আমরা তিন রাজকন্যা
__________✍রেহানা পারভিন
বড় আপুর বিয়ে ঠিক হওয়াতে আমরা ২বোন খুব খুশী হয়েছিলাম এটা ভেবে যে, দুলাভাই না! উনি আমাদের বড় ভাই হবেন।
আমরা ৩বোন বড়, আপু অনার্স ফাইনাল দিয়েছে রেজাল্টের অপেক্ষায়।
তিয়াশা আমার বড় আপু।
মায়িশা মেজো আপু।
এবার ভার্সিটি ভর্তি কোচিং করছে।
আর আমি পাপিয়া নিউ টেন।
পরিবারে আমি একটু বেশি আদরের।
শুধু মা মাঝে মাঝে চড়_থাপ্পড় দেন।
কিন্তু বেশির ভাগ সময় বড় ২আপুর জন্য বেঁচে যাই।
আমাদের ৫জনের সুখের পরিবার। খুব ধুম ধাম করেই আপুর বিয়ে হলো।
দুলাভাই ব্যাংকে চাকরি করেন। উনার পরিবারের বলতে গেলে সবাই গ্রামে থাকে।
শুধু উনার এক ভাই মেসে থেকে চাকরির চেষ্টা করছেন। আর দুলাভাই এক পরিবারের সাথে সাবলেট থাকেন।
আপুর বিয়ের পর সেই বাসাতেই নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অবশ্য দুলাভাই আলাদা বাসা নেন।
কিন্তু সমস্যা হয় দুলাভাই প্রায় ছুটির দিনে বাড়িতে যেতেন। তখন আমাদের ২বোনের একজনকে যেয়ে আপুর সাথে থাকতে হতো দুলাভাই না আসা পর্যন্ত।
মাঝে মাঝে আপু এসে আমাদের সাথে থাকতো!
এবার মেঝো আপুর পরিক্ষার জন্য আমায় যেতে হবে। যাওয়ার আগে হঠাৎ মেঝো আপা আমায় বললো দুলা_ভাইয়ের কাছ থেকে দূরে থাকবি।
অবাক হয়ে তাকালাম আমরা তো উনাকে ভাইয়া বলি।
কেন দূরে থাকতে বললো আপু?
মেঝ আপু বার_বার বলে দিলো অনেক রাতে যদি দুলাভাই আসে আমি পাশের রুমে সোফাতে যেন ঘুমাই।
কিছুই বুজতে পারলাম না।
ভাইয়া সাধারণত শনিবার বিকালে বা রাতেই চলে আসেন। সেবার রবিবার রাতে আসলেন।
আপুর খাট অনেক বড়। অনেক রাতে ভাইয়া আসলে আড়াআড়ি ভাবে আপু ভাইয়া একপাশে আর আপুর এপাশ দিয়ে কোলবালিশ দিয়ে আমি ঘুমাই।
সেদিন রাতে ঘুমের মাঝে মনে হল কেও আমার পেটে হাত বুলাচ্ছে! আপু নাহ। আপুর স্পর্শ তো এমন না! তাহলে কি…..!
সাথে সাথে জমে গেলাম। নড়াচড়া করার সাহস হারিয়ে ফেললাম। নিস্তেজ হয়ে পরে রইলাম। নিঃশ্বাস নিতেও ভয় হচ্ছে! যদি বুঝে যায় জেগে গেছি আমি! বুঝতে অসুবিধা হলো না! এজন্যই মেঝো আপু সতর্ক করেছিলো।
খুট করে শব্দ হওয়াতে কেও তাড়াতাড়ি নিজের জায়গায় চলে গেলো।
সকালে উঠে উনাকে দেখে বললাম, আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া! কাল রাতে কখন এসেছো? ডাকোনি কেন?
~তুই ঘুমাচ্ছিলি তাই। কথাটা বলে ভাইয়া অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হলো।
প্রতিবার আপুর সাথে বাসায় যাওয়ার পথে অনেক গল্প হয়, কিন্তু আজ কেন যেন কোন কথাই বলতে পরছিনা! শুধু কান্না আসছে। আপুও কিছু জিজ্ঞাসা করলো না।
বাসায় আসার পর আপু আমাদের ২বোনকে নিয়ে ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
বলতে লাগলো,বিয়ের আগে আমরা ৩জন কখনও কারো কাছে কথা লুকাতাম না।
আজ আমার বিয়ে হয়ে যাওয়াতে কি পর হয়ে গেছি! তোরা আমায় এতটা পর করে দিয়েছিস??
(আপুর কথায় ২বোন অবাক হয়ে তাকালাম।কিছুই বলার নেই তোদের না? আমায় কি তোরা খুব দূর্বল ভাবিস! যে, আপুকে সত্য বলে দিলে কষ্ট পাবে? আপুর সংসার ভাংবে?
তোরাই তো বলিস আমি খুব স্ট্রং! তোদের আপু নই! বড় ভাই আমি ।
একটু থেমে দম নিলো সে। না চাওয়া চোখের পানি মুছে নিয়েই তিয়াশা বললো,
পাপিয়া কেন বললি না ওই ব্যাংকারের চরিত্রে দোষ আছে!
চমকে গিয়ে বললাম আপু তুই কি বলছিস?
হ্যাঁ আমি অনেক কিছুই জানতে পেরেছি, ভাগ্যিস আমার চোখে পরেছে। তা,না হলে তো আমার সুখের কথা ভেবে মুখ খুলতি না!
আমাদের ২জন কে বুকে জড়িয়ে ধরে আপু বললো, যা কিছু হোক, আমার পরিবার সবার আগে আমার কাছে।
আমি জানতে পেরেছি বড় ফুপু আগে থেকেই সবটা জানতেন। তোদের মনে আছে?
আমার বিয়ের পরে যে বাসায় সাবলেট থাকতো জহির(আমার দুলাভাই)!
বিয়ের পরের দিনই ওই বাসা ছেড়ে দিয়ে আমাদের বাসায় এসে থাকতে হয়েছিলো যে পর্যন্ত বাসা পাওয়া যায়নি।
ওই বাসার মহিলার সাথে জহিরের সম্পর্ক ছিলো, যা তার স্বামি হাতেনাতে ধরেছিলো।
ওই ভাইয়ার সাথে আমার ৪দিন আগে দেখা হয়েছিলো চারুকলার সামনে।
বড় ফুপুর কথা মনে হতেই তিন বোনই অতীতে ফিরে গেলাম।
আব্বুরা ৩ভাই, ২বোন।
বড় চাচার ১মেয়ে, ১ছেলে।
চাচ্চু অডিট (অডিট মন্ত্রনালয়ের)
সুপার।
মেঝো চাচা মালয়েশিয়ায় পরিবার সহ থাকে। ছোট চাচ্চু, তারও ২ছেলে । উনি রাজশাহী থাকেন চাকরি সুত্রে।
আমার বাবা ছোট। বড় চাচার পরে বড় ফুপু।
উনার ১ছেলে, যে কিনা মায়ের আদরে বাঁদর হয়েছে।
আরেক ফুপু মেঝো চাচার পরে।
উনিও ইন্দোনেশিয়া থাকেন। যতদিন দাদি বেঁচে ছিলেন! দেশে এসেছেন।
দাদির মৃত্যর পর আর আসেন নি।
দাদা মারা যাবার আগে ছেলে মেয়েদের মধ্য সম্পত্তি ভাগ করে দিয়ে যান।
ইসলামি আইন অনুযায়ী ভাইদের অর্ধেক বোনেরা পাবে। সেভাবেই ঠিক ছিলো।
কিন্তু দাদা, দাদি গত হওয়ার পরেই বড় ফুপু ঝামেলা বাঁধান।
বড় চাচা (অডিটের) প্রায়ই অফিস ট্যুরে যেতে হয়। আর বাবা সড়ক ও জনপথের ঠিকাদার হওয়ায় বেশির ভাগ বিভিন্ন জেলায় কাজ পরতো।
নিউ মার্কেটে আমাদের একটা ওষুধের দোকান আছে, যা আমাদের গ্রামের দূর সম্পর্কের চাচা, বাবার অবর্তমানে দেখাশুনা করেন। খুবই বিশ্বস্ত।
সেবার বাবা ও চাচা ঢাকার বাহিরে ছিলেন। হঠাৎ একদিন বড় ফুপু লোকজন নিয়ে এসে আমাদের জায়গায় দেওয়াল উঠানোর কাজ শুরু করেন।
আমরা তখন বড় চাচার সাথে থাকতাম, আর বাড়িতে সেদিন বড় চাচিও ছিলেন নাহ।
মা, বাঁধা দিয়েও কিছু করতে পারেন নি।
উল্টো অপমানিত হয়েছেন।
বড় চাচার ছেলে নাসিম ভাইয়াও বন্ধুদের সাথে বেড়াতে গিয়েছিলেন।
ফুপু এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছিলেন।
তখন তো এমন মুঠোফোন ছিলো না।
ছিলো শুধু ল্যান্ড ফোন। সবাই যখন আসলো! ততদিনে বাউন্ডারি দেওয়াল দেওয়া শেষ।
সাথে পিলার গাঁথাও শেষ।
ফুফুর একই কথা। বাবুলের (আমার বাবা) তিন মেয়ে ও এত সম্পত্তি দিয়ে করবে?
বিয়ে দিলেইতো মেয়েরা পরের বাড়ি চলে যাবে!
তোরা ২জনে এত জায়গা দিয়ে কি করবি?আর আমার জায়গায় ত নিচতলা শেষ হয়েছে তোরা ওখানে উঠে যা, উপরের ফ্ল্যাট গুল হলে ২টো বাকি ২ইমেয়ের নামে লিখে দিব।
এবার একটা প্রস্তাব রাখলেন। আমার তো একটাই ছেলে! তাই ভাবছি তিয়াশার সাথে মুরাদের বিয়ে দিবো।
ঘরের মেয়ে ঘরেই থাকলো। বড় চাচা এটাতে মত দিলেন। বাবা কে বললেন, আমার কাছে ভালই লাগছে, তুই না করিস না। বড় চাচা এমনি দায়িত্ত এরাতে সবার হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলান।
আর আগামি ১সপ্তাহের মধ্যে জমির কাগজ পত্র ঠিক করে নিবো।
রাগ করিস না ভাই আমার! নিজেদের ভিতরে ঝগড়াঝাটির কি দরকার!
বাবা কখনো বড়দের মুখের উপরে কথা বলেন না।
শুধু বললেন বিয়ের ব্যাপার আমার মেয়েদের সাথে কথা বলে নেই। ঠিক আছে বলে ফুফু বললেন, যেহেতু ১তালা কমপ্লিট তুই আমার বাসায় উঠে যা।
চলবে…….
Hits: 0