অদ্ভুত নববর্ষের অদ্ভুত প্রেম
_________রাজদীপ মজুমদার
এত গরমে সকলের জীবন এখন হাঁসপাশ। সেই গরমের হাত থেকে বাঁচার জন্য বাড়ির সামনে একটা শপিং মলে চলে এলাম বন্ধুর সাথে। মনে মনে ভাবলাম বাংলার নববর্ষ দিন ফ্রিতে কিছু ঠান্ডা বাতাস খেয়ে আসি।আমরা বাঙালিরা সব কিছুই খাই। এটা আমাদের গর্ব। আমরা বাঙালিরা অন্য ভাষাকে সম্মান করতে জানি। যাই হোক! নববর্ষের টপিক থেকে সরে গেলে চলবে না।
মলের বাইরে গেটের সিকিউরিটি গার্ড—
🙏নমস্কার স্যার! শুভ নববর্ষ।
আমি —- শুভ নববর্ষ স্যার।
সিকিউরিটি গার্ড — স্যার আপনি আমায় “স্যার” বলেন।
আমি — হ্যাঁ! বলাম! আমি যদি স্যার হই! আপনি আমার থেকে বেশি “স্যার” শব্দটি প্রাপ্য করেন। সারাদিন কত মানুষকে স্যার বলে নমস্কার করছেন। সবচেয়ে বড় কথা আপনি এই গরমে বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি তো ভেতরে ঠান্ডা বাতাসের আমেজ নিয়ে চলে যাবো। কিন্তু আপনার মত এই গরমে বাইরে দাঁড়িয়ে এমন নিষ্ঠা ভাবে এই কাজ করতে পারব না। আর ওই ঘামের দাম আমরা কেউ দিতে পারবো না। বুঝলেন দাদা! তারপর হাসতে হাসতে বলাম; “দাদা” বলবেন।
সিকিউরিটি গার্ড —- ঠিক আছে স্যার। সরি! ঠিক আছে দাদা।
মলের ভেতরে ঢুকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। কী সুন্দর সাজিয়েছে! মনে হচ্ছে কোন জমকালো অনুষ্টান বাড়িতে চলে এসেছি। একদিকে ঢাকের শব্দ, অন্যদিকে লম্বা লম্বা হাত পাখার ভিন্ন ধরনের ডিজাইন, সাথে আছে নানান ধরনের বিশালকায় চারুকর্ম পুতুল, হাতি, কুমীর, লক্ষ্মীপেঁচা, ঘোড়াসহ বিচিত্র মুখোশ। মাইকে রবীন্দ্র সংগীত ধ্বনিত হচ্ছে। খুব সুন্দর বাতাবরণ।আমার শরীরে ততক্ষনে আসতে আসতে ঠান্ডা বাতাসের স্পর্শ এসে লেগেছে। আর তাতেই চোখে ঘুম চলে আসছিল। বিশ্বাস করুণ ওই ঠান্ডা বাতাস আমার সারা শরীরের কোষকে কী যে প্রেম করছিল। উফ! সেটা বলা বা লেখা যায় না! যেন দার্জিলিঙে তুষার পাত হচ্ছে। আমি হাতে চা আর সিগেরেটের টানে সেই বরফের তুষার কে স্পর্শ করে ঠোঁটে চুমু আঁকছি কিংবা বলা ভালো দুই জনে হাতে হাত রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা একে অপরকে দেখে যাচ্ছি। এই প্রেম অনেক জীবনের প্রত্যাশার ফল। নববর্ষ উপলক্ষে বেশ ডিসকাউন্ট চলছে। আজ এই মলে বেশ ভীড়। কিছু পড়ে দেখি ভীড়ের মধ্যে ঠান্ডা বাতাস পালিয়ে গেছে। চোখ মুখ থেকে ঘামের ফোঁটা আমার শরীর বয়ে মাটিকে স্পর্শ করলো।
দুই বন্ধু ভীড় এড়ানোর জন্য যে দোকান সামনে পেয়েছি সেই দোকানে প্রবেশ করে গেছি। দোকানটি আসলে কসমেটিকের দোকান। আবার ঠান্ডা বাতাস আমার শরীরের সাথে প্রেম করছে। মনে মনে ভাবলাম উফ!প্রাণটা জুড়িয়ে গেল।
সুন্দরী যুবতী সামনে এসে উপস্থিত হলো!
“গুড আফটার নুন স্যার! কী ভাবে হেল্প করবো বলুন!”
আমি — স্টাইল করে বলাম “mam!আসলে আমার এই বন্ধুটিকে দেখান।”…… দেখলাম আমার বন্ধু আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে!
যুবতী— হাসি মুখে বলুন স্যার কী দেখাবো?
আমার বন্ধু— সানস্ক্রিম কি কি আছে? আসলে এই গরমে মার্কেটিং কাজে বাইরে যেতে হয়। তাই স্কিনকে কিভাবে বাঁচাবো?
যুবতী—- স্যার আপনি আমাদের এই প্রোডাক্টট গুলি দেখতে পারেন?
আমি সেই সময় ঠান্ডা বাতাস খাচ্ছি আর মেয়েটিকে এবার ভালো করে দেখছি। সত্যি এত সুন্দরী কি বলবো? লম্বা চুল। চুল গুলি সুন্দর ভাবে লেয়ার কাটিং করা।এর আগে এমন স্টাইলের মেয়ে দেখেছি কিন্তু কোনো সময় মনের ঘরে এমন চঞ্চল হয়নি। আজ মন যেন ঠিক করে নিয়েছে এই আমার সেই। মেয়েটি চুল নিয়ে একবার ডান দিক থেকে বাম দিক করছে। আমার মন বলে উঠছে –
“wo jo tha khwaab saa
kya kahein jaane dein…”
মেয়েটির কপালে ছোট একটি টিপ। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। কানের দুলটি মাঝারি সাইজের। অনেকটা ঝুমকোর মত দেখতে। না, চোখে কোনো কাজল নেই। একদম সিম্পল। এই ভীড়ে যেখানে মেয়েরা ফ্যাশনবেল ড্রেসের কম্পিটিশন দিয়েছে সেখানে এই মেয়েটি একদম উল্টো! এমন সিম্পল মেয়েকে দেখলে আমি বারবার স্লীপ খাই। আবার খাই শব্দটি চলে এল। এবার তো মেয়েটি কে দেখে “পহলা নশা”…গানটি বেশ উচ্চ কণ্ঠে গাইতে ইচ্ছা করছিল। এক ফাঁকে বন্ধুর দিকে তাকিয়ে দেখি বন্ধু বাবু আমার দিকে যে ভাবে তাকিয়ে আছে তাতে পরিষ্কার মনে হলো ও আমার এই মন ভাবে খুশি নয়। আমি না দেখার ভাব করে আবার মেয়েটিকে ভালো করে দেখলাম। সত্যি চোখ দুটিতে একটা অভিকর্ষণ বল কাজ করছে। চারদিকে সব কিছু ভুলে আমি মেয়েটির চোখ দুটিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি। মনে মনে ভাবলাম এই মায়াবী চোখ খুঁজতে চল্লিশ বছর লেগে গেল। তা লাগুক! ভালোবাসা মিষ্টি হয় অপেক্ষাতে। আমার এমন করে দেখা মেয়েটির চোখ এড়িয়ে গেল না।
যুবতী– স্যার আপনাকে কিছু কি দেখাবো? আপনি কি নেবেন?
আমি — একদম চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। কত কিছু বলতে চাইছি কিন্তু মুখে তখন কোনো শব্দ নেই। আমি দেখলাম আমার মাথা থেকে একটি ঘামের বিন্দু মেয়েটির টেবিলে টপ করে পড়লো। তখন সব গান হারিয়ে গেছে। মনে হচ্ছে এই প্রচন্ড গরমে আমি একা সূর্য মামার সামনে দাঁড়িয়ে জ্বলে যাচ্ছি। বুকের ভেতরে যে বিশাল প্রেম নদী ছিল, এক নিমেষে শুকিয়ে শক্ত মাটি হয়ে গেছে। ঘাম আরো বাড়লো।
যুবতী— স্যার শরীর ঠিক আছে তো!
আমি – এবার বাঁধ ভেঙ্গে একটা দুটো শব্দের স্তোত্র ভেসে এলো। বলছি আপনার নাম আর ফোন নম্বর কি পেতে পারি?
যুবতী —- একটু অবাক হলো! তারপর বললো, স্যার, এক্সট্রিমলি সরি। আমার ফোন নেই। আপনাকে একটা কাজ করতে পারি এই দোকানের নাম্বার দিচ্ছি এখানে ফোন করলে আপনি উত্তর পাবেন।
আমি —– আচ্ছা! নাম তো বলার জন্য হয়! নম্বর না দিতে পারনে। কিন্তু নাম বলতে কিসের দোষ?
যুবতী —- সরি স্যার! এটা নিয়ম নেই।
আমি — ওকে! ইটস ওকে। ভাগ্যে থাকলে ঠিক জেনে নেবো!
যুবতী—- ট্রাই ইট স্যার! মুখে মুচকি হাসি।
আমি — উফ! পৃথিবীর সব কষ্ট দূরে চলে গেল। মাথাটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। পাশে থাকা বন্ধুর কথা মনে নেই। শুধু মেয়েটির হাসি ফুটে উঠেছে। মনে হচ্ছে ভূস্বর্গ কাশ্মীরে দুই জনে এক সাথে শুভ দৃষ্টি করছি। দুই জনে এক সাথে গান করছি…সেই বুম্বাদার বিখ্যাত গানটি..
“চিরোদিনি তুমি যে আমার, যুগে যুগে আমি তোমারি আমি আছি, সেই যে তোমার,তুমি আছো সেই আমারি সঙ্গী.. সঙ্গী.. আমরা অমর সঙ্গী।”
কেউ যেন আমার প্রেমের সাথে গ্রাফিক্স সেটিং করছে। কানে বন্ধুর ডাক আসছে না। শুধু মেয়েটির দুটি দন্ত্যময় দাঁত আর হাসি আমায় শীতল করে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে সমুদ্র পাড়ে সূর্যাস্তের সময় জলের ঢেউতে দুই জন হাত ধরে হেঁটে চলেছি তো চলেছি। আর কানে আসছে সেই বিখ্যাত গানটি “আরও দূরে চলো যাই, ঘুরে আসি মন নিয়ে কাছাকাছি, তুমি আছো আমি আছি, পাশাপাশি ঘুরে আসি। আরও দূরে চলো যাই।”
হঠাৎ একটা ধাক্কা খেলাম। সব গ্রাফিক্স গুলি ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটি হওয়াতে উড়ে কোথায় চলে গেল! কি হচ্ছে! এমন সময় একটা বিকট শব্দ। ওমাগো মরে গেলাম!দেখি আমি খাট থেকে মাটিতে পড়ে গেছি। বুঝলাম এটা নববর্ষের প্রেমময় স্বপ্ন ছিল। সত্যি বলিহারি স্বপ্ন! আমার নামটাই বলা হয়নি। থাক এখন গরমে লিখতে আর ভালো লাগছেনা। আচ্ছা! মেয়েটি কি স্বপ্ন, না, সত্যি সে আসছে??
Views: 14