
জঙ্গল-রাজ
____________জয়ন্ত প্রসাদ গুপ্ত
  কোন  কোন  কথা  আবহমানকাল  ধরে  চলে আসছে  তার  ভাব-অর্থ–  ব্যঞ্জনা  নিয়ে ।  যুগ  ও  অবস্থার  পরিবর্তনের  সঙ্গে সঙ্গে তার  নব  মূল্যায়ন  হলে  মনে হয়  ভাল  হয় ।  —–  জঙ্গল-রাজ  , আমার  মনে  হয় ,  তেমনি  একটি  কথা ।  যেখানে  নৈরাজ্যের  চূড়ান্ত    রূপ  দেখা দেয়  সেখানে  আমরা এই  জোড়া  শব্দটি  ব্যবহার করে থাকি । কিন্তু  আমার মনে  হয়,  একে  নতুন করে  বিচার করলে  আমরা  উপলব্ধি  করতে পারব  যে , এটা  আধুনিক  অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে খুব  সামঞ্জস্যপূর্ণ  হচ্ছে  না ।
  Might  is  right    পশুজগৎ  কেন  আদি  মানব  সমাজেরও  সার  কথা ।  বিবর্তনের পথে  আধুনিক  সভ্য মানুষ  সভ্যতার অহঙ্কারে  মনে  করে   ও  কথাটি  আধুনিক সভ্য   জগতে অচল ।  তত্ত্বগতভাবে   সত্য  হলেও   বাস্তবে  কিন্তু সত্য নয় ।   পৃথিবীতে  এতগুলি  রাষ্ট্র আছে এবং শুধু তাই নয় তাদের   নিয়ন্ত্রণের  জন্য রাষ্ট্রসংঘও আছে ৷ কিন্তু আমরা দেখছি না কি যে রাষ্ট্রের শক্তি বেশী আছে  সে  প্রায়শঃই যা খুশি তা করে যাচ্ছে তাকে নিয়ন্ত্রণের  ক্ষমতা অতগুলি  রাষ্ট্রের নেই,নেই রাষ্ট্রসংঘেরও । স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিতেও আমরা প্রতিনিয়তই দেখে যাচ্ছি ,যে  দল প্রবল  [  প্রায়শঃই  সরকারী দল   ]  তারা  যা খুশী  করে  যাচ্ছে   —যে ব্যক্তি শক্তিশালী [   সে পেশীশক্তি ,জনশক্তি ,   অর্থশক্তি  যেটাই  হোক না কেন  ] সে তার ইচ্ছা মতো যা কিছু করে বেড়াচ্ছে ।
             সমাজে  ও রাষ্ট্রে যখন এর দৌরাত্ম্য অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যায় তখন আমরা বিরক্ত হয়ে অনেক সময়ই বলি  ঃজঙ্গলরাজ  অস্যার্থ জঙ্গুলে রাজত্ব ৷ কিন্তু যুক্তিঋদ্ধ  বিচারে দেখা যাবে যে এ ধরণের রাজত্ব ঐ জঙ্গুলে রাজত্ব থেকেও মন্দ ৷ জঙ্গলের মূলমন্ত্র ঐ    Might  is  right   ,  মানে জোর যার মুলুক তার ।   সেখান   বিবদমান পশুরা  লড়াই করার জন্য সমান সুবিধা ও অসুবিধা   [    common &  level  platform  ]  পেয়ে থাকে ।  তৃতীয় কারো থেকে বাড়তি কোন সুযোগ বা সুবিধা   পাবার  কোন  অবকাশ  নেই  সেখানে । কিন্তু মানুষের  সমাজে আমরা   কী  দেখি  X  vs  Y  এর লড়াই   —  X  সরকারী মদতপুষ্ট ৷  তাই একদিকে  Y  অন্যদিকে  X   এবং সরকারের যৌথশক্তি ।  জঙ্গলের স্বাভাবিক পরিবেশই সেখানে সাম্যের একটা বাতাবরণ সৃষ্টি করে  ।  কিন্তু  মানুষের  তথাকথিত  সভ্য  ব্যবস্থায়  এ  রকম  বৈষম্যের  কলুষতা ।
     আরো  বাহার হয়  , যখন দেখা যায়  মানুষের-ই  কাছ থেকে পাওয়া  শক্তি নিয়ে, মানুষের-ই  প্রতিনিধি  হয়ে সেই মানুষের ওপরেই অত্যাচারের ষ্টীম রোলার চালিয়ে  দেয় কোন নীতিভ্রষ্ট সরকার  ।তখন ব্যাপারটা দাঁড়ায় এ রকম মারধোরের জন্য  প্রয়োজন মাফিক যত কিছু সরঞ্জাম  সব আছে সরকারের  হাতে । আর ওদিকে  আক্রান্ত জনসাধারণ আত্মরক্ষার  জন্যও   কোন  অস্ত্র  রাখলে  সেটি  হবে  অপরাধ  ।  আইনের চোখে  সে  শাস্তি পাবার যোগ্য ।  আর  আইন  সে  তো  ‘’ একটা  তামাসা  মাত্র ।‘’  নির্দিষ্ট  উর্দি  প’রে  গুণ্ডামী  করলে  তা  অধিকাংশ  ক্ষেত্রে  গুণ্ডামী  বলে  গণ্য  হয়  না   —  গঙ্গাজলে  শুদ্ধ –করা  গুণ্ডামী  তো  !
  এর পরিপ্রেক্ষিতে পাঠক  এবার  আপনারাই  বিচার ক’রে  বলুন  জঙ্গলরাজ  আমরা  যেক্ষেত্রে  বলে থাকি  তা  কতখানি  সুপ্রযুক্ত  বা  সুসঙ্গত ?
 
                                                                    







 
			   
			   
			  
