আমি গল্প।আমার নামটা শুনলে এমন কেও নেই যে দ্বিতিয় বার নাম জিজ্ঞাসা করেনি। খুব ছোট থাকতে আমি আমার দাদির সাথে আ উ করে কথা বলার চেস্টা করতাম তাই দাদি এই নাম রেখেছিলেন।আমার পুরো নাম ছিল গল্প কথা কিন্তু কথা হারিয়ে গেছে কেও ও নামে ডাকেনা তাই গল্পটা ই রয়ে গেছে।আমার বড় এক ভাই আছে যে কিনা আমার ৫ বছরের বড়। ওর নাম গহর মাহমুদি।
সংসারে আমি মা বাবা দাদি আর ভাইয়া।আমরা টাংগাইল থাকি বাবা (শফিক মাহমুদি) বদলি হয়ে আপাতত চিটাগং আছেন আর মা (আমেনা খাতুন)এখানকার একটা এন জিওতে কাজ করেন আর ভাইয়া ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল থেকে ইন্টার পাশ করে একটা মেসে থেকে ভর্তি কোচিংপড়ে। আমার দাদা মারা যাবার পরেই দাদিকে আমাদের কাছে আনা হয় শুধু দাদিকে দেখার কেও ছিলোনা আর আমি বাসায় একা থাকবো সেজন্য।মা কে দাদি অন্য বউদের চেয়ে বেশি ভালবাসেন।
বাবা যেদিন বাড়িতে আসেন সেদিন ইদ শুরু হয়, ভাইয়া আসলেও। আর বাবা ও ভাইয়া যদি একসাথে আসেন তাহলে ত আনন্দের সিমা থাকেনা। দাদি আর মা বাবার খাওয়া নিয়ে খুব চিন্তা করেন।যখনি আসেন ময়লা কাপড় দিয়ে ইস্ত্রি করা কাপড় নিয়ে যান।আমার কাছে আমার দাদি ছিল দুনিয়ার সেরা দাদি।দাদি মাকে অসম্ভব ভালবাসতেন সাথে আমাদের।
বাবারা ৪ভাই কোন বোন নেই।২ই চাচা বিদেশে থাকে দেশের কারো সাথে যোগাযোগ করেন না। বড় চাচি দাদিকে সহ্য করতে পারেন না বাবার সাথে আমার মায়ের বিয়ে হওয়ার জন্য। আর মায়ের দিকে ও ৪ভাইবোন বড়মামা তারপরে খালা তারপরে ছোট মামা এবং সবার ছোট আমার মা।
আমরা অনেক সুখে ছিলাম।মা দাদি নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন বাবা আসলে বাবাকেও মসজিদে যেতে দেখতাম আমার ভাইয়াও নামাজি ছিল শুধু আমি মনমত পড়তাম এজন্য মায়ের কাছে বকাও শুনতে হত।
দুনিয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পরিপূর্ণ সুখ কাওকে দেন না,দুনিয়ায় আমরা ভাবি এক হয় আরেক।আল্লাহতালা তার বান্দার জন্য যা ভাল সেটা ই দেন।আমরা ক্ষুদ্র মানুষ বুঝিনা।আমাদের সাথেও এমন কিছুই হলো কখন কোন দিক দিয়ে ভাংগন শুরু হয়েছিল টের পাইনি। চোখের সামনে সব আপনজন পর হয়ে গেল।
আমার সব পরিক্ষার সময় বাবা বাসায় আসেন শুরুর দিকে বাবা সাথে করে নিয়ে যেতেন আর শেসের দিকে ভাইয়া এসে নিয়ে যেত কারন বাবার ছুটি শেস হয়ে যেত।প্রি টেস্টের রেজাল্ট ভাল হয়েছিল কিন্তু অংকে মার্ক কম এসেছিল।তাই কোন দিকে মনোযোগ না দিয়ে পড়ছিলাম।টেস্ট পরিক্ষা শুরু হতে আর দুদিন বাকি অথচ বাবার আসার নাম নেই। খেয়াল করলাম দাদি আর মা কেমন গম্ভির হয়ে থাকেন, মায়ের চোখ গুল কেমন ফুলে গেছে জিজ্ঞাসা করাতে বলে চোখে এলার্জি বেড়ে গেছে। দাদিকে বাবার কথা জিজ্ঞাসা করলে বলে অফিসে কাজের চাপ বেশি তাই এবার আসবেনা ভাইয়া আসবে পরিক্ষার আগের দিন আমায় পড়ায় মনোযোগ দিতে বল্লেন। ভাইয়া যেমন ইন্টারে ভাল রেজাল্ট করেছে তেমনি আমাকেও মেট্রিকে করতে হবে, চিন্তা করনা গহরের মেসে ফোন করে জানানো হয়েছে।পরিক্ষার আগের দিন পিয়ন একটা রেজিস্ট্রি করা খাম দিয়ে গেল মা ছিলনা আমি নিলাম। মা এসে খামটা খুলে দেখে অজ্ঞান হয়ে গেল…কেন আমায় জানানো হলোনা সত্যিটা। দাদি বললেন মা শআরিরিক ভাবে দূর্বল।আমার মাথায় পরিক্ষার চিন্তা ভাল রেজাল্ট করতে হবে তাহলেই বাবা বলেছে ঢাকায় মামার বাসায় নিয়ে যাবে।ভাইয়া আসলেও মা ভাইয়া আর দাদি সারাক্ষন কি নিয়ে যেন আলাপ করে।
প্রথম তিনটা পরিক্ষার পর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর ভাইকে বলা হল আমাদের ২জনকে একসাথে নেওয়ার জন্য । আমার ফ্রেন্ড এর ভাই কাজল ভাইও ভাইয়ার ফ্রেন্ড আর আমাদের স্কুলের অংকের শিক্ষক হল ওদের বাবা।ভাইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্ট্রবিজ্ঞানে পড়ার সুযোগ পেয়েছে।
একদিন আসার সময় আমাদের প্রতিবেশী চাচা বললেন তুমার বাবা এইডা একটা কাম করলো? এত সুন্দর সংসার রেখে কিনা আরেকটা এ পর্যন্ত বলতেই কাজল ভাই বললেন চাচা কিসব বলেন? ওরা পরিক্ষা দিয়ে ক্লান্ত বাসায় যেতে দিন।
মহল্লার অনেকেই কেমন করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে আর কি যেন চুপ চুপ করে বলে।
শেষ পরিক্ষা দিয়ে আসার সময় বাড়ির কাছা কাছি এসে কিছু কথা শুনতে পেলাম রাগে যেন শরির জ্বলে গেল যেসব আন্টিরা গল্প করছিল কিছু কথা শুনিয়ে দিলাম তখন হালিমা আন্টি যার বোনের বাসায় চিটাগং বাবা ভারা থাকেন তিনি বললেন সবি সত্যি তোমায় কি কেও বলেনি যে বাবাকে নিয়ে এত গর্ব করো সেত দিব্বি বিয়ে করে সংসার করছে ২টো মেয়েও রেডিমেট পেয়েছে।তুমার মাকে বিয়ে করার আগে যাকে ভালবাসতো তাকেই বিয়ে করেছে চিন তুমি তুমার বড় চাচির বোন।আর কি বল্ল কিছুই কান দিয়ে ঢুকেনি,বাসায় ফিরে কাওকে কিছু বললাম না।ঘরের দরজা লাগিয়ে চুপ করে বসে রইলাম কিন্তু ভিতরটা ভেংগে যাচ্ছে ঠিক মেনে নিতে পারছিনা আমার বাবা আমার বাবা এমন কাজ করবে ? এভাবে আমাদের দূরে ঠেলে দিবে একে একে মনে পরছে বাবার সেই আদরের কথা আমাদের ভালবাসায় ঘিরে সুন্দর মুহুর্ত গুল । কেন হল এমন? তাহলে কি বাবার সব অভিনয় ছিল মায়ের প্রতি, কেমন করে মাকে এত বড় ধোকা দিল? এখন সব বুজতে পারছি মায়ের অজ্ঞান হওয়া,হুট করে ভাইয়ার আসাযাওয়া বেড়ে যাওয়া,মায়ের চোখ ফুলা আর দাদির গম্ভির হওয়া। কাঁদতে কাঁদতে আমারও চোখ ফুলে গেল, কেন যেন বিশ্বাস হচ্ছেনা।ভাইয়া কেমন করে চুপ আছে?আমার মায়ের জন্য আরও খারাপ লাগছে।
ভাংগা মনে হাযার প্রশ্ন নিয়ে দাদির ঘরে গেলাম বাবা কি সত্যি বিয়ে করেছে বড় চাচির বোনকে? দাদি আমায় কাছে বসিয়ে মাথাটা বুকে নিয়ে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন -এ দুনিয়ায় অসম্ভব ঘটনা হঠাত করেই ঘটে। কেন কিজন্য আমরা কেও বলতে পারবোনা শুধু উপরওয়ালাই জানেন।উনি সব সময় বান্দার ভাল চান হয়তো এটা তেও কোন কারন আছে।জানি বাবার আদরের ছিলে মেনে নিতে পারছোনা তোমার মায়ের কথা চিন্তা কর তোমাদের জন্য এখনো শক্ত আছে। মায়ের সামনে কান্না কাটি করে দুর্বল করে দিওনা।একটা কথা সবসময় মনে রেখ কাওকে কস্ট দিয়ে কারও সংসার ভেংগে কেও সুখে থাকতে পারেনা।আল্লাহ দুনিয়াতেই তার বিচার করেন কেও বুঝে কেও বুঝেনা।মা বাবার কি ডিভোর্স হয়ে গেছে।দাদি মাথা নাড়াতেই ডুকরে কেদে উঠলাম।দাদি এই কস্ট সহ্য করতে পারছিনা। আমার মায়ের ভাগ্য কেন আল্লাহ এমন দিলেন।তোমার মায়ের ভাগ্য ভালই দিয়েছেন আল্লাহ।আমার প্রতি ওই লোকটার কোন ভালবাসা ছিলনা যা ছিল তোমার দাদা দাদিকে দেখানো কর্তব্য-
কথা শুনে চমকে দেখলাম মা দরজায় দাড়িয়ে।কাছে এসে বললেন এ হয়তো আমার ব্যর্থতা আমার ভালবাসা দিয়ে তার ভালবাসা কে ভুলাতে পারিনি।আরও অক্ষম হব যদি আমার মমতা তোমাদেরকে আমার কাছে ধরে রাখতে না পারে।আমার ভালবাসায় কি কোন কমতি আছেরে মা?আমায় ফেলে কি তোরা চলে যাবি, তোরা আমার শক্তি আমার বেচে থাকার প্রেরনা,অশান্ত বুকের শান্তি।বলেই মা কেদে দিলেন সাথে আমরাও।বুকটা ফেটে যেতে চাচ্ছে সর্বদা হাসিখুশি পরোপোকারি মায়ের মুখ আজ মলিনতায় ছায়া। কি দোস আমার মায়ের,কালো না অসুন্দর তো নাইই কারন আমাকে আমার মায়ের ডুপ্লিকেট বলা হয়।আমরা কখনো মাকে৷ উচু গলায় কথা বলতে দেখিনি ছোট বড় সবার প্রতি মায়ের ছিল ভালবাসা আর সন্মান সেখানে মায়ের জীবন টা এমন হল কেন?
যথারিতি আমাদের কোচিং শুরু হল।ভিতর থেকে কেমন গুটিয়ে গেলাম কেও আমার দিকে থাকিয়ে থাকলে মনে হয় করুনা বা ঘৃনা করছে।পড়ালেখা তে আরও বেশি মনোযোগি হলাম।
গ্রাম থেকে একদিন আমাদের এক চাচা এলেন তিনি খুব কালো ছিলেন তাই সবাই তাকে কালা বলে ডাকতো সত্যি বলতে আমরাও তার আসল নাম জানিনা কালাচাচা বলেই ডাকতাম।উনি এসে দাদিকে কি বললেন জানিনা তবে সেরাতেই ভাইয়াকে খবর দেওয়া হল দাদি আরও কার সাথে যে ন ফোনে কথা বলতেন।আসলে কালা চাচাকে কি যেন বুঝিয়ে ফেরত পাঠালেন আর ভাইয়াকে নিয়ে পরের দিন গ্রামের বাড়ি গেলেন।
দাদিবাড়ি গিয়ে ভয়ংকর কাজটি করলেন যা কেও চিন্তাও করেন নি।টাংগাইলে গ্রামে যাওয়ার আগে চেয়ারম্যান চাচার বাড়িতে উঠলেন কি করতে হবে আগেই উনাকে বলা ছিল তাছাড়া চেয়ারম্যান চাচা ছিল দাদির মামাতো বোনের ছেলে আবার দাদা অনেক সাহায্য করেছিলেন এতদুর আসার জন্য। চেয়ারম্যান চাচার সাথে কাজ মিটিয়ে আচমকা দুপুর বেলা গিয়ে বাড়িতে হাজির হয়ে সোজা নিজের ঘরে গেলেন।দাদা দাদি কোথাও বেড়াতে গেলে দাদির ঘর তালা বব্ধ থাক্তো।আর আজ দাদি দেখেন বাবা তার বিছানায় শুয়ে আছেন আর তার নতুন বউ পেটের কাছে বসে আছে।অনেক জোরেই চিৎকার করলেন বাবা চমকে উঠে ন দাদি তাদের ব্যগ বাহিরে ফেলে দেন -তোর সাহস হয় কিভাবে এই বে*মা* কে নিয়ে আমার বিছানায় বসার বের হয়ে যা,এরপ র লোহার সিড়ি বেয়ে উপরে যে রুম (যেটাতে আমরা বাড়িতে গেলে থাকতাম)সেখান থেকে বাবার নতুন ২মেয়েকে টেনে নামিয়ে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেন।চেচামেচি শুনে বড় চাচা চাচি,আসেন কিন্তু দাদির রাগ দেখে কেও কিছু বলার সাহস পায়না।দাদাদাদির কাজ করে দেওয়ার জন্য পাশের গ্রামের এক অসহায় বিধবা মহিলা ছিলেন জমিলা।দাদি জমলা দাদু কে বছানার চাদর বদলাতে বললেন আর ভাইয়ার জন্য খাবারের বাবস্থা করতে বলে একটা ব্যাগ হাতে ধরিয়ে বলেন এখানে সব আছে আমার দাদু ভাইয়ের যেন অযত্ন না হয় আর শোন এই কুলাংরদের কোন কিছু যেন আমার ঘরে না আসে, আর আমার যে মাটির চুলা ছিল সেটায় রান্নাকর। দাদি দরজা বন্ধ করে দিলেন।বাবা অবশ্য ভাইয়াকে দেখে কেমন আছ বলে জরিয়ে ধরতে চেয়েছেন কিন্তু দাদি সে সুযোগ দে ন নি। বিকাল থেকে সন্ধ্যা পজন্ত সবাই খুব ডাকাডাকি করোলেন না কোন উত্তর দিলেন না দরজা খুললেন।দাদুর ঘরের সাথে ছোট একটা রুম ছিল সেখানে মাটির চুলায় রান্নার ব্যবস্থা ছিল।
পরেরদিন সকাল বেলা চেয়ারম্যান চাচার লোকজন এসে দাদির আলমারি, সোকেস, খাট সহ কিছু জরুরি জিনিস চেয়ারম্যান বাড়ি নিয়ে গেল।বাবা চাচা খুব অবাক হল,বেলা বাড়ার সাথে সাথে গ্রামের মুরুব্বি ছোট বড় সবাই আসতে লাগলো। দাদির ব্যবহৃত বাকি জিনিস গরিব মানুসদের এমন ভাবে দান করলেন যে কিছুই থাকলো না এবং তাদের ওয়াদা করালেন দরকার হলে ফেলে দিবে বা নস্ট করবেন কিন্তু কোন কিছু যেন এবাড়ির কারো কাছে ফেরত না আসে।সবার সামনে এসে বললেন এই গ্রামে আমার স্বামির একটা সন্মান ছিল,সন্মানের সাথে মাথা উচু করে বেচে গেছেন কেও কখনো কিছু বলার সুযোগ পায়নি এমনকি চেয়ারম্যান ও না।কিন্তু দুঃখ আমার পেটে চার কুলাংগারের জন্ম হয়েছে ধর্মে আছে কিনা জানিনা তবে আজ থেকে আমি এদেরকে ত্যাগ করলাম,কোন সম্পর্ক থাকবেনা,মরার পর আমার স্বামির পাশে যেন কবর হয় আর আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ রইলো আমার মরা মুখ যেন এই কুলাংগার রা না দেখে। বাবা চাচা সহ সবাই দাদির কাছে মাফ চাইতে আসলে চেয়ারম্যান চাচা বাধা দেন এখন কিছুই হবেনা ৩মাস সময় পেয়েছিলে তখন কিছু কেন করনি?গ্রামের মানুস বাবা চাচা বড় চাচিকে ছি ঃছিঃ করতে লাগ্ল দাদির মত মাও যে সবার আদর আর সন্মানের ছিল।দাদি বলেন আমার স্বামি আমাকে যা লিখে দিয়েছেন সব আমি চেয়ারম্যান এর কাছে এমন কি এই ভিটে বাড়িও বিক্রি করে দিয়েছে, চাচার দিকে চেয়ে বলেন আমার সামনে এখনি বাড়ি ভাংগা হোক আমি দেখতে চাই বুঝাতে চাই আপন জনের সাথে সম্পর্ক চ্যুত হলে কেমন লাগে।দাদির জিদের কাছে হেরে সবার সামনেই বাড়িটি ভাংগা হয় এবং সিল করা হয় চেয়ারম্যান এর সম্পত্তি এট। দাদির চোখের পানি বাধ মানছেনা তারপরেও শক্ত হয়ে ভাইয়াকে ধরে দারিয়ে দেখছিলেন।ভাইয়া ও নিরবে কাদছিল -কত স্মৃতিএই বড়িতে এই গ্রামে সেগুল কি কখনো ভুলা যাবে শুধু একজনের ভুলের জন্য সব তছনছ হয়ে গেল।দাদি আসার সময়ও কারো দিকে তাকালেন না কারো সাথে কথাও বললেন না।
টাংগা ইল থেকে সোজা ঢাকায় চলে গেলেন মামার বাসা বিজলি মহল্লায়।ওখানে নানির সাথে কথা বলে মামাকে জানালেন মায়ের ভাগে যে অংশ আছে তা বুঝিয়ে দিতে দাদি বেচে থাকতেই আমাদের নিজের বাড়িতে দেখে যেতে চান।আহা সম্পত্তি ভাল মানুসের মুখোশ খুলে গেল,যে মামি আমরা বেড়াতে গেলে অস্থির হয়ে যেতেন কোথায় বসাবেন কি খেতে দিবেন?সেই মামি কিছুতেই দিতে দিবেন না কারন এটা তিনি তার বোনের কাছে বিক্রি করার কথা দিয়েছেন উনার এই বোনের পাশের বাসায় বাবার কলিগ ভারা থাকতো আর পরের এরিয়াতে চাচির বোন । আর উনার উদারতায় পুরো টাংগাইল জানে বাবার কির্তি।দআদি নানির মিলিত চেষ্টা য় মায়ের অংশ ভাইয়া আর দাদিকে বুঝিয়ে দেওয়া হল কিন্তু সম্পর্ক খাপছাড়া হয়ে গেল যার কিছুই আমরা জানলাম না।মামির ব্যবহার দেখে দাদি ভাইয়াকে নিয়ে হোটেলে থাকার সিধান্ত নেন কিন্তু ভাইয়ার বন্ধু বিপুল ভাইয়া তাদের বাসায় নিয়ে যান উনার পরিচিত একজন কে যিনি খুব বিশ্বস্ত তাকে বাড়ি তৈরি কন্ট্রাক দিয়ে আসেন।এস এস সি পরিক্ষা যা আশা করেছিলাম তার চাইতে ভাল হল। মনের মধ্য ক্ষীন আশা ছিল আমার ভাল রেজাল্ট বাবাকে ফিরিয়ে আনবে।কয়েকবার ওখান কার নাম্বারেও ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু হয় নিশি আন্টি(চাচির বোন) নাহয় তার মেয়েরা ধরে।
পুরো টাংগাইলে আমি প্রথম হলাম।খুশিতে সব কিছু ভুলে বাবাকে ফোন দিলাম যথা রিতি নিশি আন্টি ধরলেন বাবাকে চাইতেই অকথ্য ভাষায় বকা দিলেনশুধু বললাম আপনার গালি দেওয়া শেষ হয়ে থাকলে আপনার জামাইকে দেন আর যে পজন্ত না দিবেন আজ বার বার ফোন দিতেই থাকবো খুব সম্ভব লাউড স্পিকার দেওয়া ছিল বাবা সাথে সাথেই ফোন কানে দিয়ে বললেন মামনি আমি তোমার রেজাল্ট শুনেছি আমি..এটুকু বলার পরেই প্রচন্ড রাগ নিয়ে চিৎকার করে বললাম কেন বাবা?কেন এমন করলে?কি দোস ছিল আমার মায়ের আর আমাদের ২ ভাই বোনের?শুধু তোমার একটা ভুলের কারনে আপন জনেরা সব পর হয়ে গেছে সবাই আমার মায়ের দিকে আংগুল তুলছে। আমি তোমাকে ঘৃনা করি এতটা ঘৃনা কোন মেয়ে তার বাবাকে করেনা আজ থেকে আমার কোন বাবা নেই মরে গেছে আমার মা ডিভোর্সি না বিধবা। আমাদের দেখার জন্যও যদি শ্বাস তোমার গলায় আটকে থাকে তাও আমাদের দেখতে পাবেনা,তুমি পাশে বসে থেকে শুন বউ বাচ্চারা আমায় যানা তাই বলছে প্রতিবাদ করনি , কেন? আমি কি তোমার মেয়ে না? খুব কস্ট হচ্ছে বাবা যে পিতার আদর ভালো বাসায় নিজেদের সব থেকে সুখি ভাবতাম সেগুল অভিন্য ছিল। নকল মেয়ে কোনরকমে পাশ করেছে তাতেই পুর গ্রাম মিস্টি বিলিয়েছ, আজ থাকে তুমি মৃত আমাদের কাছে।শরির এর যত জোর আছে চিৎকার করে কাদলাম দাদি মা ভাইয়া শুধু জরিয়ে ধরে থাকলো।
এরপর ঢাকার কলেজে ভর্তি হলাম ভাইয়া বিসিএসের রিটেনে টিকে ভাইবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে আর মামাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হল এত হওয়ারি ছিল । আমি কলেজে ভর্তি হবার পর নানি নিজেই একদিন সবাইকে দাওয়াত দিলেন সেই দাওয়াতে রোজিনা আন্টিও ছিলেন শুরুতেই তারা আমাকে ইংগিত করে বলছিল এই রাফাতকে(মামাতো বড়ভাই) দেখে রাখিস যে ভাবে ঘন ঘন আসা যাওয়া করে কখন আবার ফাসিয়ে দেয় বাবার রক্ত বলে কথা। আমি শুনেও না শুনে থাকলাম কিন্তু যখ ন মাকে নিয়ে বলা শুরু করলো শুধু মামিকে বললাম ছি মামি কি ছোটলোকের মত কথা বলো সাথে সাথে মামি -আমি ছোট লোক মামাতো ছোট ভআই যে আমার বয়সি পিছন থেকে এসে জোরে থাপ্পড় দিল বেরিয়ে যা তোর এত সাহস আমার মাকে ছোট লোক বলিস।মামার দিকে তাকালাম মামা কি কারনে কিছু বলছেনা বুজলাম না মা আর দাদিকে নিয়ে বের হয়ে আসার সময় দেখলাম ভাইয়া কখন এসেছে শুধু বলল আজ থেকে আমাদের কোন আত্তিয় স্বজন নেই না বাপের না মায়ের।।নানি মামিকে থাপ্পড় দিলেন সাথে মামাতো ভাইকে -তুই কোন সাহসে আমার নাত্নিকে থাপ্পড় মারিস তোর জন্মের ঠিক আছে তুই আমার নাতিনা, তুই তোর মায়ের অবৈ ধ সন্তান।তোর মা কে বাচাতে আমার ছেলে বিয়ে করেছিল আমিও কিছু বলিনি কারন রিফাতকে জন্ম দেওয়ার সময় ওর মা মারা যায়।মামিকে বললেন এখনি বের হয়ে যাও এটা আমার বাসা, তোমাদের নামে যে ফ্ল্যাট আছে সেখানে যাও এক্ষনি।
এরপরের জীবন খুব দ্রুত চলতে লাগলো, ভাইয়া পাশ করে জেলা মেজিস্টিস হলেন নিজের পছন্দে বিয়েও করলেন তার কলিগ কে অবশ্য রোজিনা আন্টি মাফ চেয়ে তার বড় মেয়ের জন্যবলেছিলেন।ভাইয়ের বউ দেখেই দাদি মারা যান অবশ্য ততদিনে আমি গাইনি ডাঃ ইন্টার্নি করছিলাম। দাদির মৃত্যুর খবরে পুরো টা ংগাইল মনে হয় চলে এসেছিল দাদির কথামত তার মুখ চাচা বাবা চাচি কাওকে জানাজা এমনকি মুখ দেখানো হয়নি বাবা তখ ন টাংগাইলে পোস্টিং।অনেক কেদে কেদে মাপ চেয়েছিলেন কিন্তু হায় দাদি তখন সব কিছুর উর্ধে।বড় চাচা চাচি আর বাবা মায়ের কাছে মাপ চাইতে চেস্টা করেছিল কিন্তু ভাইয়া আগেই পুলিশ দের বলে আমাদের গাড়ি ঘেরাও করে দিয়েছিল কেও যেন আসতে না পারে।
নানি ফ্ল্যাট ভারা দিয়ে আমাদের সাথে থাকেন। একটা ঘটনা ঘটে আমি যে হাসপাতালে ডিউটি করি।
একটা মেয়ে ২মাসের প্রেগন্যান্ট হয়ে এবোরশন করতে আসে, কেন করবে বল্ল স্বামি এখন বাচ্চা নিতে চায়না তার স্বামির অনুমতি হিসেবে সিগ্নেচার আনতে বললাম।এর পরের বছর সেই একই মেয়ে তার মায়ের সাথে আসলো এবোরশন করতে।মাটাকে দেখে চিনতে পারলাম উনি আমার চাচির বোন।উনি আমায় চিনেন নি।এবার ১মাসের প্রেগন্যান্ট বুঝালাম এবার বাচ্চা নস্ট করলে ভবিষ্যতে মা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে এমনিতেই শরিরের অবস্তা বেশি ভালনা কিন্তু তাদের একি কথা অতপর স্বামির সাইন দেখিয়ে পাপ করে গেল।
পরের বছর সেই মেয়ে এক লোকের সাথে আসলে খুব অবাক হয়ে বললাম আপনি উনার স্বামি,আপনিতো অনেক খারাপ আবার এসেছেন বাচ্চা ফেলতে?অবাক হয়ে স্বামিটি বললো কি যাতা বলছেন বাচ্চা ফেলতে না বাচ্চা কেন হচ্ছেনা সেজন্য আসা।কিন্তু উনি যখন উনার মাকে নিয়ে ২য় বার এবোর শন কিরতে এসেছিল তখনি বলে দিয়েছিলআম পরবর্তিতে বাচ্চা নিতে সমস্যা হবে কি বলিনি?মেয়েটা অসহায় হয়ে তাকিয়ে থাকলো স্বামি বল্ল ম্যম আমাদের বিয়ে হয়েছে আগামি ২০তারিখে ১বছর হবে তারাতাড়ি বেবি নিতে চাই এজন্য ডাঃ দেখানো। আমি এখন সব বুঝতে পেরেছি বলে বউকে টানতে টানতে নিয়ে গেলেন।
প্রফেসরের সাথে রাউন্ডে ছিলাম একটি বেডের সামনে থমকে দারালাম স্যার বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন কি হয়েছে চিকিৎসা কি হবে।উনার ব্রেন স্ট্রোক বাপাশ প্যারালাইজড , পরিবারের কেও সাথে নেই কেও আসেওনা দেখতে হ্যা উনি আমার বাবা।আজ কেন যেন কস্ট লাগলো না,এক ছেলেকে মাসিক বেতন হিসেবে সবসময় সাথে থাকার জন্য রেখে দিলাম ওষুধের দোকানে বলে দিলাম যা লাগে দিতে আর বিল যেন পাঠিয়ে দেয় আমার নামে। বাসায় কাওকে বলিনি।শুনেছি আমার বয়সি যে মেয়ের মেট্রি ক পাশে গ্রামে মিস্টি দিয়েছিল সেই মেয়ে পাশের বাড়ির ড্রাইভারের সাথে পালিয়ে গেছে আর বড় মেয়ের চরিত্র ত আমার কাছে আসার পরেই বুঝেছি।শুনেছি উনার বউয়ের সাথেও বড় চাচিদের সম্পর্ক ভালনা কারন ২মেয়েত বিলাসবহুল জিবনের করচ বহন করতে যেয়ে জমি যে হারে বিক্রি কতছিল তাই চাচা সব দখল করে নিয়েছেন তার বড় ছেলে পুলিশে চাকরি করে।
বাবা অই অবস্তায় মাস খানেক ছিলেন অবস্তার খুব একটা উন্নতি হচ্ছিল না কারন যথা সময়ে চিকিৎসা শুরু হয়নাই,বাসায় ভাইয়াকে বলেছিলাম, শুধু বললেন লাগলে বড় ডাঃ দেখা বিদেশে নিয়ে গেলে কি ভাল হবে,এখন আর কিছুই হবেনা বড্ড দেরি হয়ে গেছে।মৃত্যুর আগে বাবা জেনে হিয়েছিলেন তার চিকিৎসার খরচ কে বহন করছে আমার সাথে দেখা করার জন্য খবর দিয়েছে কিন্তু যে অভিমানের পাহাড় বুকে চেপে আছে সামনে যেতে বাধা দিয়েছে শেষ এর দিকে আমি ভাইয়া ভাবি কাছাকাছি থাকতাম।ততোদিনে বাবার কথা বন্ধ হয়ে গিয়ে ছিলো। তখন তার জ্ঞান ছিলনা মৃত্যু যন্ত্রণা য় ছটফট করছিলেন হুজুর এনে তওবা পড়া অবস্তায় ভাইয়ার কোলে শেস নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আর আমি ছিলাম পায়ের কাছে তিনি জানতেও পারেন নি যে বাচ্চাদের অসহায় অবস্তায় ফেলে গিয়ে ছিলেন তাদের কাছেই শেস নিশ্বাস নিলেন।
যৌবনে আমরা কত ভুল করি,যে রুপের মোহে পরে সেটা কে ভালো বাসা মনে করে বাবা আমার মাকে ত্যাগ করেছিলেন সেই রুপুসি মহিলা আজ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ভিক্ষা করেন,।
ছোট মামাতো ভাই কে নিয়ে মামা মামি এসেছিলেন মায়েরকাছে মাপ চাইতে হাযার হলেও ভাই মাপ করে দিছেন । কিন্তু উনি যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তা নাক চ করেছেন।উনার ছেলের সাথে বিয়ে আমার বলার সাথে
ভাইয়া মা এক সাথেই না বলেছে। বিয়ে আদৌ করবো কিনা জানিনা, মনের ভিতরে কেমন একটা ভয় ঢুকে গেছে। আমি নিজে ডাঃ তারপরেও বিয়ে নিয়ে সাহস হয়না।
Views: 30