ম্যাসেজ ফ্রম কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল
-ডাঃ আহমেদ জোবায়ের
কাতার বিশ্বকাপে আমি মাত্র তিনটি খেলা দেখলাম এতগুলো ম্যাচের মধ্যে।
ব্রাজিল বনাম ক্রোয়েশিয়া কোয়ার্টার ফাইনাল।
আর্জেন্টিনা বনাম ক্রোয়েশিয়া সেমি ফাইনাল।
আর্জেন্টিনা বনাম ফান্স ফাইনাল ম্যাচ।
পুরো খেলা জুড়ে মাত্র একদিন একটা পোস্ট দিয়েছিলাম।
সেখানে লিখেছিলাম, ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলবে কোন দল এমন প্রশ্ন রেখেছিলাম।
গতকাল সারাদিন আমার সেই প্রেডিকশন মনে রেখেছিলেন আমার বার্থডে মেট,বন্ধু ও আপা Monjury Jahan.
সে কমেন্ট করে সেটা জানিয়েছিলো গতকাল।
আমি অত খেলা পাগল নই। খেলা দেখিও না।
কিন্ত খেলার ব্যাপারে বেখেয়ালও নই।সব খোঁজ খবরই রাখি।সেভাবে হয়তো খেলা দেখিনা।
ছোট্ট বেলা থেকে ফুটবল খেলা যখন বুঝতে শিখলাম, আমি কিভাবে আর্জেন্টাইন ফ্যান হয়ে গেলাম জানিনা।
দিয়েগো ম্যারাডোনাকে দেখলেই কেমন শান্তি শান্তি লাগতো।
ম্যারাডোনার প্রতি ভালবাসা কিভাবে জন্ম নিলো তার ব্যাখ্যা জানা নেই।
তারপর স্টুডেন্ট লাইফ থেকে ফুটবলের বিশ্বকাপ আসর গুলো দেখতাম।
আর্জেন্টিনার হাতে কাপ দেখবো এই আশায় আশায় অনেক বেলা গড়ালো।
অনেক মানুষ ৩৬ বছর অপেক্ষা করে গেছেন।
প্রতিবারই স্বপ্ন জাগিয়ে তারপর একবুক হতাশা নিয়ে বাড়ি ফেরা।
২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরে যাওয়া।
যারা আর্জেন্টিনার ফ্যান তারা অকৃত্রিম ভাবেই এই টিমটাকে লালন করেন।ভালোবেসে গেছেন কোন প্রাপ্তি ছাড়া।
এত হতাশা,এত কটুকথা সয়ে গিয়েও ভালবাসার টিমের প্রতি ভালোবাসার কমতি দেখা যায়নি তাদের।
আমি কিছু ম্যাসেজ দিতে চাই কাতার বিশ্বকাপ থেকে।
আমার কিছু মূল্যায়ন আমি জানাতে চাই।
লিওনেল মেসি
ফুটবলের ইতিহাসে একজন শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়। পেলে, ম্যারাডোনা জিদানের পাশাপাশি লিওনেল মেসি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন ফুটবল ইতিহাসে।
তার জীবনে অনেক এচিভমেন্ট।
অনেক প্রাপ্তির পরেও সবচেয়ে বড় প্রাপ্তির অপূর্ণতায় ভুগেছেন তিনি অনেক বছর.।
স্বপ্ন অধরা রয়ে গেলো অনেক বছর।
কিন্ত মেসি আশা ছাড়েননি।হাল ছাড়েননি।
শুধু আশা করেই মেসি বসে থাকেননি,নিজের স্বপ্নকে পূর্ণ করতে লড়েছেন শেষ মুহুর্ত অব্দি।
এই যে মেসির লড়াকু মানসিকতা তা থেকে আমাদের জন্য শিক্ষা আছে।
জীবনে বিজয়ী হতে হলে লড়ে যেতে হবে।
বারবার হোচট খাবেন,হতাশা জাগবে কিন্ত আশা ছেড়ে দেওয়া যাবেনা।
শেষ মিনিট অব্দি লড়ে যেতে হবে।
এই লড়ে যাওয়াটাই আপনাকে অনন্য করে তুলবে যেভাবে লিওনেল মেসি আজ অনন্য।
লিওনেল মেসি
ফুটবলের এক জাদুগর।
সারা দুনিয়ায় যার কোটি কোটি ভক্ত।
মেসির মুখে হাসি দেখলে কোটি মানুষ হাসে,মেসির চোখে অশ্রু দেখলে কোটি মানুষ কাঁদে।
ফুটবলের ইতিহাসে মেসি নাম উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে।
কিন্ত খেয়াল করেছেন কি এই মানুষটার হেটার্স কিন্ত কম ছিলো না।মেসি কে নিয়ে নোংরা ট্রল করা লোকের সংখ্যাও কিন্ত অনেক।
এত ভালো খেলোয়াড় হবার পরেও মেসিকে অপছন্দ করতেন অনেকে।
মেসিকে বাজে ভাবে আক্রমণ করতেন অনেকে।
এই বিষয়টা থেকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাসেজ নিতে পারি।
আপনাকে অন্য মানুষ কিভাবে মূল্যায়ন করেন,পছন্দ না অপছন্দ করেন, ভালোবাসেন না কটুকথা বলেন তাতে আপনার আমার কিছু যায় আসেনা।
যেটা ম্যাটার করে তা হলো Distracted না হয়ে নিজ লক্ষ্যে নিজ পরিকল্পনায় নিজ স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখতে লড়াই করে যাওয়া।
মেসিকে অপছন্দ করার মতো একটা ভ্যালিড রিজন না থাকার পরেও মেসির কোটি কোটি হেটার্স।
সুতরাং কেউ আমাকে আপনাকে অপছন্দ করলে আমাদের বিষন্ন হবার কিছু নেই।
আপনাকে কেউ দেখতে পারেন না,পছন্দ করেন না,আপনার নাম শুনলেই কটু কথা বলেন,কুৎসা রটান আপনার নামে, এসব গায়ে মাখতে নেই।এগুলো খুব নরমাল।
এগুলো মেনে নেওয়ার শিক্ষা আপনি নিতে পারেন মেসিকে দেখে।
তারপর খেয়াল করুন ফাইনাল ম্যাচটা।
আপনি যখন আপনার জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত, আর মাত্র দশ মিনিট পরেই আপনি বিজয় উল্লাসে মেতে উঠবেন,ঠিক সেসময়ই আপনার জয় অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে।
পাশার দান উলটে যেতে পারে।
মুহুর্তেই আপনার মুখের স্মিত হাসি মিলিয়ে গিয়ে সেখানে প্রচন্ড উৎকন্ঠা, টেনশন চলে আসতে পারে।
কিন্ত হতাশ না হয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে শেষ অব্দি লড়ে গেলে আপনি শেষ হাসিটা দিবেন এটা বলা যায়।
আরেকটা বিষয় দেখুন
ম্যাচের ৮০ মিনিট এমবাপ্পে কে খুঁজে না পেলেও ৮০ মিনিট থেকে সে যেভাবে জ্বলে উঠেছে, নিশ্চিত পরাজয় থেকে আশা জাগিয়ে তুলেছে।লড়াই করেছে শেষ অব্দি এটাও বেশ রোমাঞ্চকর।
এমবাপ্পে যখন ম্যাচের প্রথম ৮০ মিনিট নিষ্প্রভ তখন অনেকেই তাকে ট্রল করেছে।
আমিও করেছি।
সেই এমবাপ্পে সেই ম্যাচে হ্যাট্রিক করলো।
গোল্ডেন বুট জিতে নিলো
প্রতিপক্ষকে চরম অশান্তি ও উৎকন্ঠায় ফেলে দিলো।
তারমানে আপনি শিক্ষা নিতে পারেন,আপনি এখন ব্যাকফুটে আছেন, কিন্ত আপনিও যেকোনো মুহুর্তে জ্বলে উঠতে পারেন।
আপনিও গেম চেঞ্জার হয়ে উঠতে পারেন।আপনিও ফুরিয়ে যাননি এটা আপনি দেখাতে পারেন যেকোনো সময়ে।
প্রয়োজন লড়াইয়ে শামিল থাকা।খেলা টা খেলে যাওয়া।
মোক্ষম সুযোগের সঠিক ব্যবহার করতে পারা।
তারপর দেখুন সৌদির মতো টিমের সাথে হেরে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করলো যেই টিম,তারাই গতকাল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলো।
তারমানে আমাদের জীবনেও হার দিয়ে খেলা শুরু হতে পারে কিন্ত খেলাটা খেলে গেলে জয়টা আপনার হতেও পারে।
কেউ আপনাকে অপছন্দ করেবেন কোন কারণ ছাড়াই, কটু কথা বলবেন আপনাকে নিয়ে, এতে মন খারাপ করবেন না।
লিওনেল মেসির হেটার্স কোটি কোটি।
আপনি আজ ব্যাকফুটে থাকলেও আপনিও খেলায় ফিরতে পারেন।
আপনিও আশা জাগানিয়া লড়াই করতে পারেন।আপনিও জয়ের স্বপ্ন জাগাতে পারেন।
এমবাপ্পে যেভাবে আশা জাগানিয়া লড়াই করেছে।
সেটাও কিন্ত প্রশংসনীয়।
খেলার মতো জীবনেও আপনি সবদিন জিতবেন না এটা মেনে নিতে হবে।
ফ্রান্স যেভাবে খেলায় ফিরেছে,তারপর যেভাবে লড়াই করেছে,তারাও জিততে পারতো।
কিন্ত একদিনে সবাই জিতে না।
গতকাল ছিলো মেসির দিন।আর্জেন্টিনার দিন।
কিন্ত এমবাপ্পের দিনও আসবে।
আমরা এটা থেকে এই শিক্ষা নিতে পারি, হার মেনে নিতে হয় লড়াই করে।
একটা দিন হয়তো আপনার জন্য না।সেদিন লড়াই করে হার মেনে নিলেও আপনার দিনও আসবে।আপনিও বিজয় উল্লাস করবেন একদিন।
কাতার বিশ্বকাপ
স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
Views: 14