আমরা তিন রাজকন্যা
__________✍রেহানা পারভিন
তিন বোন ছিলাম বাবার তিন রাজকন্যা।যখনি বাবা কাজে অন্য কোন জেলায় যেতেন ফেরার সময় আমাদের পছন্দের জিনিস নিয়ে আসতেন কিভাবে বুজতেন ওইগুলই আমারাও মনে মনে আশা করে ছিলাম।
মুরাদ ভাইয়ের সাথে বিয়ের কথা শুনে মায়িশা’পু চমকে উঠে বলে -কিন্তু বাবা মুরাদ ভাইয়াত ত চারিত্রিক সমস্যা আছে,তুমি কি কথা দিয়ে দিয়েছ?
নারে মা! আমার রাজকন্যা দের সাথে কথা না বলে কিভাবে মত দেই।বাবা ফুপু আমাদের সাথে খুব অন্যায় করেছে আর চাচাও পাশ কাটিয়ে গেলেন। ছোট ফুপু আমাদের পক্ষে কথা বলেছেন কিন্তু উনি ত আর দেশে থাকেন না।আমরা তিন বোন মিলে পরামর্শ করে বাবাকে বললাম আপুর অনার্স শেস হোক আর নিচ তলা যেহেতু তৈরি হয়ে গেছে ওটা আপুর নামে লিখে দিতে বল মুখে না একদম কাগজে কলমে। আর বাকি গুলও।
বড়ফুপুকে বলার পর ঝামেলা করলেন না কেন তখন বুঝিনি কিন্তু কাগজে কলমে সাক্ষি নিয়েই আপুর নামে আর আমাদের নামে ফ্ল্যাট দেওয়া হল আমরাও বাসায় উঠে গেলাম।
সপ্তাহ ৩ পরে বড় চাচাদের সহ ফুপুর বাসায় দাওয়াত সবার।ও বাসায় যেয়ে দেখলাম অনেক মানুষ, প্রথমে কিছু বুঝা গেলনা কিছুক্ষন পর যা দেখলাম বাবা চাচা হতভম্ব হয়ে গেল।
মুরাদ ভাই ৪দিন আগে বিয়ে করেছেন, মেয়ের বাসায় আর ফুপুরা মেনে নেওয়ার পর আজ অনুস্ঠানের মাধ্যমে সবাকে জানাচ্ছেন।ফুপাকে খুব লজ্জিত দেখলাম কিন্তু ফুপুর এক কথা ছেলে মেয়ে বড় হয়ে গেলে কি বাবা মায়ের কথা শুনে!আর আমার একটা মাত্র ছেলে ফেলেত দিতে পারিনা।
বাবা ও মা কেমন অসহায়ের মত তাকিয়ে রইলেন।আমরা বাবার তিন রাজকন্যা ঘিরে ধরে বাবাকে বললাম -কেন মন খারাপ করছো আমরা আগেই আন্দাজ করে ছিলাম এমন কিছু হবে, এই মেয়ে মুরাদ ভাইয়ের ৬নম্বর গার্ল ফ্রেন্ড ওই মেয়ে আপুদের সাথে পড়ে। তাছাড়া নাসিম ভাইয়া পর পর কয়েকদিন ওদের এক সাথে দেখেছে।
সবাই না খেয়েই বাসায় চলে আসলাম।বেশ কিছুদিন চুপচাপ আগের রুটি নেই চলছিল। কিন্তু কে জানতো এটা ছিল ঝড়ের পূর্বাভাস।
বড় চাচা চাচি সাদিয়া আপু(চাচাত বোন) একদিন বিকালে আমাদের বাসায় আসলেন।চাচা কে খুব উত্তেজিত দেখলাম,মা সবার জন্য চা নাস্তার বাবস্থা করলেন, চাচা বললেন যে কথা বলতে এসেছি সেটা শুন সবাইকে বসার ঘরে আসতে বল। মা চা দিতে দিতে বলেন ভাইজান খেতে খেতে গল্প করেন।
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে টেবিলে রেখে দিয়ে বাবার দিকে ঘুরে বসলেন –বাবুল তুইতো অনেক ঝামেলা শুরু করেছিস, মুরাদের সাথে তিয়াশার বিয়ে হয়নি তাই বলে কি তুই নাসিমের পিছনে লাগবি??আমি এখন একাউন্ট অফিসার আমার এক কলিগের মেয়ের সাথে নাসিমের বিয়ের কথা দিয়ে রেখেছি।আর তুই কি ঝামেলা শুরু করেছিস??বাবা সহ আমরা খুব অবাক হলাম, নাসিম ভাইয়া আপুকে পছন্দ করে সন্দেহ করেছিলাম কিন্তু আপুর আগ্রহ না দেখে গুরুত্ব দেইনি।চাচি বল্লেন-তুমি এমন করে বলছো কেন?আর হলেত ভালই হবে , তিয়াশা যে ঘরে যাবে সে ঘর আলোয় ঝলমল করবে। তুমি চুপ করো ধমকে চাচিকে থামিয়ে দিলেন, বাবুলের কি কোন স্ট্যাটাস আছে করেত ঠিকা দারি তাও আবার ছোট খাট এটা বাদ দিলে ও একটা দোকানদার।ওর ৩মেয়ের দায়িত্ব নিয়েই নাসিমের জীবন শেস হয়ে যাবে।
বাবা খুব রেগে গেলেন চাচাকে বললেন -আমি কি সেটা আমি জানি, আমায় চোখে আংগুল দিয়ে দেখাতে হবেনা, আমার মেয়েদের নিয়ে তোমাদের এত সমস্যা কেন?৷ মেয়েরা কি তোমাদের বাড়ি তে পরে থাকে?আমার জন্য বা আমার মেয়েদের জন্য কখনও কিছু দিয়েছো?আমি কখনও হাত পেতেছি ভাইবোনদের কাছে?তুমার বাসা পাহাড়া দেওয়ার জন্য আমাদের থাকার জন্য জোর করেছিলে তানা হলে আমার জায়গায় টিনশেডের ঘর তুলা হয়েযেত জায়গাটা বেদখল হতনা।নাসিম কোথায় ডাক তাকে ও কি বলেছে সামনে বলুক এসে? ঠিক সেই সময় নাসিম ভাই ঘরে প্রবেশ করেই চাচার উদ্দেশ্য বলেন – বাবা আমি তুমাকে যা বলেছি সেটা আমার সিদ্ধান্ত , তিয়াশাকে আমি অনেক আগে থেকেই ভালবাসি এতদিন বলতে পারিনি কারন আমি বেকার ছিলাম এখনতো আমি ভাল চাকরি পেয়েছি তাছাড়া বিসিএস দেওয়ার চিন্তা আছে, মুরাদের সাথে বিয়ের কথায় ঘাবরে গিয়েছিলাম না হওয়াতে আমার চেয়ে খুশি কেও হয়নি,রিক্স নিতে চাইনা তাই তোমাকে৷ জানিয়েছি।
এবার আপু নাসিম ভাইয়াকে জিজ্ঞাসা করলো আমি কি কখনও তোমাকে ভালবাসি বলেছি বা বাবা কখনও তোমার কাছে ইচ্ছে প্রকাশ করেছে বিয়ের ব্যাপারে?।মাথা নেড়ে না করলেন ভাইয়া,সাদিয়া আপু বললেন এই ব্যাপারে শুদু আমি জানি মনের যত কথা ভাইয়া আমায় বলতো।চাচা আরও কিছুক্ষন রাগারাগি করলেন তার বদ্ধমূল ধারণা বাবাই এর পিছনে।
সবাই চলে যাওয়ার পর বাবাকে জরিয়ে ধরে বললাম মন খারাপ করোন, তোমার রাজকন্যারা মাথা নিচু হওয়ার মত কখনও কোন কাজ করবেনা।বাবা আমাদের সবার কপালে চুমু দিয়ে বললেন আমি জানি আমার কলিজাগুল আমায় হতাশা করবেনা,ভাল করে লেখাপ ড়া কর নিজের পায়ের মাটি শক্ত কর নিজেদের আলাদা পরিচয় বানাও।আমার মেয়েদের দেখে যেন সবাই বলে ওইতো তিন রত্ন, তোমাদের পরিচয়ে আমার পরিচয় হোক।রত্নগর্ভা বলুক তোমার মাকে।
আমাদের কপালের শনি আসলে তখনি লেগেছিল।৬মাস পর বড় ফুপু আবারো মুরাদ ভাইয়ের সাথে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে হাজির কারন ওনাদের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে কেন সেটা না বল্লেও আমাদের কানে এসেছিল ভাবি ভাইয়ের চরিত্র বুজতে পেরে নিজেই তালাক দিয়েছেন,বাবা ফুপুকে বাসা থেকে বের করে দিলেন।বড় চাচাকে বাবা খুব বিশ্বাস করতেন,যাই কিছু হোক তার বড় ভাই কোন ক্ষতি করবেনা এতটা বিশ্বাস ছিল।
এরপরেই চাচা একদিন জহির ভাইকে নিয়ে তিয়াশা আপুর জন্য প্রস্তাব আনেন বলেন তার পরিচিত অনেক ভাল ছেলে, বাড়ির ঠিকানা বাবার নাম, কোথায় থাকে সব দিয়ে খুব দ্রুত বিয়ে ফাইনাল করতে বলেন।কিন্তু চাচা আসলে ছেলেকে চিনতেন না সমন্ধ ফুপু এনেছিলেন যেহেতু ফুপুর কথায় কেও রাজি হবেনা আর চাচাও নিজের ছেলেকে দূরে রাখার জন্য কাওকে নাজানিয়ে ছেলের সব কিছুই গোপন করে যান।জহির ভাই ছিল ফুপুর ননদের দেবরের ছেলে। ২জনেই যার যার স্বার্থ দেখেছে বাবার বিশ্বাসের কোন মূল্যই ছিলনা তাদের কাছে।জহির ভাইয়ের মিস্টি কথায় আমরা সবাই মুগ্ধ,চাচা খুব তারাহুর করতে থাকেন -তার এক কথা ছেলে ভাল, ভাল চাকরি করে এত গ্রামের বাড়ির খোজ নিয়ে কি হবে?
১দিনের সময় নিয়ে বাবা নওশাদ চাচা কে(দোকানের)কিশোর গঞ্জে জহির ভাইয়ের বাবার সাথে কথা বলতে পাঠান।চাচা বিয়ের আগেই নাসিম
ভাইকে দিয়ে সবাইকে তার শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দেন।
বর্তমান
আপু বল্লেন-ওর যে ভাই জহির থেকে কোন সাহায্য নেয়না বাসায়ও আসেনা আমার শ্বশুরের নিষেধ আছে, জহিরের সাথে উনি কথাও বলেন না। ভেবেছেন ছেলে হয়তো ভাল হবে বিয়ে করলে।
এখন কি করার??৩বোনে বুদ্ধি করলাম আপাতত আপু এখানেই থাকবে সামনেই মাস্টার্সের ভর্তি আর মেঝ আপুর মেডিকেলের ভর্তি পরিক্ষা আর আমারও স্কুল ফাইনাল।
তিয়াশা আপু প্রাইভেট স্কুলে চাকরি পেলেন,আমার ফাইনাল হয়ে গেল,মায়িশা আপু মেডিকেলে ভর্তির সুজোগ পেল।এর মাঝে আপু ওর বাসায় গিয়ে ঘুরে এসেছে ওর যা কাপড় আছে ভাইয়াকে না বুজতে দিয়ে নিয়ে এসেছে।
এবার আমরা সবাই মিলে বাবা ও মাকে খুব ধিরে সুস্থে বুঝিয়ে বললাম।মাতো কেদেই দিলেন বাবা বাকশূন্য হয়ে রইলেন। হঠাত তিয়াশা আপুকে বুকের মাঝে নিয়ে কেঁঁদে দিলেন বাবার সাথে আমরাও কাঁদতে লাগলাম।
এরপরেই আপু ডিভোর্স লেটার পাঠান,জহির ভাই খুব গন্ডোগোল করেন কিন্তু আপু অটোল তার সিদ্ধান্তে, জহির ভাই নরম হয়ে ক্ষমা চান, বাবার পায়ে ধরে মাপ চান,কিন্তু আপুর একটা ই কথা মাপ করে দিতাম কিন্তু তুমি এত জঘন্য যে আমার বোনদের দিকে কূ দৃস্টি দিয়েছ ওরা তোমাকে বড় ভাইয়ের আসন দিয়েছিল।
আমাদের বাড়ির কাজ খুব দ্রুতই এগুতে থাকে,এর মাঝে ফুপু আসেন বাবা ভিতরে ঢুকতে না দিলে বাহিরে দাড়িয়েই বলতে থাকেন এত অহংকার আসে কোথা থেকে তোর মেয়েত ডিভোর্সি, ও মেয়েকে কে বিয়ে করবে আমার মুরাদ রাজি আছে বিয়ে করতে।
চাচা ফুপুদের চেহারাও যেন দেখতে না হয় এজন্য বাবা উল্টো দিকে বাড়ির গেট দিলেন আর পিছনে উচু করে দেওয়াল দিলেন। উপরে কাটা তারের বেড়া।এমন হল বাকি চাচা ফুপুদের বাড়ির সামনের অংশ সেটা আমাদের বাসার পিছন আমাদের প্রধান গেট পার হলেই বড় রাস্তা।
একদিন সন্ধায় ফুপা আসলেন বাসায়, এসে যা বললেন তাতে সবারর মাথা খারাপ হবার অবস্তা……
একদিন ফুপা সন্ধায় বাসায় এসে যা বললেন তাতে আমরা খুব ভয় পেলাম। ছিঃ নিজের ফুপুও এমন হয়।
ফুপু লোভি সেটা আমরা সবাই জানতাম কিন্তু এতটা তা বুজতে পারিনি। আপুর পিছনে লেগে আছেন কারন উনার জমি আমাদের নামে দিতে হয়েছে মুরাদ ভাই এমন ঘটনা না ঘটালে হয়তো বিয়ে হত বিয়ে হওয়ার পরেই আপুকে যেভাবেই হোক চাপ দিয়ে আপুর নামের ফ্ল্যাট ফুপুর নামে করতেন আর আমাদের জমি ত উনি দখল নিয়েছেন।
এখন নাকি সাদিয়া আপুর দিকে নজর পরেছে।
বড় চাচা সবসময়ি গা ছাড়া ভাব, তিনি কখনও সংসারের কারও কোন দায়িত্ব নেন নি। এনিয়ে ফুপা খুব ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। ভাইজান কে তার বোনের কথা কত বলেছি কিন্তু কানে নেন নি শুধু”তোমাদের সমস্যা তোমরা নিজেরাই মিটিয়ে নাও৷ আমাদের টেনোনা।”এসব বলেই এরিয়ে গেছেন।বাবুল তোমার উপর রাগ কারন বিয়ের আগে যখন তোমার বোন পালিয়ে যাচ্ছিলো তুমি ধরে এনেছিলে আর বড় ভাইজান তাকে খুব মেরেছিলো এজন্য তোমাদের ২ জনের উপর এত রাগ।বাবা চমকে বললেন – দুলাভাই আপনি!বাবাকে কিছু বলতে না দিয়ে ফুপা বললেন আমি সব জানি, ভেবে ছিলাম বাচ্চা হলে ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু না ছেলের সব খারাপ কাজের সাপোর্ট দিয়ে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নিছে, আর কালকে ত টাকা দেইনি বলে আমায় মারতে গিয়েছিল। যাক যার জন্য এসেছি এই নাও তোমার জমির কাগজ, তার(ফুপু) নামে এখনো করতে দেই নি। আর একটা কথা চমকে যাবেনা বা কোন অনুরোধ করবেনা-আমি আমার ছেট বোনের কাছে অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছি আর আসবোনা আমার ছেলেকে ত্যাজ্য করে দিয়েছি আর আমি যাওয়ার পর তোমার বোন তালাকের কাগজ পেয়ে যাবে।আমার মা বাবা বোনের সাথে যে ব্যবহার করেছে তার শাস্তি। তিয়াশা মারে এই বুড়ো ছেলেকে মাপ করে দিস আমি জানতাম না ওই জহিরের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে বিয়ের দিন যখন দেখলাম তখন তুই কবুল বলে দিয়েছিস,,একটা চেকের পাতা দিয়ে বললেন এটা দিয়ে তুই কিছু কিনে নিস৷ পারলে আমায় মাফ করিস,আর বাবুল ভাই আমার অনেক তো করলে ভাই বোন দের জন্য এবার নিজের দিকে নজর দাও, অন্য দুজন তো বিদেশে ভালই আছে ওদের জন্য ওতো কম করোনি?৷ ভালো থেক বলেই আমাদের কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেলেন।
বাবা প্রচন্ড রেগে চাচার বাসার দরজার কাছে দাড়িয়ে চাচিকে সব কিছু বলে সাদিয়ার ব্যাপারে সাবধান করে আসলেন আর এটাও বলেন আজ থেকে আপনারা না আমার কেও না আমি আপনাদের কেও।
এরপরেই আমার হাসি খুসি পরোপকারি বাবা কেমন গম্ভির ও চুপচাপ হয়ে গেলেন।সবসময় কি যেন চিন্তা করেন।
১বছর পর
আমাদের আসল জায়গায় ৩ তালা পজন্ত হয়েছে, নিচতলা বাবা গোডাউন বানিয়েছেন, ২য় তালায় পুরো টা নিয়ে আমরা থাকি। বড় আপু অ নার্স ও মাস্টার্স এত ভাল করেছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হিসেবে যোগ দিয়েছেন,মাইশা আপু এখন ইন্টার্নি করছে আমি এইচএসসি দিব।বাবাকে ঠিকাদারি কাজ করতে দেইনা মাঝে মাঝে নিউমার্কেট এর দোকানে যান নওশাদ চাচাই দেখেন সব কিছু,।আমাদের ১তালা বাড়িটিতে সামনের অংশে তিয়াশা আপু কোচিং দিয়েছেন৫ম থেকে ১০ম শ্রেণির । আর ভিতরের অংশে মা কিছু গরিব মহিলাদের দিয়ে আমার করা ডিজাইনে নকশি কাথা বুনান । ওগুল আমিই বিভিন্ন দোকানে নিয়ে অর্ডার নিয়ে আসি।কোচিং+নকশির হিসাব রাখার দায়িত্ত বাবা ও মায়ের।
ফুপা চলে যাওয়ার ২মাসের মাথায় ফুপু আসলেন মুরাদ ভাই সহ।এসেছিলেন নিজের কথা বলার জন্য এসে আরও দুঃখ বেড়ে যায় কারন এতদিনে ২টো বাড়িই উচু দেওয়াল দিয়ে ঘেরা আর বেরোবার রাস্তা সেই আগেরটাই। শুধু ভারাটিয়াদের জন্য রান্না ঘরের সাথে গেট করা হয়েছে অন্য কেও ব্যব হার করেনা।
শুনেছি ফুপু অনেক বার চেস্টা করেছেন চাচ্চু আর বাবার সাথে কথা বলার জন্য।মুরাদ ভাই নাকি খুবি অনুতপ্ত নিজের ভুল বুজতে পেরেছেন একটা ছোট চাকরি করছেন।চাচ্চু বাবা কে তার বাসায় যাওয়ার জন্য খবর দিয়েছিলেন কিন্তু বাবা ও মুখো হন নি।নাসিম ভাই অফিসে জোর করে রাংগা মাটি বদলি হয়ে সে ই যে গেছেন আর আসেন নি।
দিনকাল ভালই চলছিলো, একদিন রাত আনুমানিক ৩.০০টার সময় মায়ের ডাক শুনতে পেলাম তাও মায়িশা আপুকে ডকছেন।আমরা তিন বোন দৌড়ে গেলাম।বাবা জায়নামাজে কাত হয়েপ পরে আছেন মা বাবার মাথা কোলে নিয়ে বসে আছেন।আপু দেখেই বললেন হাসপাতালে নিতে হবে।এত রাত্রে?তিয়াশা’পু গাড়ির জন্য যেতে চাইলে মা বাধা দেন তোমরাথাকো, উপরে কাওকে নিয়ে আমি যাচ্ছি-ভয় পেয়না আল্লাহ র উপর ভরসা রাখ,উনি এত নিস্ঠুর না নিশ্চয় আমাদের সবার ফরিয়াদ শুনবেন।আমার মা এমোনি খুব ধিরস্থির।
বিপদে পড়লেই মানুষ চেনা যায়, কে আপন কে পর সবাইকে চেনা যায়।বাবার হার্টে রিং পরাতে হবে, নওশাদ কাকা নিজের বেতন দিয়ে দিলেন বলেন আমিতো একা তোমরা ছাড়া কে আছে? আমি তিন রাজকন্যার চোখে পানি দেখতে চাইনা।আল্লাহর কাছে দুয়া করো সবাই। আমি সবসময় পাশে আছি।কোচিং +নকশির টাকা মিলিয়ে বাবার চিকিৎসা র ব্যবস্থা হল।বাকি চাচা ফুপুরা না আমাদের খবর নিয়েছে না আমরা দিয়েছি। বড় অভিমানে বাবা কাওকে খবর ফিতে দিলেন না,পাশেই বড়চাচা থাকেন উনি টেরও পেলেন না।
বাবাকে রিলিজ দেওয়ার আগের দিন আমি আর মা বাসায় আসলাম -এক লোক কে দেখলাম কোচিং সেন্টার এর গেটে দারিয়ে উঁকিঝুকি দিচ্ছে।কে আপনি বলাতে পিছন ফিরার সাথেই চমকে গেলাম ছোট চাচ্চু।
ছোট চাচার মাধ্যমে বড় চাচ্চু সহ সবাই জানতে পারলো।
ছোটফুপু ও নাকি আসবে।চাচ্চু আমাদের সাথে যেতে চাইলে মা মানা করে দিল কারন ডাঃ বলেছে কিছুতেই যেন উত্তেজিত না হোন।
বাবাকে বাসায় এনে দেখলাম বড় চাচ্চু গেটের কাছে বসে আছেন আমাদের দেখেই বাবা কে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন আর নিজের এত দিনের কাজের জন্য বার বার মাপ চাইতে লাগলেন।
সিড়ি উঠানামা নিসেধ তাই আমরা নিচে চলে আসলাম অস্থায়ি ভাবে।একদিন নাসিম ভাই এসে হাজির হলেন,
এরমধ্যে ছোট ফুপুও আসলেন আর সোজা আমাদের বাড়ি এখানেই থাকবেন যে কয়দিন আছেন।
২চাচ্চু আর ফুপু মিলে নাসিম ভাইয়ের সাথে তিয়াশা আপুর বিয়ের কথা তুল্লেন,বড় চাচ্চু বাবাকে জরিয়ে ধরে বললেন আমার উপর রাগ করে বাচ্চাদের কস্ট দিসনা,
তিয়াশা মা এই টুকু জিবনে অনেক ঝড় সহ্য করলো, তুই অমত করিস না। আমি আমরা সবাই তিয়াশা র সাথে কথা বলেছি ও সব কিছু তোর উপর ছেরে দিয়েছে।তোর মেয়ে গুল আসলেও রাজকন্যা।বাবার মনটা প্রশান্তিতে ভরে গেল। তোদের উপর আল্লাহর রহমত পরেছে তাইতো এমন তিনটি রত্ন দিয়েছেন।
বাবা আরেকটু সুস্থ হতেই ঘরোয়া ভাবেই বিয়ে হল,তার কিছুদিন পর মায়িশা আপুর যে পছন্দের ডাক্টার ছিল তার সাথে আক্দ হয়ে থাকলো আর ছোট ফুপু বাবাকে বললেন যেহেতু আমার ডিজাইনের উপর খুব আগ্রহ তাই আমাকে ফুপুর সাথে নিয়ে যাবেন ওখানে ভর্তি করিয়ে দিবেন।আমরা সবাই শক্ ড । বাবাত বাবাই আমি নিজেই ত রাজিনা।।
অনেক তর্ক বিতর্কের পড় বাবা আমার চোখের পানিকে উপেক্ষা করে আমার সুন্দর ভবিষ্যতের চিন্তা করে রাজি হয়ে গেলেন। বড় ফুপুকে এদিকটায় আসতে নিসেধ করা হল প্রতি মাসে সবাই মিলে তাকে হাত খরচ দিবে তার একাউন্ট এ।ফুপুর যে ফ্ল্যাট আমাদের নামে দিয়েছিলেন সেটা র বাজার দর যাচাই করে ছোট চাচ্চু আর ছোট ফুপি সমপরিমাণ টাকা বড় ফুপুকে দিয়ে দেন।হাজার হলেও নিজের বোন নিজেদের রক্ত।সবাই মাপ করে দিলেন শুধু এ বাড়িতে আসা নিসেধ করা হলো।
অনেক কস্টের পর কিছুটা সুখ এসে মনে হয় ধরা দিল।
সমাপ্ত
Views: 8