আব্দুল লতিফের কবিতাগুচ্ছ
সে আসে ধীরে
আব্দুল লতিফ
বহুদিন আমি কবিতা লিখিনা,
লিখতামও না কোনদিন
শুধু সাদা কাগজের ওপর
স্বরে অ স্বরে আ
তার পাশে কিছু আঁকিবুকি,
এলোমেলো কাটাকুটি
যার কোনই অর্থ নেই,
অর্থ হয় না।
এই অর্থহীন প্রলাপের পথ বেয়ে
কবিতারা ধরা দেয়নি কখনো।
তবু কদাচিৎ তারা জীবন্ত হয়ে
চলাফেরা করে
আমারই চোখের ওপর দিয়ে
দেখতে পাই, ছুঁতে পারিনে।
ভীরু প্রেম যেমন
স্পর্শমাত্র ঝরে পড়ে যায়,
তেমনি আমার লজ্জারাঙা কবিতারা
মুহূর্তেই ঝরে পড়ে,
আমারই চোখের সামনে।
আমার এই হতাশায় ভরা চোখদুটিতে
তাদের দেখতে পাই,
চলাফেরার শব্দ শুনি অহর্নিশ।
দুখের দিনের অশ্রুধারার মাঝে,
রূপালি জোছনারাতে,
প্রভাতবেলার অরুনকিরনে,
গোধুলির স্বপ্নমায়ায়,
আমার সমস্ত অনুভূতিজুড়ে
“সে আসে ধীরে, যায় লাজে ফিরে”।
◾
সাগরতীরে সূর্যাস্ত
আব্দুল লতিফ
এমন করে দেখা হবে কখনো ভাবিনি।
সাগরতীরের অস্তরাগে,
দিগন্তে ছড়ানো রঙিন আভায়।
তখন প্রশান্ত সাগরজলে আপ্লুত আনন্দধ্বনি,
তীরে এসে নিজেকে বিলিয়ে দেবার তৃপ্তিতে ভরপুর,
দক্ষিন সমীরে স্নিগ্ধ প্রশান্তি।
অকস্মাৎ তুমি এলে, সিক্তবসনা, সলাজচাহনি।
নিমেষেই জগতের সব রূপ-রস-গন্ধ ম্লান হয়ে যায়,
প্রস্ফুটিত যৌবন আর লজ্জারাঙা নম্র রূপের ঝলকানিতে।
অলখের ঝরে পড়া বিন্দু বিন্দু জল শুঁষে নিয়ে
সাগরের অসীম জলরাশি হিল্লোলিত হ’ল আনন্দধারায়।
অধরের প্রান্তে মৃদু স্মিতহাস্য,
নীলাম্বরী ঢেউয়ের আঁচলে তুমি অনন্যা,
স্নিগ্ধ আলোর বন্যায় অপরূপা,
তবু কেন লাজনম্র, নতনেত্র বাকহীন?
প্রকাশিত হও সগৌরবে,
অস্তগামী সূর্যের লালিমায়।
সমর্পিত হও উদ্বেলিত হও এই হৃদয়ে
পরম আস্থায়।
◾
মায়াবী সেই প্রজাপতিটা
আব্দুল লতিফ
আজ ভোর থেকে, আমি দিশাহারা।
রঙীন একটা প্রজাপতি আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে,
ওর চোখ ধাঁধানো রঙবেরঙের পাখা,
হাওয়ায় ভাসানো অবয়ব,
সবকিছুই কী অপরূপ!
কিছুতেই সে ধরা দেয় না।
ওকে ধরবো বলে
একটা সাদা কাগজের ফাঁদ পেতে বসে আছি,
ওর সব রঙ শুঁষে নিয়ে ছড়িয়ে দেব আমার ফাঁদে।
শৈল্পিক চিত্রিত আলপনায় ভরে উঠবে সাদা উঠোন,
সেই আশাতেই সময় যায় গড়িয়ে।
বড় নিঠুর প্রজাপতি, কিছুতেই দেয় না ধরা।
বাড়ছে বেলা,
অন্তবিহীন এই লুকোচুরির আর শেষ হয় না।
একটা ধুধু প্রান্তরে ছুটে চলি ওকে অনুসরন করে,
মাঠজুড়ে সবুজ ঘাসের গালিচা,
সর্ষেক্ষেতের হলুদ আভা ছড়িয়ে আছে,
সেই হলুদ ফুলেদের মাঝখান দিয়ে চলতে চলতে
সবুজ পাতায় ঘেরা একটা বিরাট গাছের ছায়ায় এসে পড়ি
এবং তারপর গলদঘর্ম হয়ে
শ্রান্তদেহে যেই গাছের শেষ ডালটা ধরে ফেলেছি,
অমনি সে উড়লো আকাশের নীলিমায়, মেঘেদের মাঝখানে।
আমিও গা ভাসাই খোলা আকাশের সীমানা ছাড়িয়ে
অনেক অনেক দূরে,
আর তখনি খেলা থামিয়ে প্রজাপতিটা বললে,
“আজ নয়, অন্য একদিন, অন্য কোন সময়”
আমার সাদা খাতার পাতা রয়ে যায় অমলিন
ধূধূ প্রান্তরটির মতো,
একেবারে আনকোরা।
◾
জলরঙ ক্যানভাস
আব্দুল লতিফ
বেওথার ক্যানভাসে,
নটমল্লারের মূর্ছনা
লক্ষ লক্ষ রক্তকরবীর পাশে
ধূসর ধবল ফেনা।
তিরতিরে গলাজলে
বিস্মৃতির কুয়শায় আচ্ছন্ন লুপ্তপ্রায়
শৈশব, কৈশোরেরা খেলা করে
অবিরাম।
বেওথার কাকচোখ অবয়বে
ফুটে ওঠে ছায়া অমলিন।
সময় গড়িয়ে চলে —-
অগনিত জোনাকীর পাখায় ভর করে
অঝোরে জ্যোৎস্না ঝরে।
অতিকায় হীরকখণ্ড
দুর্দম ঝাপটায়
খন্ড খন্ড লক্ষ কোটি হয়ে
গড়িয়ে যায় স্রোতের টানে
মোহনায়,
অমোঘ গন্তব্যে।
◾
তোমার কবিতা
আব্দুল লতিফ
ভোরের স্নিগ্ধ আলোর পথ বেয়ে আসা
তোমার পাঠানো কবিতা পেলুম,
আজকাল কবিতারাও কেমন পর হয়ে গেছে,
ঠিক তোমারি মতন।
একসময় আমার আকাশে তোমার ছায়া পড়লে,
কবিতা আসতো, ছন্দ আসতো
অঝোর ধারায় আষাঢ় মাসের বৃষ্টির মতো।
তারপর একসময় বৃষ্টিধারার পর
হাল্কা হতো মেঘেরা।
শ্বেত শুভ্র পবিত্র হয়ে
হাল্কা ডানা মেলে দিয়ে
আমার আনন্দ আকাশে ভেসে বেড়াতো।
সেদিনগুলো আজ শুধুই কল্পনা,
এখন কাজলকালো মেঘ থাকে
দূরের আকাশে, ধরা ছোঁযার বাইরে।
সে মেঘে শুধুই কান্না আছে, বৃষ্টি নেই,
বৃষ্টিশেষের আনন্দ নেই।
আমার নিজের মধ্যেও আর কোন কবিতা নেই।
নিঃশেষ হয়ে যাওয়া মনের অব্যক্ত বেদনা ব্যক্ত করতে
বৃষ্টিধারার সাথে মেশে শুধু লবনাক্ত ফোঁটা ফোঁটা জল।তাই আজ আর তোমার পাঠানো কবিতার জবাব
নীরবতা দিয়ে মুড়ে পাঠিয়ে দিলাম তোমার কাছে।
Views: 189
One Comment
Khobaib Hamdan
ভালো লাগলো কবিতাগুলো