“জগৎ জননী মা”
__নীল__
০৩.১০.২০২২
জগৎ জননী মা,
মার্জনা করো মোরে
বড়োই মনস্তাপে, নতশিরে আজ সমর্পণ করবো,
পৃথিবীর বীভৎস, বেদনাহত দৃশ্যপট,
নিপীড়িত, বর্জিত, বঞ্চিত অসহায় ধরিত্রী মাতার নিভৃতে ক্রন্দন ও করুণ আর্তনাদ-
তব করুণা কৃপার বেদীতলে !!
জগৎ জননী মা,
তোমার নিয়মতান্ত্রিক প্রকৃতি এখন বন্দী
অনিয়মের বৃত্তে,
ঋতু বৈচিত্র্যের পালা পরিবর্তন হয় আপন খেয়ালে,
দেবী নীলাদ্রির অকৃপণ কৃপণতায় তৃষ্ণার্ত বনবীথিকা,
মলিন, প্রাণহীন সবুজ পত্র পল্লব এক পশরা বৃষ্টি জলের প্রতীক্ষায়,
সূর্য দেবীর প্রখর তাপদহনে মৃত্তিকার বুক ফাটে
বিজনে তৃষাতুর তৃষ্ণায়,
আবার ক্ষণে ক্ষণে মেরুর জমাটবদ্ধ দুধেল তুষার
রাশি নিঃশব্দে অকারণে গলে সাগরে মিলছে,
সমুদ্রের তান্ডবে কাঁদে নদ-নদী,ভাসে মা মাটি দেশ,
শস্যদেবীর শাসনে শস্যহীন বিস্তৃত মাঠে চলে
বেদনার রোদন,
ফলে ক্ষুধা, দারিদ্রতার জয়মাল্য শোভা পায়
অসহায় দরিদ্র্যের গলে !!
জগৎ জননী মা,
তোমার চঞ্চল পৃথিবী নীরবেই সর্বদা ক্রন্দনরত-
এক বুভুক্ষু হাহাকারে,
এখানে এখন শীতের প্রভাতে সবুজ ঘাসের ওপর শিশির বিন্দু ও সোনালি সূর্য কিরণের মিষ্টি পরশ
আর কেউ দুপায়ে মাখে না,
দেখে না কেউ তিন প্রহরের বিলে পদ্মফুলের
মাথায় সাপ আর ভ্রমরের মাতাল নৃত্য !!
জারি, সারি, ভাটিয়ালি গানে সম্প্রীতির আহ্বান
কেউ করে না,
ফলে নীরব দীর্ঘশ্বাস নীরবেই হিল্লোলিত হয়
বসুমাতার ঘরে ঘরে !!
জগৎ জননী মা,
শোষকের করাল গ্রাসে জিম্মি তব প্রাণচঞ্চল পৃথিবী,
কালিমালিপ্ত ক্লেদে কদাকার তার নিষ্পাপ
সাদা শরীর,
অভাগী বসুন্ধরার মানব নয়ন সূচ সুতোয় সেলাই করেছে পথভ্রষ্ট নরপশু,
এ পুণ্যময় পৃথিবী বিভক্তিতে শাসন ভার দখল
করেছে একগুচ্ছ ফেরাউনের দল,
অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের গর্জনে মৃত্তিকার হৃদয়ে
থরথর কম্পন,
ধূসর মাটি দেহ অবয়ব পুড়ে হয় অঙ্গার,
বিষাক্ত বারুদের বিকৃত ছোবলে বিষময় বিশুদ্ধ সমীরণ,
ফলে জীব ও জীবনের নির্মল শ্বাস হয় রুদ্ধ ।।
জগৎ জননী মা,
তোমার ধরণীতে মানুষের সুদৃঢ় মানবতা ভীত
জল্লাদের রক্তচক্ষুর ভয়ে,
সংবিধান, মৌলিক অধিকার বন্দী আজ নিষিদ্ধ
যক্ষের আবদ্ধ লকারে, !!
জ্ঞানীগুণী, বুদ্ধিজীবীর বিবেক অনেক আগেই আত্মহত্যা করেছে বাক স্বাধীনতার অভাবে,
এখানে নির্লজ্জ রাষ্ট্রযন্ত্রের নগ্নতা দেখে
লজ্জায় ঘৃণায় বিবেক বানের মৃত বিবেক
বারবার আত্মহত্যা করে !!
জগৎ জননী মা,
তোমার নিষ্কলঙ্ক পৃথিবীতে উচ্চাভিলাষীরা
রাতের নির্জনে প্রমোদ তরীতে অবৈধ
আনন্দ উল্লাসে মাতে,
অন্যদিকে অনাহারে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া
শিশুর মরণ ভিক্ষা করে মরণের অপেক্ষা
করে ক্ষুধার্ত কদাকার দাঁড় কাক !!
ফলে বুভুক্ষু ধরিত্রীমাতা অভক্তির অঞ্জলি
নিবেদন করে তোমারই নিষ্পাপ পাদদেশে,
সৃষ্টির চাপা ক্ষোভ আজ তোমার সৃষ্টিকেই
নিদারুণ উপহাসে প্রশ্নবিদ্ধ করে !!
জগৎ জননী মা,
সৃষ্টির মেরুদন্ড কি খুলে রেখেছো যত্ন করে
সপ্ত আসমানে স্বর্গের অভঙ্গুর মোটা
দেওয়ালের আবদ্ধ কক্ষে ??
তুমি মহীয়সী,
তুমি কৃপাময়ী,
তুমি ক্ষমাশীলা,
তুমি সর্বংসহা,
তুমিই দুঃশাসকের শাসনকর্ত্রী জগৎ জননী মা !!
জেগে ওঠো মা, জেগে ওঠো,
তোমার সৃষ্টি কলুষযুক্ত করার লক্ষ্যে,
এই শস্য শ্যামলা অনন্যা রূপসী ধরিত্রী মাতা
ধ্বংসের আগেই,নরক পুরীতে পরিণত
হওয়ার পূর্বে
মাগো মানবতাকে জাগাও,
সৃষ্টির দেহে মেরুদন্ড পুনঃস্থাপন করো,
হৃদয়ের স্বচ্ছ আয়নায় পারদ লাগাও,
হৃদয়ের নয়নে দেখো হৃদয়ের বসু-মাতাকে,
তারপর তোমার করুণা ও কৃপাময়ী মায়ের আদরে
হাতের আশীর্বাদে আশীর্বাদে পরিপূর্ণ করে
তোমার সেবায় এই বসুমতীকে,
এই স্বাধীন সার্বভৌম সোনার বাংলাকে,
এই ভারত জননীকে সকলের বাসযোগ্য
করে তোলো !!
__নীল কবিতা__
Views: 23