীটাকে তোর গল্প বলেছি। অশান্ত নদীটা পোষ মানাতে মানাতে আজকাল বড় ক্লান্তি ভর করে।
এমনও তো হয় উত্তর পঞ্চাশ বন্ধু খোঁজে! উত্তর পঞ্চাশ ক্ষয়ে যেতে যেতে ক্ষত ঢাকে!
ক্ষয় আর ক্ষত…. ঢাকে কি কখনো? দগদগে স্মৃতির মত পোড়ায় অহর্নিশ। আমার নদীটার তীরে সোঁদা ঘ্রাণের মাটি। কখনো রোদে পুড়ে কাঠফাটা,কখনো জলের ছবি আঁকে।
ক্ষয়িষ্ণু মনের জানালায় মাকড়শা জাল বোনে। বড় পলকা ঘর ওদের। মানুষের ঘরের চেয়েও পলকা বুঝি?
মানুষের ঘর আছে,তবুও ঘর থাকে না। বিভ্রম আর বিভ্রান্তি নিয়ে কেটে যায় এক জীবন।
নদীটাকে শান্ত করি এখন। বড় বেশী অশান্ত হয়েছে আজ!
তুই কি তবে সেই ছোট্ট ঢিল?
—-আমি
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও চিকিৎসক।
Views: 132