মাছি মারা কেরানি প্রবাদটি শুনে আসছি ছোট থেকেই। এর ব্যাখ্যা যেটাই হোক উদ্দেশ্যটা হলো মাছিকে তুচ্ছ ভাবা। কিন্তু মাছি কি আসলেই তুচ্ছ?
আমরা কি জানি, মাছি সেকেন্ডে ছয়শত বার পাখা ঝাপটাতে পারে? এর দ্বারা সে পাঁচ ফুট উপরে উঠে যায়! তার অর্থ হলো, মাছি ঘন্টায় আঠারো হাজার ফুট পর্যন্ত উড়তে পারে।
আমরা ছোট বয়সে কতবার মাছি ধরতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি, ভাবুন তো একবার। যেদিক দিয়েই ধরতে যাই, ঐ ব্যাটা দেখতে পায় এবং উড়ে পালায়। আম্মা বা দাদী আম্মারা তখন বলতেন, মাছির চারিদিকে চোখ থাকে। আসলেই তাই। মাছির চোখের সংখ্যা পাঁচ। তবে সে চোখের পাশাপাশি অতিরিক্ত চার হাজার চোখ থাকে একেকটা মাছির। জীবাণু দেখার জন্য আমরা অনুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে থাকি, মাছিদের অনুবীক্ষণ যন্ত্র লাগেনা। তবে উড়ার সময়, তার দৃষ্টিশক্তি লোপ পায়। ফলে তারা মাকড়সার জালে আটকে যায়।
আরো একটা মজার ঘটনা হলো, মাছি কিন্তু প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বারবার দ্রুত পাখা ঝাপটিয়ে যে মৃদু বাতাস তৈরী করে, তাতে দূর্বল জীবাণু ধ্বংস হয়, অপেক্ষাকৃত শক্ত জীবাণুগুলো পায়ে পিষে ধ্বংস করে। মাছিদের মুখে ছুরির মত ধারালো দাঁত থাকে, তা দিয়েও সে জীবাণু হত্যা করে।
মাছিদের নাক আপনি সহজে খুঁজে পাবেন না। কারণ এদের পেটের নীচে দুটো ছিদ্র থাকে হালকা পশমে ঢাকা। সেটা দিয়ে নিঃশ্বাস নেয়। মাছির ঘ্রাণ শক্তি খুব প্রখর।
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, বিজ্ঞানীরা এখনো আবিষ্কার করতে পারেনি, এটা উল্টো দিকে কিভাবে উড়ে। তবে তারা দেখেছেন যে, প্রায় এক লক্ষের কাছাকাছি ধরনের মাছির অস্তিত্ব বিরাজমান।
যাহোক, একবার এক সাহাবী(রাঃ), মুহাম্মাদ(সাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ(সাঃ), আমার এক বাটি দুধের মধ্যে, একটি মাছি পড়েছে, আমি কি দুধটুকু ফেলে দিবো? তাকে নবী করীম (সাঃ) বললেন, মাছিটিকে দুধের মধ্যে পুরোপুরি ডুবিয়ে দাও। তারপর সেটা ফেলে দিয়ে দুধটুকু খেয়ে নাও।” সাহাবী (রাঃ) কোন প্রশ্ন না করে সে পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেন। আজকের বিজ্ঞান বলছে, মাছির দুটোর ডানার একটিতে থাকে বিষ আর অন্যটিতে থাকে বিষ নিরোধক।
ক্ষুদ্র এই মাছি আমরা সব সময়ই দেখি কিন্তু তার সৃষ্টি নিয়ে ভাবি কি কখনো? এবার মাছি দেখলে নিশ্চয়, জুয়েল ভাইয়ার পোস্টটির কথা মনে পড়বে, তাই না?
মাছির আলোচনা শেষ করবো। আল-কুরআনে অতি ক্ষুদ্র মশা-মাছি বিষয়ক বেশ কিছু আলোচনা আছে।
আল্লাহ তায়ালা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন,
“তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের পূজা কর, তারা কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবেনা; যদিও তারা সকলে একত্রিত হয়। আর যদি মাছি তাদের কাছে থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেয় তবে তা তাদের কাছে থেকে উদ্ধারও করতে পারবেনা।
—সূরা হজ্জ্ব। আয়াত ৭৩।
Views: 162