নানা রকম মানুষ
_______সেলিনা হোসেন
থিবীতে নানা রকম মানুষ আছে। আছে নানা রুপ রঙ ধর্ম বর্ণের।
আমাদের চেনা জগতের মানুষের মধ্যেই রয়েছে কত ব্যবধান।
একই মায়ের পেটের এক একটি সন্তান এক এক রকম।
এক জীবনে আমি অনেক অনেক মানুষ দেখেছি।
অনেক অনেক মানুষ কে কাছ থেকে দেখেছি। অনেক মামুষের গল্প শুনেছি।
কাউকে বাস্তবিক ভাবে ; কাউকে ভার্চুয়ালি বন্ধু হিসেবে পেয়েছি।
এক জীবনে অসংখ্য মানুষের অপরিসীম স্নেহ মমতা ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি। এদের সবাই যে আমার রক্তের বাধন তা কিন্তু নয়।
এক জীবনে অসংখ্য মানুষের মহৎ হৃদয় ও মানবতার দৃষ্টান্ত দেখে মুগ্ধ বিমোহিত হয়েছি।
আমার জন্য অনেক অনেক মানুষের ত্যাগ ; ভালবাসা মমতা কৃতজ্ঞতা দেখে নিজেকে ধন্য মনে হয়েছে। তাদের জন্য দোয়া অবিরাম।
কিছু মানুষের হিংসা অহংকার লোভ ক্ষমতা র দম্ভ ; ইতরসুলভ আচরণ ; তপ্ত বাক্য প্রয়োগ ; স্বার্থপর মনোভাব দেখেও আশ্চর্য হয়েছি!!!
মানুষ মানুষের জন্য। জীবন জীবনের জন্য। একটু সহানুভূতি তো প্রতিটি মানুষের ই কাম্য পরিজন প্রিয়জন কিংবা অচেনা মানুষের কাছে।।
চলার পথে কত অচেনা অজানা মানুষ এর সামান্য সহানুভূতি তে মুগ্ধ হতে হয়। আবার কখনও কারও রুঢ় আচরণ দেখে বিরক্ত হতে হয়।
ঘটনা ১
রাস্তাঘাটের কথাই ধরি। চলন্ত অটোতে অল্প বয়সি মেয়ে টা বাইরে মুখ নিয়ে বার বার বমি করছিল। বাতাসের বেগে তার ছিটা,এসে লাগছে আমার গায়ে।
আমার তখন ঘৃণা লাগার কথা। কারণ বমি আমি সহ্য করতে পারি না। কিন্তু আশ্চর্য হয়েছি এটা ভেবে যে আমার ঘৃণা লাগে নি। বরং প্রচন্ড মায়া,হয়েছে। ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে এগিয়ে দিয়ে বললাম মা তুমি চোখে মুখে পানি দাও।
এটা কোন মহত কাজ নয় বরং সামান্য সহানুভূতি!!!
ঘটনা ২
একবার পরিবহন ধর্মঘট এর কারণে ঢাকা খুলনা রুটের দূর পাল্লার বাস সব বন্ধ। আমার ফিরতেই হবে। সকালে স্কুল।
একমাত্র ভরসা ট্রেন। কিন্তু কোন টিকিট অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে না। আমার শ্বশুরবাড়ির গ্রামের প্রতিবেশী মেয়ে টা ঢাকা য় থাকে । ওর মায়ের জন্য কি কি যেন পাঠাবে আমার কাছে। আমার সাথে ফোনে যোগাযোগ করে জানল টিকিট সংকট
আমাকে অভয় দিয়ে বলল আপু কোন চিন্তা করবেন না। ইনশাআল্লাহ আপনার খুলনা পৌছানোর একটা ব্যবস্হা আমি করে দিব।
সত্যি সত্যি সে আর তার স্বামী মিলে আমার জন্য অনেক কষ্টে দুই টা টিকিট যোগাড় করল। একটা কমলাপুর থেকে উল্লাপাড়া পর্যন্ত নন এসি। আর একটা উল্লাপাড়া থেকে খুলনা এসি টিকিট।
টিকিট পেলে কি হবে? ট্রেনে তিল ধারনের জায়গা নেই। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে অসংখ্য স্টুডেন্ট এবং অন্যান্য যাত্রী দিয়ে ভরপুর। ওয়াশরুমের পাশে কোনরকমে দাড়ালাম। আমার লাগেজ আর এক অচেনা স্টুডেন্ট যে বসার জায়গা পেয়েছে তার কাছে।
অনেকের সাথে আমি ও দাড়িয়ে ওয়াশরুমের দরজা র হাতল ধরে আছি। চাকরির পরীক্ষা দিতে আসা একটা ছেলে বাজপাখির মত যেন উড়ে এসে তার হাত দুটো লম্বা করে রাখল যাতে জনস্রোত যেন আমার গায়ে এসে না পড়ে। আমাকে একটু সেফ করে রাখার জন্য কি প্রচেষ্টা!!! সম্পুর্ন অজানা অচেনা একটা ছেলে!!!
তিন ঘন্টা সময় দাড়িয়ে অবশেষে উল্লাপাড়া এসে এসি সিটে আরাম করে বসে আসলাম। সময়মত ব্যাগ ও হাতে পেলাম। ভিড় কমতে শুরু করল।।।
ঘটনা ৩
অটো তে সামনের সীটে বসলে মাথা ঘোরে। কোন কারনে সামনের সীটে জায়গা পেলে ও পিছনের মানুষ যেই হোক কেন যেন সামনে চলে এসে আমাকে জায়গা করে দেয় পিছনে!!!!
ঘটনা ৪
পদ্মা সেতু হওয়ার পর বাসে টিকিট কেটে ছি। আমার সহযাত্রী মেয়েটা তার ৩/৪ বছর বয়সে র বেবিটার জন্য ও টিকিট কেটে ছে। কিন্তু তার বেবির সিট পাশের সারি তে। তার পাশে আমি। সে বিনয়ের সাথে অনুরোধ করল নাম পরিচয় দিয়ে। বেবিটা ঘুমিয়ে পড়বে। আপনি যদি কাইন্ডলি আমার বেবির সিট টা তে বসেন??
কেন নয়? মা শিশু কে আসন ছেড়ে দিয়ে আমি যে সিটে বসেছি ; পাশের সহযাত্রী পুরুষ। আমি বসে মা ও শিশু র কার্যক্রম দেখছি। বেবি টা কিউট। তার মা ও বেশ মিশুক। আমি সীট ছেড়ে দেওয়াতে সে আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। টুকটাক কথা বলছে। তার বেবিটা অতি আগ্রহ নিয়ে আমাকে রাইমস শুনাচ্ছে।
কিন্তু আমার পাশের ভদ্রলোক এর বিরক্তি র কোন সীমা নেই। সে মাঝে মাঝে বলছে চুপ করেন। এত ডিস্টার্ব করে!!!
আমরা চুপ হয়ে গেলাম। মনে মনে ভাবলাম যার এত বিরক্তি তার জন্য প্রাইভেট দরকার ; পাবলিক বাস নয়।।
চলার পথে র অনেক অনেক ঘটনা আছে। দেখেছি অনেক অনেক মানুষ। অনেক অনেক রুপের মানুষ।
মানুষের সহানুভূতি মায়া এসব যেমন দেখেছি ; তেমনি স্বার্থপরতা ও দেখেছি।।
ছোট্ট একটা জীবন নিয়ে এসেছি। ডাক আসলেই চলে যেতে হবে। ছোট্ট এই জীবনে আসুন মায়া ছড়াই ; মায়া বিতরণ করি।
Views: 19