“
বাসে জানালার সিটে বসে জীবনের স্বপ্ন রেখা নিয়ে ভাবছি এমন সময় একটা ডাক।
“দাদা বাদাম নেবেন”?
না রে ছোটু!ধন্যবাদ! নাম কি তোর?
দাদা! আমার নাম মুশিক। চিনতে পারছো না?
না! ভাই মনে আসছে না।
তা কি করে মনে আসবে? তুমি এতো বড় মানুষ। তারপর তোমার ব্যস্ততাময় জীবন। সময় কই। সময়ের অভাবে তোমার জীবনের ছোট ঘটনা আজকাল আর দাগ কাটেনা। তাই ভুলে গেছ আমার মত ছেলেকে। ভুলে যাওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
সেই যে মাসেক ছয় আগে তুমি আমায় রক্ত দিলে,দিলে নতুন একটা জীবন। সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করালে। এতো কিছুর পর তুমি ভুলে গেলে আমায়।
আমি তোমায় বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছি আবার রক্ত দান করেছি। ভাই তোমার সত্যি কিছু ভুল হচ্ছে। আমি নয়।
তুমি তো প্রদীপ রায়!
হ্যাঁ। তবে তুমি কি করে জানলে?
তুমি ভুলে গেছ আমি ভুলে যাইনি তোমায়।
কন্ডাক্টর – ওই! তোর গল্প থামা। নাম ব্যাটা। নয় তো নামিয়ে দেবো।
আরে কন্ডাক্টরদা উনি আমায় রক্ত দিয়েছিলেন। তারপর বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন। আজ ভুলে গেছেন।
কন্ডাক্টর- আরে দাদা এই সব কথা বলে বাদাম বিক্রি করে।
ছেলেটি বাস থেকে নেমে যাবার সময় আমার দিকে তাকিয়ে বললো “দাদা চিনতে পারলে না গো! আমি মুশিক।”
বাস চলছে আমার ভাবনার জগতে এখন শুধু মুশিক। কিন্তু কোন উত্তর পাচ্ছিনা।
বাস থেকে নেমে রোজকারের মত বাজারে গেছি। জিনিস কিনে দাম দিতে গিয়ে দেখি এক বড় বিপদ। আমার পকেটের মানিব্যাগটা নেই। কে নিলো কি ভাবে নিলো কিছুই বুঝতে পারছিনা। তবে কি ওই বাচ্চাটা?
একদিকে অতীত আরেক দিকে এই সমস্যা আমায় ছিঁড়ে খাচ্ছে। পাগল হয়ে যাবো। একবার ভাবছি আমি কবে কোন বাচ্চাকে রক্ত দিয়েছি আবার বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছি। সেটা স্মৃতি থেকে একদম মুছে গেল। কেন এটা মনে আসছে না?আবার ভাবছি বাচ্চাটা তবে কি পকেটমার?
বেশ অনেক রাত্রি। ঘুমটা ভেস্তে গেল। ঘড়িতে দেখলাম রাত্রি ২.৩০। এখনো মনে এলো না ছেলেটি কে? নিজেকে এতো বিচলিত আগে কখনো দেখিনি?ঘুমের চেষ্টা করলাম কিন্তু ঘুম কই?
পরের দিন কাগজ পড়তে গিয়ে আমি হতবাক! কাগজের হেডলাইন ছিল “মুশিক নামে একটি বালক পকেটমারের সাথে ধস্তাধস্তিতে নিজের জীবনের বলিদান। মুশিকের হাতে ছিল রক্তাক্ত অবস্থায় প্রদীপ রায় নামক একজনের পরিচয় পত্র।
Views: 26