ঊনিশশো একাত্তর সনের বৃষ্টিঝড়া একদিনে বরিশালে আমাদের গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে এলো সমবয়সী ফুফাতো ভাই মোর্শেদ আলম। আমি তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। স্বাধীনতা যুদ্ধের কারনে স্কুল বন্ধ। নদীর ওপাড়ে মিরেরহাট বাজার সংলগ্ন বিশাল চরে মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ দেখে বনেবাদাড়ে ঘুরে ফলপাকড় পেড়ে খেয়ে দিন কেটে যায়। এর মাঝে আব্বা একদিন বাজার থেকে পানি তালের কাদি আনলেন। আমার আবার এটা খুব পছন্দ। একসাথে গোটা তিনেক খেয়ে ফেলায় মোর্শেদ আলম বললো, তুই পানিতাল খেতে পছন্দ করিস? আমাদের বাড়িতে এখন তিনটি গাছ বোঝাই পানি তাল। চল তাহলে কয়দিন বেড়িয়ে মনমতো তাল খেয়ে আসবি।
ওর কথায় মন নেচে উঠলো। আব্বার কাছে যাওয়ার অনুমতি চাইলাম। তিনি সম্মতি দিলেও আম্মা বাধ সাধলেন। ঊনিশ মাইল পথ কিভাবে যাবো। পাক বাহিনীর ভয়ে নিয়মিত যানবাহন চলেনা বললেই হয়। তাছাড়া বাবুগঞ্জের পথে দোয়ারিকা ফেরীঘাট ও রহমতপুরে আর্মির ঘাটি। ঐ পথে নাকি জীপে করে টহল দেয়ার সময় যুবক ছেলেদের দেখলে মুক্তিবাহিনী সন্দেহে ধরে নিয়ে যায়।
আম্মার সামনে কথা বলার সাহস নেই। কিন্তু মোর্শেদ আলম বললো, মামী, খুব সকালে দুই ভাই হাঁটা শুরু করলে বিকেলের মধ্যে বাড়ি পৌঁছে যাবো। আমি পথঘাট চিনি। পাকা রাস্তা এড়িয়ে চললে আর্মির সামনে পড়ার ভয় নাই। শহীদ গেলে মা খুব খুশি হবে। আপনি রাজি হয়ে যান।
প্রিয় ননদের কথা মনে পড়তে আম্মা নিমরাজি হয়ে অনেক পরামর্শ দিয়ে পরদিন খুব ভোরে গরম ভাত খাইয়ে নদীর পাড় পর্যন্ত আমাদের এগিয়ে দিলেন। আব্বা পথখরচ বাবদ চারখানা আধুলি অর্থাৎ দুই টাকা সঙ্গে দিলেন।
বেলা ওঠার পরপর রওয়ানা দেয়ার ফলে আমরা এক হাটায় উজিরপুর থানা সদর সোজা নদীর ওপার পৌঁছে খেয়াঘাটের কাছে এক দোকান থেকে দুই আনার নাবিস্কো বিস্কুট এবং দুই আনায় এক হালি সবরিকলা কিনে দোকানের সামনের বেঞ্চে বসে খেয়ে নিলাম। পাশেই টিপকল (টিউবওয়েল)। একভাই কল চাপি, আরেকভাই কলের মুখে হাত চেপে একটুখানি ফাঁক রেখে সেখানে মুখ দিয়ে পেট ভরে পানি পান করে এবার রহমতপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। হেঁটে যতটুকু ক্লান্ত হয়েছিলাম কলা বিস্কুট খেয়ে আবার সতেজ হওয়ায় মোর্শেদ আলম বললো, বাড়ি যাওয়া পর্যন্ত আর কিছু না খেলেও হবে।
দুই কিশোর এরপর একনাগাড়ে হেঁটে রহমতপুর ব্রীজের উত্তরপাশে পৌঁছে চারিদিকে তাকিয়ে কোনো পাক সেনা বা তাদের টহল যান দেখা যায় কি-না লক্ষ্য করে নিশ্চিন্ত হয়ে পাকা রাস্তা পাড় হয়ে ওপাশে বাবুগঞ্জ যাওয়ার কাঁচা রাস্তায় যাওয়ার পথ ধরেছি এমন সময় মোর্শেদ আলম আচমকা আমার হাত ধরে টান দিয়ে পিছনে দৌড়ে একটা মোটা রেন্ট্রিগাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়লো। হতভম্ব আমি ওর দেখাদেখি তাই করে চোখে চোখ চেয়ে নীরবে প্রশ্ন করলাম, ঘটনা কি?
ঠোঁটে আঙুল রেখে নীরব থাকতে ইশারা করে এবার আঙুল দিয়ে রাস্তার দিকে দেখালো।
সেদিকে তাকিয়ে আমার আত্মা খাঁচা থেকে বের হওয়ার উপক্রম। এই প্রথম এতো কাছ থেকে পাকিস্তানি সেনা দেখে ভয়ে থরথর করে কাঁপছি তখন।
ওদের জীপগাড়ি আমাদের অতিক্রম করে গিয়েই আবার ব্রেক কষে থেমে যেতে ক’জন পাকসেনা অস্ত্র উঁচিয়ে লাফ দিয়ে নামলো। এতক্ষণে ভয় কাকে বলে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। হৃদপিণ্ড ধড়াস ধড়াস করে কাঁপছে। সেই শব্দ মনে হয় ওদের কান পর্যন্ত পৌঁছে যাবে এমন অবস্থা। আমরা দু’জন মোটা গাছটির গুড়ির আড়ালে চুপসে লেপ্টে রয়েছি। মাঝেমাঝে ওদিকে গাছের পাশ দিয়ে তাকাই। ওরা কজন ব্রীজের গোড়ায় নেমে নীচ এবং আশপাশ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে আবার গাড়ীতে উঠে বরিশাল শহরের দিকে চলে গেলো।
এতক্ষণে যেন ধরে প্রান ফিরে এলো। ওরা আমাদের দেখে নেমেছে এ ধারনা ছিলো ভুল। তখন বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযোদ্ধারা ব্রীজ উড়িয়ে দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতি সাধন শুরু করে দিয়েছে। সেজন্য রুটিন কাজের অংশ হিসেবে ব্রীজের গোড়ায় ওরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করতে নেমেছিলো।
আমরা যখন হাঁপ ছেড়ে বেঁচে রাস্তা পার হতে যাবো সেই সময় পিছন থেকে কে যেন কাঁধে হাত রাখলো। মুহূর্তে আতঙ্কে জমে গেলাম। তাহলে কি পাকসেনাদের কেউ ঘুরপথে এসে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে আমাদের ধরে ফেললো?
আতঙ্ক নিয়ে একসময় পিছনে তাকিয়ে দেখি বয়স্ক একজন মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করছেন, “তোমরা কোথায় যাবে? এভাবে আর্মি দেখে দৌড়ে পালালে ওরা সন্দেহের বশে ব্রাশফায়ার শুরু করে। এতক্ষণে তোমাদের লাশ পড়ে থাকার কথা। ভাগ্যিস হারামজাদাদের চোখে পড়ো নি। ওভাবে না দৌড়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলে সাধারণত সন্দেহ করে না। তাছাড়া তোমরা বাচ্চা ছেলে।”
আমি বললাম, আপনি ঠিকই বলেছেন। কিন্তু তখন ও ভয় পেয়ে যা করেছে আমিও না বুঝে তা-ই করেছি। আমরা বাবুগঞ্জ যাবো। আপনি একটু রাস্তা পার হতে আমাদের সাহায্য করবেন?
“আমিও তো বাবুগঞ্জ যাবো। চলো একসাথে যাই। আগে আমি ওপারে গিয়ে ইশারা দিলে তোমরা দ্রুত রাস্তা পার হয়ে ওপাশের ঢালু রাস্তায় নেমে পড়বে। এখান দিয়ে প্রায়ই আর্মির টহলযান আসাযাওয়া করে।”
এরপর আর কোনো অসুবিধা হয় নি। ঐ লোকের সাথে হেঁটে হেঁটে বিকেল পাঁচটা নাগাদ আমরা বাবুগঞ্জ থানা সদরে পৌঁছে গেলাম। মোর্শেদ বললো, ওখান থেকে ওদের বাড়ি মীরগঞ্জ বাজারের পথে আরও দুমাইল হাঁটতে হবে।
কিন্তু আমার পক্ষে তখন আর হাঁটা সম্ভব না। উজিরপুরের এপাড়ে কলা বিস্কুট খাওয়ার পর দু’বার টিউবওয়েলের পানি ছাড়া পেটে আর কিছু পড়ে নি। ওকে বললাম, কিছু না খেয়ে এবং না জিড়িয়ে আমি আর এক পা-ও হাঁটতে পারবো না।
ওর অবস্থাও আমার মতো। একটা চায়ের দোকান খুঁজে চারখানা লাঠি বিস্কুট (আমরা বলতাম “খাস্তা”। এটা এখনকার টোস্ট বিস্কুট এর মতো স্বাদের। তবে লম্বা লাঠির মতো দেখতে হওয়ায় লাঠি বিস্কুট বলতো অনেকেই) আর দুই গ্লাস চা নিয়ে ( তখন কাপের পরিবর্তে ছোট ছোট গ্লাসে চা পরিবেশন করতো) চায়ে ভিজিয়ে মচমচে খাস্তা খেয়ে মনে হলো পৃথিবীতে এর চেয়ে সেরা খাবার বুঝি কিছু নেই। খাওয়া শেষে ছয় আনা বিল দিতে গিয়ে দেখি চায়ের জন্য ডেকসি বোঝাই দুধ কমে এখন হলুদ বর্ন হয়ে গেছে। তার পাশে একটা সিলভারের বাটিতে দুধের হলুদ সর। দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলাম ওটা দিয়ে কি করে।
জবাবে বললেন, চিনি মিশিয়ে মালাই হিসেবে বিক্রি করি। এক গ্লাস চার আনা।
ঐ সময় চার আনায় দুই সের গরুর দুধ কিনতে পাওয়া যায়। এক হালি হাঁসের ডিম দুই আনা। দুই হালি মুরগির ডিম তিন আনা বা দশমিক বারো পয়সা। চার আনার অনেক দাম। তারপরও লোভ সম্বরণ করা সম্ভব হলোনা। এককাপ মালাই নিয়ে দুই ভাই ভাগ করে খেয়ে মহানন্দে মীরগঞ্জের পথে হাঁটা শুরু করলাম।
অবশেষে সন্ধ্যা নাগাদ ফুফু বাড়িতে পৌঁছানোর পর হঠাৎ করে প্রিয় ভাতিজাকে সামনে পেয়ে ফুফু বিস্ময় মাখানো আনন্দে আপ্লূত। তখনকার সময়ে জানিয়ে আসার তো কোনো উপায় ছিলো না। আত্মীয়স্বজন বা পরিচিত মহলে তুখোড় মেধাবী এবং ভদ্র বিনয়ী হিসেবে আমার পরিচিত ছড়িয়ে পড়েছে। সেরকম ভাতিজাকে কাছে পেয়ে ফুফুর আনন্দ দেখে কে! সন্ধ্যার পরপর খেয়েদেয়ে বালিশে মাথা দিতেই ঘুমে একেবারে কাদা। ১৩ বছরের ছেলে কিভাবে বিশ মাইলের কাছাকাছি পথ পায়ে হেঁটে এলাম আজও ভাবতে অবাক লাগে। সেই ক্লান্তিতে ঘুম হলো খুব ভালো। পরদিন সকালে গাছ থেকে তালের কাদি নামানোর প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু বিশাল লম্বা গাছ দেখে আমার মাথায় ঢুকলো না কিভাবে অতো মোটা এবং লম্বা গাছ থেকে তাল নামানো হবে।
বাঁশঝাড় থেকে সবচেয়ে লম্বা দেখে বাঁশ কেটে পা রাখার মতো কঞ্চি বাঁশের সঙ্গে যুক্ত রেখে সেই বাঁশ শক্ত রশি দিয়ে তাল গাছের সাথে বাঁধা হলো। একজন অভিজ্ঞ কর্মচারী লম্বা রশি ও কাস্তে সহ ঐ বাঁশ মইয়ের মতো বেয়ে গাছের মাথায় উঠে তালের কাদি গোড়া থেকে কেটে রশি দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে একের পর এক নামিয়ে দিচ্ছে। একসময় উঠোন ভরে গেলো তালের কাদিতে। এখান থেকে কিছু বিক্রি করে দেয়া হবে। আর আমি তো কিছুক্ষণ পর পর এসে তালের শাস খেতে থাকি। একসময় পেট ব্যাথা শুরু হলো। ফুফু বললেন, আস্তে ধীরে দু’একটা করে খাবি। তাহলে আর পেট ব্যাথা করবে না। তোকে সহজে তো যেতে দিচ্ছি না। এগুলো শেষ হলে আরেক গাছ থেকে তাল নামিয়ে দেবো। দেখি তুই কতো খেতে পারিস।
চার পাঁচ দিন পর আর তাল খেতে ভালো লাগছে না। আশপাশের সবকিছু ঘুরেফিরে দেখে এখন বাড়ীর জন্য মন কেমন করছে। ওদিকে ফুফু যেতে দিবেন না। স্কুল বন্ধ, এখন বাড়িতে যাওয়ার দরকার কিসের?
কিন্তু মায়ের জন্য মন কেমন করে। সপ্তাহখানেক পরে ফুফু আমার মনের অবস্থা বুঝে পরদিন খুব ভোরে যাওয়ার সম্মতি দিলেন। মোর্শেদ আলম আমাকে বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে আসার কথা বললো। কিন্তু আমি আপত্তি জানিয়ে বললাম, রহমতপুর পাকা রাস্তা পার করে ওপাশে দিয়ে এলে পথে আর কোথাও পাক সেনার ভয় নেই। তারপর আমি একাই যেতে পারবো। দরকারবোধে উজিরপুরে আমার মেজোবোনের বাড়ি দু’দিন থেকে যাবো।
পরদিন আমার যাওয়া উপলক্ষে ফুফু পিঠা তৈরি করতে বসলেন। রাতে ডিমপাড়া মুরগির মাংস দিয়ে পোলাও হবে। মোর্শেদ আলমকে একটা কাঁচা টাকা (রুপোর তৈরি এক তোলা ওজনের মুদ্রা) দিয়ে ফুফু বললেন মীরগঞ্জ বাজারে গিয়ে একটা বড়ো দেখে ইলিশ মাছ ও এক বোতল কেরসিন তেল নিয়ে আসতে।
দুপুরে খেয়েদেয়ে দুই ভাই মাইলখানেক হেঁটে আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরে মীরগঞ্জ বাজারে গিয়ে শুনলাম ঘন্টাখানেক পর জোয়ার শেষ হলে ইলিশের জাল তোলা হবে। তখন ইলিশ আসবে ঝাঁকা ভর্তি করে। কেরোসিন তেলের বোতল একটা দোকানে রেখে আমরা গানের মজমা দেখতে বসে গেলাম। এক লোক গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে তা বাজিয়ে জনপ্রিয় গান শোনাচ্ছে একের পর এক। লোকজন বেশি জড়ো হওয়ার পর তাবিজ বিক্রি করা শুরু হলো। তার স্বপ্নে পাওয়া তাবিজের গুন বর্ননা শুরু হতেই আমরা ওখান থেকে এসে মুড়ির মোয়া কিনে খেলাম। এগুলো এখনকার গোল আকৃতির মোয়া নয়। বাঁশের শলা দিয়ে তৈরি সাঁজিতে টিলার মতো উঁচু এক অর্ধবৃত্ত আকারের মোয়ার বিরাট খন্ড। ধারালো বাটালি দিয়ে কেটে কলাপাতায় করে দুআনা চার আনায় বিক্রি করে। আমরা দু আনার মোয়া কিনে ভাগ করে খেয়ে আরেক জায়গায় দেখলাম থালায় করে গুড়ের চিট বিক্রি করছে। গুড় জাল দিয়ে ঘন আঠার মতো করে থালায় ঢেলে রাখলে একসময় লোহার মতো শক্ত হয়ে যায়। কেটে কেটে টুকরা করে বিক্রি করে এগুলো। ওটাও দুই আনার কিনে চিবুতে লাগলাম। এক টাকার চার আনা খরচ হয়ে হাতে আছে বারো আনা। এক বোতল কেরোসিন দুই থেকে তিন আনা দাম হবে। বাকি পয়সায় মাছ কেনা যাবে? ফুফু বলে দিয়েছেন বড়ো একটা “ইলশা মাছ” নিয়ে যেতে।
আমার ভাবনা বুঝতে পেরে মোর্শেদ বললো, আমাদের এখানে ইলিশ সস্তা। এক টাকায় এক জোড়া বড়ো ইলিশ পাওয়া যায়। তুই চিন্তা করিস না।
কিছুক্ষণ পর মাছ আসা শুরু করলো। দাম আসলেই কম। ছোটগুলো চার আনা আর বড়োগুলো আট আনা করে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু মোর্শেদ আরও একটু অপেক্ষা করতে চাইলো।
হঠাৎ এক ঝুড়ি থেকে দুটি বড়ো ইলিশ বের করলো এক জেলে। একটা দেড় সেরের মতো ওজন হবে। আরেকটা আরও বড়ো। অনেক দামাদামির পর বড়োটা বারো আনা এবং দেড় সের ওজনেরটা দশ আনা দাম সাব্যস্ত হলো। আমাদের সাথে আছে মোট বারো আনা। ওদিকে কেরোসিন কিনতে কমপক্ষে দুই আনা লাগবে। বাধ্য হয়ে বড়োটা রেখে দশ আনায় মাঝারি বড়োটা হাতে নিয়ে আমরা বাড়ির পথ ধরলাম। মোর্শেদের মনে একটু আক্ষেপ হলো বড়ো মাছটা রেখে আসায়। আমাকে বললো, এটার চেয়ে বড়ো ইলিশ বাজারে উঠেছিলো মা-কে বলিস না। মা মনে দুঃখ পাবেন।
আমার মনে হয় বাড়ি থেকে আব্বার দেয়া একটাকা না কতো যেন তখনও অবশিষ্ট ছিলো। কিন্তু তা তো এসেই ফুফুর কাছে জমা দিয়েছি। ওটা সঙ্গে থাকলে কাজে লাগতো। আর এটাও তো বেশ বড়ো মাছ। দুঃখ করার কি আছে? আমি কিছু বলবোনা বলতে ও আশ্বস্ত হলো।
এখনও চোখে ভাসে আড়িয়াল খাঁ নদীর তীর ঘেঁষে হাতে ইলিশ ঝুলিয়ে দুই ভাই হেঁটে যাচ্ছি মায়ায় ঘেরা এক গৃহের পানে। যেখানে মায়ের মতো এক ফুফু নানা রকম পিঠা বানিয়ে অপেক্ষা করছেন ভাতিজাকে গরম গরম খাওয়াবেন বলে। যে পিঠার সাথে মিশে থাকবে শ্যামল বাংলার চিরায়ত মাতৃরূপা এক ফুফুর সবটুকু ভালবাসা।
আহা! সেই নিরুদ্বিগ্ন অনাবিল শান্তির দিনগুলো আবার যদি ফিরে পেতাম!
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও ডাক্তার।
Views: 79