বেওয়ারিশ
_____নাসরীন সুলতানা
ট্রেনটা কিছুক্ষনের মধ্যেই ছেড়ে যাবার কথা তবুও, কেন যে এতো দেরী করছে? চট্রগ্রামে আজ রাতের মধ্যে না ফিরলে নতুন চাকরিতে প্রথম দিনই বদনাম হয়ে যাবে ভাবতে ভাবতে শিহাব বিরক্ত মুখ নিয়ে বসে আছে একদিকে।
অন্যদিকে, চোখ পড়তেই দেখলো ফুটফুটে একটা বাচ্চা মেয়ে তার চোখ ভরা জল।গায়ের কাপড়টাও কিঞ্চিৎ ছেঁড়া,মেয়েটা ভালো করে কথা বলতেও শেখেনি। ট্রেনের কেউ খেয়াল দিচ্ছে না তার দিকে সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত।
এতটুকু বাচ্চাকে একা দেখে শিহাব কৌতুহলবশত কাছে যেতেই আধো আধো বুলিতে মেয়েটা যা বোঝাতে চাইলো আঙুলের ইশারায় তাতে মনে হল “মা মা বাইলে বাইলে”। শিহাব ট্রেন ছেড়ে দেবার আশংঙ্কায় এতক্ষন ভেতরে বসে থেকে ভাবলো ট্রেন ছাড়ার তো নাম গন্ধ নেই তার চেয়ে বরং বাচ্চাটাকে ওর মায়ের কাছে রেখে আসি।
এভাবে বাচ্চা রেখে কেউ চলে যায়? ভেবে খানিকটা সে বিরক্তও হলো। ট্রেন থেকে বাচ্চাটাকে সাথে নিয়ে নেমে এলো, চারিদিকে অনেক মহিলাকেই দেখা যাচ্ছে, তাদের দেখে ডেকে ডেকে জিজ্ঞাসা করে যাচ্ছে কেউ বাচ্চার মা কিনা,সবারই না সূচক উত্তর।
কিছুক্ষন পর কিছুটা দূর থেকে খুব কোলাহল শুনতে পেয়ে দ্রুত পায়ে সেদিকে এগিয়ে গেল,সেখানে জটলা পাকানো মানুষ দেখা যাচ্ছে,কাছে এগিয়ে দেখতে গিয়ে চোখ পড়ল প্রায় বিবস্ত্র এক পাগল নারী,সবাই তাকে নিয়ে নানান কটাক্ষ করছে,হাস্যরস করছে।
শিহাব খেয়াল করলো এতক্ষন শিহাবের আঙুল আকড়ে থাকা বাচ্চা মেয়েটা তার আঙুল ছেড়ে দৌড়ে গিয়ে পাগলীটার বুকে গিয়ে ডেকে উঠলো ” মা”।
পাগলী বাচ্চা মেয়েটার মুখটার দিকে ভালো করে তাকিয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো, হঠাৎ শিহাবের ট্রেনের হুইসেল বেজে উঠতেই তাকে ট্রেনে উঠে যেতে হলো। ট্রেনে উঠে শিহাব ভাবতে লাগলো তার মতো কোন শিহাবের কারনেই ওরা পাগল হয় আর এমন নিষ্পাপ শিশুরা হয় বেওয়ারিশ। শিহাব মনে মনে লজ্জাবনত হলো।
Views: 28