একটি লাল গোলাপের প্রতীক্ষায়
____মোহাম্মদ ফারুক হোসেন
প্রতিটি ভোরের মতো জারা ঘুম থেকে উঠে। বাসার সামনে এক চিলতে ফাঁকা জায়গায় হাঁটা হাঁটি করার জন্য বের হবে। দরজাটা খুলতেই নিচেই চোখ গেল। একটা লাল রঙের গোলাপ পড়ে আছে দরজার সামনে। কে রাখলো সে মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো। কিন্তু কোন সমাধানই পেল না। তার কারও সাথে কোন বন্ধুত্বও নেই বা আজ তার জন্মদিনও না। তাহলে কে রাখলো ফুলটা। তার গায়ের রং এত সুন্দর না যে কোন ছেলে তাকে পছন্দ করবে আর ফুল দিবে। মনে মনে হাসলো জারা। ফুলটা হাতে নিয়ে তার নাকের সামনে ধরলো। খুব সুন্দর ঘ্রাণ। তাজা গোলাপ। কারও বাগান থেকে সদ্য তুলে আনা হয়েছে মনে হয়। ফুলটা হাতে নিয়ে জারা কিছুক্ষণ বাইরে হাঁটলো। তারপর ঘরে চলে আসলো। তার ফুলদানিতে ফুল রাখার কোন অভ্যাস নাই তারপরেও কেন জানি এই ফুলটা রাখতে ইচ্ছা করলো। সে একটা ফুলদানি নিয়ে সেটায় কিছু পানি ঢাললো তারপর গোলাপটা রাখলো। তার বাবা মা ফজর নামাজের পর একটু ঘুমায়। আর জারা তখন নিজ হাতে নাস্তা তৈরি করে। আর করোনার কারণে এমনিতেই ভার্সিটির ক্লাস বন্ধ। তার হাতে এখন অফুরন্ত সময়। বই পড়া আর সংসারের টুক টাক কাজে মাকে সাহায্য করা। আর জারা রাত দশটার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে। প্রতি রাতের মতো সে ঘুমিয়ে পড়লো। ভোর হতেই এক সুন্দর স্বপ্ন তাকে আচ্ছন্ন করে ফেললো। সে দেখতে পেলো তার দরজার সামনে একটি গোলাপ পড়ে আছে আর একটা ছেলে চলে যাচ্ছে। সে তাকে ডাকছে কিন্তু ছেলেটা শুনছে না। ধীরে ধীরে সে মিলিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ তাকে আর দেখতে পাওয়া গেল না। জারা চোখ মেলে বিছানায় বসে পড়লো। জানালার দিকে তাকিয়ে দেখে ভোরের আলো ফুটে উঠেছে। সে তাড়াতাড়ি উঠে নিজের রুম থেকে বের হয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার মূল দরজা খুললো। দরজা খুলেই দেখে আরেকটা গোলাপ পড়ে আছে। এভাবেই প্রতিদিন যাচ্ছে আর জারা একই সময়ে একই স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে জাগে আর দরজার কাছে একটা করে গোলাপ পায় আর সেটা তা সুন্দর করে ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখে। আজকাল তার পড়ায় মন বসে না। কেমন যেন আনমনে থাকে আর চিন্তা করে একই স্বপ্ন কেন বার বার দেখে আর কে এই ছেলেটা তার মুখটা কেন দেখতে পায় না। এভাবেই প্রায় এক মাস চলে গেল।
রাতুলের আজ কেমন যেন জ্বর জ্বর অনুভূতি হচ্ছে। সাথে গলাটা একটু ব্যথা লাগছে। প্রতিদিনই নিজ বাগান থেকে একটি করে লাল গোলাপ জারার দরজায় রেখে আসে। মেয়েটাকে সে বড্ড ভালোবাসে। আর সেটা নীরব ভালোবাসা। কোনদিন সে তা প্রকাশ করতে পারবে না। কারণ সে অনেক চাপা স্বভাবের। তবুও সে ভালোবেসেই যাবে সব সময়। হৃদয় গহীনে একজনই দোলা দিয়েছে সে হলো জারা। একই পাড়ায় থাকলেও তার সাথে কোনদিন কথা হয়নি আর হয় তো হবেও না। পরের দিন রাতুলের জ্বর আরও বেড়ে গেল। জারার দরজার সামনে তার আর গোলাপ দিতে যাওয়া হলো না। নিজের কাছে খুব খারাপ লাগছে। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু করারও নেই। প্রতিদিনের মতো আজ জারা সেই স্বপ্নটা দেখলো না। তার ঘুম ভেঙে গেল। সে তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলল কিন্তু দরজার সামনে কোন গোলাপ নেই। তার মনটা খারাপ হয়ে গেল। আজ তার কিছুই ভালো লাগছে না। প্রতিদিন গোলাপ পাওয়াটা মনে হয় তার অধিকারের পর্যায়ে চলে গেছে। সে কিছুই মিলাতে পারছে না। যে গোলাপটা দিয়ে যায় তার কী শরীর খারাপ হলো না কি অন্য কিছু! দুঃশ্চিন্তায় তার কিছুই ভালো লাগছে না। আবার পরের দিন সেই একই রকম। কোন স্বপ্ন নেই কোন ফুল নেই। এভাবেই জারা প্রতীক্ষায় থাকে প্রতিদিন কিন্তু সেই কাঙ্খিত লাল গোলাপের আর দেখা নেই…………
Views: 15