অপালার ডায়েরি
____নাহিদ ফারজানা সোমা
ধারাবাহিক গল্প (১ম পর্ব)
বাসা পাল্টানো কি যে কঠিন কাজ! আমার গায়ে অতোটা লাগেনা কারণ স্বামী খুবই নিরলস ও পরিশ্রমী। কাজকর্মেও খুব পটু। গুছিয়ে দক্ষ ভাবে কাজ করতে জানে। এছাড়া লোকবল আছে। কিন্তু তারপরও আমার হাঁপ ধরে যায়। কি এলোমেলো চারিদিক, বিশৃঙ্খল পরিবেশ।
চৌদ্দ বছরের নয়ন উঠেছিলো রান্নাঘরের উপরে থাকা স্টোর রুমে। দরকারি কিছু পড়ে থাকলো কিনা দেখে নিতে। উপর থেকে গলা বাড়িয়ে নয়ন জানালো কতোগুলো বই পড়ে আছে একেবারে কোণায়।
ওখানে বই থাকবে কেন? বইপত্রের বিষয়ে আমি খুবই সংবেদনশীল। হাজারের ওপরে ভালো ভালো বই আছে আমার।
নয়ন একটা বড় ও মোটা বাঁধাই করা খাতা দেখালো। এরকম সাতটা “বই” আছে ওখানে।
নামাতে বললাম। সাতটা বাঁধাই করা শক্ত-পোক্ত খাতা। আমাদের নয়। কাদের তাহলে? আমাদের আগে যাঁরা এই বাসায় থাকতেন, তাঁদের? উনাদের সাথে আমার আলাপ পরিচয় আছে। প্রতিটা ধূলি ধূসরিত খাতার উপরে একটা শব্দই লেখা আছে। “অপালা।” কিন্তু ঐ পরিবারে অপালা নামের কেউতো আমার জানামতে নেই।
তবু ফোন করলাম আমাদের আগের ভাড়াটের কাছে, বাড়িওয়ালার কাছে। না,কেউ অপালা বলে কাউকে চিনে না। খাতাগুলো নিয়ে কারোর আগ্রহ নেই।
নয়নকে দিয়ে খাতাগুলো ভালো করে মুছিয়ে আমি সেগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলাম ও কিছুক্ষণের মধ্যে বুঝতে পারলাম এগুলো অপালা নামের অজানা মেয়েটির রোজ নামচা। আশ্চর্য তো! কেউ নিজের ডায়েরি ফেলে রেখে যায়? তাও রান্নাঘরের ওপরের স্টোর রুমের ভেতরে?
অভি বললো,”অন্যের পার্সোনাল ডায়েরি , তাও আবার সাত সাতটা,তুমি বেঁধে ছেদে নিচ্ছ কেন? অন্যের ডায়েরি পড়া ভদ্রতার মধ্যে পড়ে না।”
“আরে,অপালা বলে কাউকে খুঁজেই তো পাওয়া যাচ্ছে না। এগুলো ফেলে দিবো নাকি? দেখি আরেকটু খোঁজ খবর করে।”
“খোঁজ খবর করো,কিন্তু পড়ো না। সেটা ঠিক না।”
কিন্তু আমি প্রতিটা খাতা থেকেই কয়েকটা পৃষ্ঠা পড়ে ফেলেছি অভি বলার আগেই।
অপালার সন্ধান পাওয়া গেলো না। আগের ভাড়াটিয়ারা বললেন, কিচেন আর দুই বাথরুমের স্টোর রুমগুলো ওঁরা খালি করেছিলেন, কোনো খাতাপত্র চোখে পড়েনি।
সাতটা শক্ত পোক্ত খাতা আমার নিজের সম্পদ হয়ে গেলো। নতুন বাসায় উঠে গোছগাছের ফাঁকে ফাঁকে ডায়েরি পড়ি। লেখাগুলো মুক্তোর মতো সুন্দর। এটাকে ডায়েরি বলবো না জীবন কাহিনী, বুঝতে পারছি না।কোথাও কোনো তারিখ দেওয়া নেই। কাজেই খাতাগুলোর সিরিয়াল করা যাচ্ছে না।
বিসমিল্লাহ বলে একটা খাতা টেনে নিয়ে প্রথম হতে পড়া শুরু করলাম।
অপালার ডায়েরি ১
…………………………
মাথাটা গরম হয়ে আছে। তাজিন বললো রুমটা নতুন করে ডেকোরেট করতে হবে। বাকি তিনজনও লাফাতে লাগলো। ওদের চিন্তা কি? বাসা থেকে যথেষ্ট টাকা পায়। ওরা ইচ্ছা হলেই বাইরে যেয়ে খেতে পারে, দল বেঁধে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেতে পারে, আজ বিরুলিয়া,কাল নন্দন পার্ক,পরশু পুরানো ঢাকায় যেয়ে হাজীর বিরিয়ানি। একটা না একটা কিছু চলছেই। চলুক,কিন্তু আমাকে নিয়ে টানাটানি করিস না ভাই। তোদের মতো থোকা থোকা টাকা আমার হাতে নেই। মধ্যবিত্ত পরিবার আমাদের। পাঁচ ভাইবোন। সবার বড় আপা,সে মেডিকেলে পড়ে, বেচারি বাসা থেকে খুব অল্প টাকা নেয়। আমার পরের ভাইটা এবারে বুয়েটে চান্স পেলো। তার ভর্তি, পড়াশোনা আর হোস্টেল খরচ। এরপরে জমজ দুই বোন অনিমা-অরুনিমা। ইন্টারমিডিয়েট দিবে। পাঁচ ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, হোষ্টেল খরচ, দাদার বাড়িতে নিয়মিত খরচ, বাবা-মা আর কতো করবেন?আমি ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ি, বছর দেড়েক আগে হোষ্টেলে উঠেছি। পড়াশোনা, বন্ধুদের সাথে গল্পগাছা, দুই তিন মাস পরপর বাড়ি থেকে ঘুরে আসা, মাঝেমধ্যে বন্ধুদের সাথে বেড়ানো,ভেবেছিলাম এই হবে আমার হোষ্টেল জীবন। কিন্তু বাস্তব অতো মসৃণ হলো না। আমার তিন রুমমেট সব বই কিনে,পড়ুক আর না পড়ুক। আমি লাইব্রেরিতে যেয়ে পড়ি। ওরা হাসে। “বই কিনলে ক্ষতি কোথায় তোর?বই কিনে দেউলিয়া হয় না কেউ।”
ওরা বুঝে না, সব বই কিনতে গেলে বাবা-মায়ের উপর বড় একটা চাপ তৈরি করা হবে। দরকার কি এতো কিছু কেনার যখন লাইব্রেরিতে সব পাওয়া যায়? ওরা বলে,”এতো কিপটা তুই অপালা। ”
তাজিন মাঝে মধ্যে খাবার নিয়ে ঘরে ফিরে। হাজির বিরিয়ানি নইলে মিস্টার বেকারের কেক, কখনো নান্নার মোরগ পোলাও, নান রুটি তন্দুরি, পরিমাণে যথেষ্ট। বন্ধু বান্ধবীদের সে ক্যান্টিনেও দেদারসে খাওয়ায়। উদারতার জন্য সে বিখ্যাত। সবাই বলে ওর মনটা খুব বড়,আকাশের মতো। ওর বাবা চট্টগ্রামের বড় ব্যবসায়ী। ও চট্টগ্রামে প্লেনে আসা যাওয়া করে। ও বাসা থেকে অনেক টাকা আনে। আমার মতো আড়াই হাজার না।
আরেক রুমমেট নায়লা। তারই বাতিক উঠে নানারকম। হোষ্টেলে প্রথম ওঠার পরপরই ও যখন ফ্রিজ কেনার টাকা চাইলো, আমার মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার অবস্থা।
“ফ্রিজ লাগে একটা। ডাইনিং এর খাবার মুখে দেওয়া যায় নাকি? আম্মু প্রতি সপ্তাহে খাবার পাঠাবে। ”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ, ফ্রিজ খুব দরকার। আমি ঠান্ডা পানি ছাড়া খেতে পারি না। আমার আম্মুও খাবার পাঠাবে। ইতু, তোর কি মত?”
” অবশ্য ই। আমি নিজেই কিনতাম। ফ্রিজ ছাড়া চলবে না। আমরা চার রুমমেট সমান টাকা দিবো।”
আমার দমবন্ধ হয়ে আসছিলো। ওরা যে ফ্রিজটা কিনতে চায়,তার দাম ষাট হাজার। তারমানে আমাকে দিতে হবে পনেরো।
আমি বলেছিলাম, “আমি ফ্রিজ ব্যবহার করবো না। হোষ্টেলে পড়তে এসে ফ্রিজ কেনা আমার বিলাসিতা মনে হচ্ছে। আমাকে মাফ করো।”
” রুমমেটরা সবাই সবকিছু শেয়ার করে কিনবে,এটাই নিয়ম। তুমি টাকা দিবে না কেন? সব রুমেই ফ্রিজ আছে। ফ্রিজ বিলাসিতা না,অবশ্য প্রয়োজন। ”
“আমাকে মাফ করো। আমার সামর্থ্য নেই। ”
“আশ্চর্য! হোষ্টেলে এসেছো, ফ্রিজ লাগবে না? তোমার বাবা-মাকে বলে দেখো একবার।”
“আমি বলবো না। বললে উনারা যেভাবে পারবেন,ম্যানেজ করবেন, কিন্তু প্রেশার যাবে খুব।”
“রেডিকিওলাস।”
ওদের ফ্রীজে আমি এখন পর্যন্ত হাত দিই নি।কিন্তু ঝামেলা একটা না একটা বেধে আছে।
“পুরো রুমে ম্যাট দিবো।এটার চাঁদা সবাইকে দিতেই হবে।”
“পর্দাগুলো পাল্টানো দরকার। খুব সুন্দর পর্দা দেখে এসেছি। তোরা রাজি তো?”
ঘর ঝাড়ামোছার জন্য এক খালা, কাপড় কাচার জন্য আরেক খালা।
“আমার কাপড় আমি কেচে নিবো।”
“তুই এতো কিপটা কেন রে?”
আপাকেও একই সমস্যাগুলো ফেস করতে হচ্ছে নিদারুণ ভাবে।
এছাড়াও আরও অনেক ফ্যাসাদ। এর জন্মদিন, ওর জন্মদিন লেগেই থাকে। কে কি উপহার দিলো তা নিয়ে আলোচনা হয়। মানুষের মনের ঔদার্য উপহারের দাম দিয়ে বিচার করা হয়।
রুমমেটদের বাসা থেকে প্রচুর খাবার আসে। রান্না করা মাছ,মাংস,সব্জি, মিষ্টি, পেস্ট্রি, আরও অনেক কিছু। ওরা নিজেরা খাওয়ার সময় আমাকেও নিতে বলে একবার,আমি সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করি।
প্রায়ই তিনজন একই রকম সালোয়ার কামিজ বানায়। সেদিন একই রকম জামদানি শাড়ি কিনলো। আমাকে প্রায় বলে,”তোকে বললে তো আবার প্যাঁচাল পাড়া শুরু করবি,তাই বলি না। ”
ওরা প্রায় এটা সেটা নিয়ে আসে।খাই বা না খাই, পাল্টা একবার দু’বার খাওয়ানোর প্রসঙ্গ চলে আসে। আমি হিটারে খিচুড়ি, বেগুন ভাজা,ডিম ভাজা করে খাওয়ালাম একদিন। ওরা হৈচৈ করে খেলো। হাসতে হাসতে বললো,”যাক,কঞ্জুসের থেকে দুইটা টাকা হলেও খসাতে পারলাম।”
অথচ প্রায়ই আমি তাদের চা বানিয়ে খাওয়াই, মুড়ি মাখিয়ে খাওয়াই, সিঙ্গাড়া সমুচা খাওয়াই। আমার মা আচার বানিয়ে বড় বড় বয়ামে পাঠান, ওরা প্রায়ই খাবলা মেরে মেরে খায়।
ওয়াটার হিটার দিয়ে পানি ফুটিয়ে খেতাম আমরা। ওদের ইচ্ছায় একটা ফিলটার কিনতে হয়েছে।
এতো মানসিক চাপ আমি নিতে পারছি না। একটা টিউশনি করি। বাবা আড়াই হাজার টাকা পাঠান। এই টাকা দিয়ে মাস চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে । আজ যেমন চাঁদা দিতে হলো। হলের নেত্রীর জন্মদিন। তাই সাধারণ ছাত্রীরা ভালো খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করবে,আবার নেত্রীর জন্য উপহার কিনবে। দামী জামদানি, গুচির ব্যাগ, ভালো ব্রান্ডের বিউটি বক্স, দামী পারফিউম, এক ডজন লিপস্টিক, এক সেট সালোয়ার কামিজ এবং একটা আইফোন। নেত্রী নিজেই উপহারের ব্যাপারে দিক নির্দেশনা
দিয়েছেন। বিশালাকার কেক আনা হবে, রাতে ফিস্ট হবে, ফখরুদ্দিনের বিরিয়ানি, রোষ্ট,রেজালা, ফালুদা। খরচের যোগানদার আমরা। মোটা অংকের চাঁদা দিতে হলো,নইলে হলে টেকা যাবে না। কি অসহনীয় বিষয়গুলো!
কবে যে পাশ করে বের হবো! একটা চাকরি বা ব্যবসা করবো। বাবা-মা’কে সুখী ও নির্ভার দেখবো। পরম আকাঙ্খিত এই দিনগুলো কত দূরে?
আদিব বুয়েটের হোষ্টেলে বড় কষ্টে আছে। ভর্তি হতে না হতেই তিনটা টিউশন জুটিয়ে নিয়েছে। ভাইটা আমার ছোটবেলা হতে ভারি চুপচাপ, শান্ত শিষ্ট। নিজের ভাই বলে বলছি না, অসম্ভব ভালো একটা ছেলে। ছোটবেলা হতেই মন দিয়ে লেখাপড়া, বিকেলে মাঠে বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলা, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, তিরিশটা রোজা, দুই টাকা হাতে থাকলে এক টাকা অন্যের জন্য খরচ। আমার সেই ভাইটা বড্ড কষ্টে আছে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন মাত্রা ছাড়া বিবেকহীন। সব ছাত্র সংগঠনের একই অবস্হা। বিষাক্ত রাজনীতি সবকিছুকে পচিয়ে দিয়েছে। বুয়েটের ছাত্র নেতা ও কর্মীরা বড্ড জ্বালায় সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের। আদিবকে তাদের তোষামোদ করে চলতে হবে,নইলে তাকে হোস্টেল তো বটেই, বুয়েট ক্যাম্পাস ই ছাড়তে হবে। ছাত্ররা ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে আদিবকে হুজুর বলে ডাকে। কেউ ডাকে কাঠ মোল্লা। তাদের দেওয়া নামের ভীড়ে আদিব নামটাই হারিয়ে গেছে।সেদিন আসরের নামাজের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছিলো। আদিব নামাজে দাঁড়িয়েছে, এমন সময় এক চামচা এসে তাকে কোনো এক ছাত্র নেতার সাথে দেখা করতে বলে।আদিব বিনয়ের সাথে বলে আসর-মাগরিব দুই নামাজ শেষ করেই সে নেতার সাথে দেখা করতে যাবে। এই ঘটনা নিয়ে চরম ভুগতে হয়েছিল আমার ভাইটাকে। নেতা বলেছিল, “শালা,তোর এতো বড় সাহস,আমি ডাকার একঘন্টা পরে আসলি?তেল বেশি বেড়ে গেছে? একদিন নামাজ না পড়লে হয় না?” ওখানে উপস্থিত আরেক নেতা বলেছিল, ” এইসব ভণ্ড হুজুর ঢের দেখা আছে। এগুলো হয় মিচকা শয়তান। ভাইয়ের পা ধরে মাফ চা শালা” এবং তার সাথে অশ্রাব্য , অশ্লীল এক গালি। আদিব ঠান্ডা গলায় বলেছিল, “মাফ চাওয়ার মতো কোনো অন্যায় আমি করিনি। অবশ্য ই আপনাদের সাথে দেখা করার চাইতে নামাজ আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর আপনি এতো কুৎসিত গালি আমাকে দিলেন,এতে আপনি আমার না,আপনার নিজের সম্মান নষ্ট করলেন। আল্লাহ আপনাকে হেদায়েত করুন।” কথা শেষ হওয়ার আগেই প্রকান্ড এক চড়। “এতো সাহস তোর,জ্ঞান দিতে আসিস, জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো তোকে আজকে।দেখি,কে তোকে বাঁচাতে আসে?” বদমাশটা আবার মারতে যাচ্ছিলো আরো হিংস্র হয়ে, বড় নেতা তাকে থামালো। আদিবকে বললো,” আমি বলে তোর বেয়াদবি মাফ করলাম। কিন্তু ভবিষ্যতে মাফ করবো না। ডাক দেওয়ার সাথে সাথে পোষা কুত্তার মতো চলে আসবি। ”
“ভাই, আমি মফস্বলের খুব সাধারণ , মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। ভালে ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই, বাবা-মায়ের কষ্ট দূর করতে চাই।আমার আরও চারটা ভাই বোন আছে।সবাই ছাত্র ছাত্রী। বড় আপা ময়মনসিংহ মেডিকেলে,ছোট আপা ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ে। ছোট দুই বোন ইন্টার পড়ে। আমি তিনটা টিউশন করি ভাই। ইচ্ছা থাকলেও আপনি ডাকার সাথে সাথে আমি কেমন করে হাজির হবো ভাই? ”
“ক্যাম্পাসে যখন থাকবি,আমরা কেউ ডাকলে চলে আসবি। আর বুয়েটে পড়তে এসে এতো নামাজ কালাম কেন রে? শালা হিপোক্র্যাট। বিজ্ঞান ও বিশ্বাস করবে আবার পাঁচ বার জায়নামাজে মাথা ঠুকবে। এসব মোল্লাগিরি আমার হলে চলবে না।”
প্রোভোস্টকে বলে কোনো লাভ নেই। তিনি পারলে ছাত্রনেতাদের মুখে তুলে খাইয়ে দেন। ঢাকায় এমন কোনো স্বজনের বাড়ি নেই, যেখানে আদিব থাকতে পারে। বাড়িভাড়া করে থাকার সামর্থ্য আমাদের নেই। একবার ভেবেছিলাম, দুই ভাই বোন হোষ্টেল ছেড়ে একটা ছোট রুম ভাড়া নিবো নইলে আজিজ সুপার মার্কেটের উপরে রুম ভাড়া নিবো। সেখানেও হাজার সমস্যা। তাছাড়া হলের বাইরে থাকলেও আদিব রেহাই পাবে না, নেতারা বলে দিয়েছে বুয়েটে পড়তে গেলে সবসময় তাদের পায়ে পায়ে থাকতে হবে।
আদিবের উপরে নির্যাতনের কথা ওর মুখে শুনি নি। বাবার এক বাল্যকালের বন্ধুর ছেলে আদিবের সাথেই পড়ে,একই হলে থাকে,সে আমাকে এসে বলে গিয়েছে। বেঁচে থাকার তাগিদে বেচারা নেতাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলে। ঠিক মতো পড়তে পারেনা,ক্লাস মিস করতে হয় প্রায় নেতাদের নির্দেশে, ডাইনিং -ক্যানটিনে এদের জন্য ভালো ভালো খাবার বরাদ্দ, বাকিদের খাওয়ার খুব খারাপ অবস্হা। বেচারা রিফাত কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,”আপা,বুয়েট নিয়ে তো কখনো কোনো খারাপ কথা শুনিনি। কতো আশা নিয়ে পড়তে আসলাম। এখনতো মনে হচ্ছে বাড়ির পাশের ডিগ্রি কলেজে পড়লে ঢের ভালো হতো। নিজের বিবেকে খুব লাগে আপা। আদিবকেও বলেন ওদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে। নইলে অনেক বিপদ হতে পারে। ওরা মানুষ না,রাক্ষস। ”
এতো অল্প বয়সে কিভাবে মানুষ দানব হয়ে যায়? কিভাবে মেধাবী ছেলেগুলো মেধাকে ভালো কাজে না লাগিয়ে জঘন্য অপরাধে ব্যয় করে?কিভাবে পারে এরা ফ্রী খেতে, অন্যদের ঘাড় ভাঙতে, লেখাপড়া না করে গুণ্ডামি,লুচ্চামি করে বেড়াতে? কারা নষ্ট করে দিচ্ছে এদের? আল্লাহ,এদের ক্ষমা কোরো না।
চলবে
Views: 9