“যাত্রী আমি ওরে।
যা কিছু ভার যাবে সকল সরে।
আকাশ আমায় ডাকে দূরের পানে
ভাষাবিহীন অজানিতের গানে
সকাল সাঁঝে পরাণ মম টানে
কাহার বাঁশি এমন গভীর স্বরে!”
(গীতাঞ্জলি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
“ভ্রমণ” শব্দ শুনলেই মনে অপরূপ আনন্দ সৃষ্টি হয়। ভ্রমণের বই পড়া মানে মনের অন্তর মহলে আনন্দের অংশুতে ভেসে যাওয়া। আচ্ছা! সমুদ্রের জলরাশি যখন পাড়ে আসে তখন সেই জলরাশির মধ্যে থাকে অনেক কিছুই। তেমনি ভ্রমণের সম্বন্ধে বই পড়া মানে সেই জায়গার ছবি নিজের মনে এঁকে যাওয়া। এমনি সুন্দর লেখনী হলো এই ভ্রমণ বইটি।
🔅”শুধু যাওয়া আসা” গল্পের নামকরণের সার্থকতা ————
গল্প বইটির নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি গান থেকে নেওয়া।
“শুধু যাওয়া আসা, শুধু স্রোতে ভাসা,
শুধু আলো-আঁধারে কাঁদা-হাসা॥
হটাৎ এমন নাম কেন?
ভ্রমণ কাহিনী তে যাওয়া-আসা মানে হয়–
কোনো জায়গায় ঘুরতে যাওয়া এবং সেখানের স্মৃতি নিয়ে ফিরে আসা নিজের দেশে কিংবা নিজের ঘরে। আসলে প্রকৃতির ভালোবাসার টানে আমরা কিছুদিনের জন্য যে ঘর ত্যাগ করি,সেই ত্যাগে যদি সুন্দর প্রকৃতি আমাদের চেতনার গহীনে নাই প্রবেশ করে তবে আমাদের সেই ভ্রমণে তৃপ্তির নিঃশ্বাস থাকে না। এই বইটির প্রত্যেক পাতায় প্রকৃতির মধুরতা মনোহারিতা আমাদের আকৃষ্ট করে। বইটির একটি অধ্যায়ের কিঞ্চিৎ লাইন এখানে উল্লেখ করলাম—
“অনেক ওপরে ধূসর নীল,মাঝখানে এখানে সেখানে রক্তিম আভা আর আবছা আঁধার রঙের মেঘ ক্ষণে ক্ষণে স্থান বদল করছে। নম্র,নীরব, সৌম্য গভীর আকাশ সেজেছে অপরূপ শোভায়।”…..
“মোর সন্ধ্যায় তুমি সুন্দরবেশে এসেছ,তোমায় করি গো নমস্কার।”
কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “শুধু যাওয়া আসা” গানটি বেদনার গান। কৈশোরে মা,যৌবনে বৌঠান তারপর একে একে শিশুপুত্র, কন্যা, স্ত্রী, প্রিয়জনদের হারিয়ে তিনি যখন বিষাদের ঘরে নাম লিখেছেন ঠিক সেই সময় সৃষ্টি এই গানের।
বিষাদ ভ্রমণের ঘরে কি কাজ?
আসলে আমাদের জীবনে বড় সত্যি হলো মৃত্যু। তেমনি সত্যি হলো জীবন পথের স্মৃতির বৃষ্টি। ভ্রমণ আমাদের শুধু আনন্দ দেয় না! সৃষ্টি করে অনেক অজানা মানুষের সাথে সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক স্মৃতির ঘড়িতে শুধু বন্ধ থাকে না। সেই সম্পর্ক মনের ভেতরে গড়ে তোলে সুন্দর এক রঙের সমষ্টি। ফিরে আসার সময় সেই একটা বিষাদ।আবার ভ্রমণের সময় প্রকৃতির ভিন্ন রূপে সৌন্দর্যকে পাশে না পাওয়ার বিষাদ মন ঘরে থেকে যায়। সব মিলিয়ে বলতে পারি বইয়ের নামকরণ সার্থক হয়েছে।
🔅বইয়ের ভাষা –
বাংলা ভাষাতে লেখা। সুন্দর ভাবে লেখা। লেখকের লেখার ধরণ সোজা। পড়তে কোনো অসুবিধা নেই।
🔅বইয়ের প্রচ্ছদ-
মো. সাদিতউজ্জামান খুব সুন্দর প্রচ্ছদ করেছেন।
🔅 বইয়ের রিভিউ ———–
“শুধু যাওয়া আসা” একটি ভ্রমণ স্মৃতির বই। বইটি অবশ্যই বাংলাদেশের। বইটিকে লেখক দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন।
প্রথম ভাগ – দেশে (বাংলাদেশ)
দ্বিতীয় ভাগ – বিদেশে
অ )✴️প্রথম ভাগ নিয়ে আলোচনার যাত্রা শুরু করি।প্রথম ভাগে আছে মাত্র ৮টি ভ্রমণের গল্প। আমরাও এবার গল্পের ভ্রমণের যাত্রা শুরু করি।
🔅১)অরণ্যের স্বপ্ন(সুন্দরবন)
———————–
বাংলাদেশের সুন্দুরবনের ভ্রমণের কাহিনী। এখানে উপস্থিত আছে সুন্দরবনের বর্তমান অবস্থান গল্প। প্রকৃতির সৌন্দর্য এখানে লেখক চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
“দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা নামলো, তারপর রাতের আকাশে মেঘের ওপার থেকে উঁকি দিল দশমীর চাঁদ। ভোরবেলা ঘুম ভাঙতেই দেখি নদীর পাশে অপূর্ব শ্যামল শোভা। চারদিকজুড়ে জীবনের উচ্ছাস। সেই জীবন একেবারে নিঃশব্দ। ষড়ঋতুর পরিবর্তন,ঝড়ঝঞ্ঝা,বৃষ্টি,খরা-সবকিছু এখানকার শ্যামল নিঃশব্দ জীবনের সঙ্গে একাকার হয়ে সুখ-দুঃখের মতো মিশে আছে।”
সুন্দরবন পদ্মা,ব্রহ্মপুত্র মেঘনার অববাহিকায় অবস্থান। “হাড়বাড়িয়া ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র” UNESCO বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান এবং বন্যপ্রাণীদের আশ্রয়স্থল। কটকা সমুদ্র সৈকত, করমজল পয়েন্ট(বাঘের সংখ্যা ১০৬টি মাত্র)(বাংলাদেশের একমাত্র প্রকৃতিক কুমির প্রজনন কেন্দ্র),ডিমের চর (বিশাল এলাকাজুড়ে একটি সৈকত।), শরণখোলা রেঞ্জ,হিরণ পয়েন্ট/নীলকমল(অভয়ারণ্য) ইত্যাদি স্থানের গল্প কথা লেখক তাঁর তুলির টানে আমাদের মনকে বেশ সুন্দর ভাবে বশীভূত করেন।
লেখকের লেখার মাধ্যমে আমিও এখানে একটি সতর্কবাণী তুলে আনি –
“মিষ্টি পানির ডলফিনকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা ভীষণ প্রয়োজন। সম্প্রতি চীনের ইয়াংজি নদীর ডলফিন বাইজির বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া একটি দুঃখজনক ঘটনা।মানব ইতিহাসে বাইজি প্রথম জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী যা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমাদের মিষ্টি পানির ডলফিনরা বাইজির মতো একই রকম বিপদের সম্মুখীন এবং এদেরকে ভবিষ্যতে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমাদের সাহায্য করা প্রয়োজন।”
২)নদীর দেশ কবির দেশ(বরিশাল)— বরিশাল হলো বাংলাদেশের রত্নগর্ব। এখানে অনেক কবি শেতিক জন্মদিন স্থান। কবি মুকুন্দ দাশ থেকে কবি জীবনানন্দ দাশ, কুসুমকুমারী দাশ, সুফিয়া কামাল, কামিনী রায়, আবু জাফর ওবায়েদউল্লাহ, আসাদ চৌধুরী ইত্যাদি প্রমুখ সকল বিখ্যাত লোকের জন্মস্থান এই মাটি।
বুড়িগঙ্গা গ্রিনলাইনের ওয়াটার বাস করে যাত্রা শুরু। এখানে লেখক একটি দিকে আমাদের নজর দৃষ্টি দিয়েছেন সেটি হলো বুড়িগঙ্গার বর্তমান দূষণের ফলে জলস্তর কমে যাওয়া।
কীর্তনখোলা নদীর ঘাট। এখানে খাবারের দোকানের নাম হান্ডি কড়াই। এরপর আগমন ঝালকাঠি (পথে দেখার জায়গা দুটি দুর্গাসাগর আর গুঠিয়া মসজিদ।)
কীর্তনখোলা নদীর ঘাট থেকে বরিশাল শহরে যেতে পাবেন চাখার, শেরে বাংলা ফজলুল হকের বাসস্থান, তাঁর কাচারি বাড়ি বর্তমানে যা স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে চিহ্নিত। এরপর সুগন্ধা নদীর পাড়ে কবি কামিনী রায়ের বাড়ি।
৩) হাওর থেকে ফেরা ( কিশোরগঞ্জ)— “বিশাল জলাশয়”। হাওরের প্রচলিত অর্থ হলো বন্যা প্রতিরোধের জন্য নির্মিত বাঁধের মধ্যে প্রায় গোলাকৃতির নিম্নভূমি বা জলাভূমি।এখানে আছে ২৬০ প্রজাতির মাছ আর ২৪ প্রজাতির চিংড়ি। বাংলাদেশের আহরিত মাছের শতকরা ২৫ ভাগ এখান থেকে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ থেকে মিনি টুরিস্টবাসে যাত্রা শুরু। হবিগঞ্জের উপজেলার নদীঘাটে বাস নামিয়ে দেবে তারপর বড় নৌকা করে যাত্রা।
এখানে প্রকৃতির প্রেম বড় সুন্দর। প্রদেশে নৌকা ভ্রমণ মানে “মোর সন্ধ্যায় তুমি সুন্দরবেশে এসেছ, তোমায় করি গো নমস্কার।” কী সুন্দর প্রকৃতির বর্ণনা করেছেন লেখক তাঁর লেখায় –
“নম্র,নীরব, সৌম্য গভীর আকাশ সেজেছে অপরূপ শোভায় “।
এখানে দেখার আছে অষ্টগ্রাম, মিঠামাইন(নিকলি) এলাকা।নিকলি হলো বাংলাদেশের দ্বিতীয় ড্যান্ডি। এই অঞ্চলটি এখন দেশের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র। রাস্তার মোড়ে সাবমেরিনের একটি প্রতিরূপ শোভা পাচ্ছে। এছাড়া অষ্টগ্রামে পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট একটি প্রাচীন মসজিদ আছে।
৪)একটি ভগ্ন রাজবাড়ি(দিনাজপুর)- ঢাকা থেকে আকাশপথে সৈয়দপুর। সেখান থেকে গাড়িতে ঘন্টা দেড়েকের পথ।
দিনাজপুরের রাজ বাড়ির ইতিহাস লেখক খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
“রাজবাড়িটি প্রধানত তিনটি মহল বা ব্লকের সমন্বয়ে গঠিত। আয়নামহল,রানীমহল আর ঠাকুরবাটি মহল। রাজবাড়ির ভূমির আয়তন মোট ১৬.৪১ একর। আয়নামহল আর রানীমহলের এখন একেবারেই ভগ্ন দশা, যদিও সেখানে এখনো প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী ও কারুকাজ রক্ষা করা যায়।”
আবার রাজবাড়ির কালিয়াজিউ মন্দিরের সাথে কান্তজিউর মন্দিরের(এই মন্দিরের চার দেয়ালের ভেতরে এবং বাইরে পৌরাণিক ও মহাকাব্যিক চিত্রাঙ্কিত অসংখ্য টেরাকোটা ফলক মন্দিরের সৌন্দর্যকে এক অদ্বিতীয় স্থাপত্যের মর্যাদা দিয়েছে।)প্রসঙ্গটি খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
সৌন্দর্য এবং আয়তনের দিক থেকে রামসাগর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দীঘি।কতটা সুন্দর লেখকের তুলির বর্ণনাতে দেখুন –
“চোখ জুড়িয়ে গেল যখন দেখলাম অসংখ্য গাছপালার রূপ দিঘির স্বচ্ছ জলে প্রতিবিম্বিত হয়ে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা করেছে”।
আর আছে মহানন্দা নদীর তীরে দুই দেশের ভালোবাসার বয়ে চলা।
৫)একটি কুঁড়ি দুটি পাতা (সিলেট এবং শ্রীমঙ্গল)-
ইতিহাস আর ভ্রমণ দুই এঁকে নিয়ে যায় সময়ের সাহিত্যকে। ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে হজরত শাহজালালের শ্রীহট্ট জয়, চতুর্দশ শতাব্দীতে বারো ভূঁইয়াদের জমিদারি পত্তন,মুঘল সাম্রাজ্য থেকে ব্রিটিশ শাসনের অধীনে চলে যাওয়া এবং সবশেষে পাকিস্তানি হানাদারের হাত থেকে মুক্ত হওয়া স্মৃতির ইতিহাসের জেলা হলো এই সুরমা নদীর ধারের অবস্থিত সিলিট জেলাটি।
“শুকতারা” রিসোর্ট অবস্থিত হলো সিলেট শহরের খাদিমনগরে। পাহাড়ের গায়ে ২২টি কটেজ নিয়ে গড়ে উঠেচ্ছে এই রিসোর্ট। এখানে আছে একটি লাইব্রেরি। আর আছে একজোড়া তবলা এবং হারমোনিয়াম। আছে একটি পুরানো দিনের টাইপরাইটার। অভ্যর্থনাকক্ষের নিচের তলায় আছে ক্যান্টিন।এই রিসোর্টটি বানিয়েছেন মিসেস জারিনা ম্যাডাম। পাহাড়কে আঘাত না করে এই রিসোর্টটি তৈরি।
সিলিটে দেখার জায়গা – জাফলং,বিছানাকান্দি, হরিপুর গ্যাস ফিল্ডস,কুলাউড়ার চা বাগান। এই চা বাগনান নিয়ে একটি বাস্তব গল্প কথা লেখক তাঁর এই বইটিতে স্থান দিয়েছেন।
৬) গৌড়বঙ্গের কথা (রাজশাহী)
রাজশাহী শহর নামের মত সুন্দর একটি শহর। মূল রাস্তাগুলি বিশেষরকম স্ট্রিট লাইট দিয়ে সাজানো। রাজশাহীকে সবুজ নগরী, শিক্ষা নগরী, শান্তির নগরী আর রেশম নগরী বা সিল্ক সিটি ইত্যাদি নানা নামে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ৭০ বছরের পুরানো একটি কলেজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় আছে আধুনিক স্থাপাতো বৈষ্টের দেখা মিলবে। শহীদ মিনারের পাশে আছে খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী মূর্তজা বশিরের একটি মুরাল। এছাড়া আছে অনেক কিছু।
রাজশাহী আর পদ্মা নদীর সম্পর্ক সেই প্রাচীন কাল থেকে। তাই অনেকে এই সম্পর্কের চিরের জন্য ভারতবর্ষের ফারাক্কা বাঁধ কে দোষ দেয়। কিন্তু সেই দোষ ভারতবর্ষের একার সিদ্ধান্ত ছিল না। বাংলাদেশে যেমন পদ্মার ক্ষতি হয়েছে তেমনি ভারতবর্ষের অনেক নদ-নদী ফারাক্কা ব্যারেজের জন্য শুকিয়ে গেছে। সে কথা আরেকদিন হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ। না দেখলে ইতিহাস থেকে দূরে হয়ে যাবে আপনার মূল্য।
রাজশাহীর কথা হবে আর নাটোরের কথা হবেনা সেটা কী করে হয়! নাটোর বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত আরেকটি জেলা। এখানেও অনেক কিছু দেখার উল্লেখযোগ্য স্থান আছে।
৭) স্বাধীন বাংলার প্রথম দিনের সূর্যোদয় (সিরাগঞ্জ আর কুষ্টিয়া ) এবং ৮) ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া (শাহজীবাজার এবং হবিগঞ্জ) এই দুটি না পড়লে বাংলাদেশকে জানা যাবেনা।
🔅ক ) বিদেশে
______________________
১) সাগরমাতার দেশে (নেপাল) –
বাংলাদেশ থেকে নেপাল “ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স বিমান” করে নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নামা।
পোখারায় আছে ফেওয়া হ্রদ। এটি নেপালের দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্রদ। এখানে নৌবিহার আছে।
এরপর সারাংকোট। এখানে সূর্যোদয় উপভোগ করার মত। এখান থেকে দেখা যাবে অন্নপূর্ণা আর ধৌলাগিরি পর্বতশ্রেণী। পোখারায় দেখার আছে আরো জায়গা যেমন ডেভিস ফল এবং গুপ্তেশর গুহা, আন্তর্জাতিক মাউন্টেন মিউজিয়াম। এখানে উল্লেখ করতেই হয় ২০১০ সালের ২৩ মে এ বাংলাদেশের পতাকা এভারেস্ট চূড়ায় স্পর্শ করলো সাংবাদিক মুসা ইব্রাহিমের হাত ধরে।
এর পর নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর যাত্রা। এটা জন্য পড়তে হবে বইটি।
২) শৈল শহর যাত্রা (দার্জিলিং)——-
আমার প্রথম প্রেম। মা,বাবা,দিদি,জামাইবাবুর হাত ধরেই আমার প্রথম প্রেমিকার সাথে আলাপ। আমি প্রথমে বুঝিনি পাহাড়ের ভালোবাসাতে কি আছে? কিন্তু যখন বুঝেছি তখন আর ফিরে আসতে পারিনি। যাই হোক আমার কথা এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়।
দার্জিলিং লেখা যত পড়েছি আমার মা’র কথা বারবার মনে এসেছে। টাইগারহিলে মা’র সাথেই সূর্যোদয় দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানেই দেখেছি প্রকৃতির রঙের খেলা আর মায়ের চোখে জল। আমি হয়তো একটু আবেগপ্রবণ হয়ে যাচ্ছি। আসলে লেখকের বর্ণনা আমার অনুভূতির কোষকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে।
বাকি অধ্যায়ের গল্পের নাম হলো —
৩) মুর্শিদাবাদ ৪) অন্তরে তার মমতাজ নারী ৫) ভূস্বর্গ কাশ্মীর ৬) হংকং ৭) দূর দ্বীপবাসিনী ৮) কাঙলের আমেরিকা ভ্রমন।
সব নিয়ে আর আলোচনা করলাম না। না পড়লে আপনারা মিস করবেন প্রকৃতির প্রেম থেকে। আবার মিস করবেন মনুষ্যত্বের ভালোবাসা থেকে। বইটি পড়ুন আর অন্যকে পড়তে বলুন।
🔅ব্যর্থতা —-(স্যার ক্ষমা করবেন🙏 )
বইটির দুটি উল্লেখযোগ্যপূর্ণ ব্যর্থতা আছে আমার মতে।
১) ভ্রমণ বই যদি হয় লেখার সাথে ছবি না পাওয়া। বইয়ের শেষে ছবি। লেখার সাথে থাকলে পড়তে একটা তৃপ্তি থাকে।
২) ভ্রমণের লেখা তবে কোনো জায়গার খরচের মূল্যের কথা উল্লেখ নেই।
যেমন —–
ঢাকা থেকে সুন্দরবন ট্যুরের প্যাকেজের খরচা।
আবার সিলেটের কটেজের দাম।
আবার নেপাল ঘুরতে বাংলাদেশ থেকে যাত্রা শুরু করে ফিরে আসা পর্যন্ত প্যাকেজের খরচা কত!
আর ছোট ছোট খাবারের দোকানে কত লাগে খেতে, মিল সিস্টেম করলে কত টাকা ইত্যাদি এই সকল বর্ণনা শুধু নেই।
🔅 সফলতা ও লেখক পরিচিতি
________________________
ভ্রমণের সুন্দর বর্ণনা এবং সুন্দর সব ইতিহাসের তথ্য এই বইটিতে পাওয়া যাবে। আরো বড় পাওনা স্যারের লেখার জাদুতে ভালোবাসার কথা । তাই আমি আশা রাখি বইটির সাফল্য অনেক হবে। এটা শুধু বিশ্বাস নয় এটা আমার উপলব্ধি।
এই লেখক কে? কে এই আবদুল লতিফ?
বাংলাদেশের একজন প্রবীণ লেখক। জন্ম ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৪৯। স্যারের উল্লেখযোগ্য বইগুলি হলো – “শনিবারের গল্প” “শনিবারের আরো গল্প”, “বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা”,”রাঙা হাসি রাশি রাশি” ইত্যাদি। স্যার পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র এবং পরবর্তী সময়ে এম বি এ ডিগ্রি লাভ করেছেন।
আমার সাথে আলাপ স্যারের #অংশু গ্রূপে।
সেই গ্রূপের হাত ধরে লেখক কবে আমার মন ঘরে নিজের গোলাপের সুবাসিত দিয়ে গেছে আমি নিজেই অনুভূতি করেনি। যখন অনুভূতি করেছি তখন সম্পর্ক অনেক দ্রুত গভীর হয়েছে। স্যার শুধু প্রবীণ বলে ভুল হবে!স্যার হলেন আমার my dear… যখন পিতার মত বকা তখন ঠিক বকবেন, যখন মনের বিষন্নতার কথা শেয়ার করি তখন দাদা’র মত পাশে থাকেন।আবার যখন মজা করেন তখন সমবয়সি হয়ে পাশে থাকেন। এই হলো আমার my dear sir 💞💞💞।
বইটা যখন হাতে পাই তখন থেকে একটা চিন্তা ছিল। আমি স্যারের বই কি ভাবে রিভিউ করবো? এটা একটা বিশাল স্নায়ু যুদ্ধ। যিনি আমার লেখার জগতের গুরু,তাঁর লেখা আমি রিভিউ করবো! এ বড় স্পর্ধা! করলাম সেই স্পর্ধা। সেই স্পর্ধার সাফল্য আপনারাই বলতে পারবেন।
শেষ করার আগে বলি ভ্রমণপিপাসু দের এই বই পড়া উচিৎ। নয়তো অনেক কিছু জানা বাকি থেকে যাবে ——
“মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল-মাঝে
আমি মানব একাকী ভ্রমি বিস্ময়ে, ভ্রমি বিস্ময়ে।।”
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
Views: 90