আমাজন।
সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বনাঞ্চল তথা রেইনফরেস্ট। যেমন এর বিশালতা,তেমনই রহস্যময় আর বিপদসংকুল। তেমনই বিপুল বৈচিত্র্যময় এর প্রাণী আর উদ্ভিদরাজি। এই আমাজনের গহীনে এক মিশনারি গ্রামে একদিন হঠাৎ করেই মুমূর্ষুপ্রায় অবস্থায় জঙ্গল থেকে হাজির হলো,জেরাল্ড ক্লার্ক নামে সিআইএ এর সাবেক ফিল্ড অপারেটিভ। চার বছর আগে আমাজনে এক মিশনে হারিয়ে যাওয়া এক দলের সদস্য ছিলো সে। যেদিন হাজির হলো,সেই রাতেই মারা গেল সে।বুক জুড়ে অদ্ভুত রহস্যময় সব ট্যাটু।মিশনে যাওয়ার সময় তার হাত ছিলো একটি।কিন্তু মারা যাওয়ার সময় ঠিকঠাক দুইটি হাত!এ কিভাবে সম্ভব?হতবুদ্ধি হয়ে পড়লেন সিআইএর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা।রহস্য উদঘাটনে আমাজনের গহীনে আর্মি রেঞ্জার্সদের একটি দলকে অভিযানে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হলো।সিভিলিয়ান হিসেবে এই দলের সদস্য হলো নাথান র্যান্ড,যে পেশায় ব্রাজিলের একজন বোটানিস্ট আর আমাজন স্পেশালিষ্ট।চার বছর আগে,যে দলটি হারিয়ে গেছিলো তার টিম লিডার ছিলো তারই বাবা।চার বছর ধরে বাবা হারানোর দুঃসহ স্মৃতি বয়ে চলেছে সে।সঙ্গী হিসেবে যুক্ত হলো বন্ধু ম্যানুয়েল আর তার পোষা জাগুয়ার টরটর।দুই আমেরিকান টুইন কেলি আর ফ্রাংক ওব্রায়ান।আমাজনিয়ান এক শামান কাউয়ি।টেলেক্স ফার্মাসিউটিক্যালসের এর এক প্রতিনিধিও আছে,যে কোম্পানি নাথানের বাবাকে অভিযানে পাঠিয়েছিল।শুরু হলো আমাজনের অভ্যন্তরে ভয়ংকর,অনিশ্চিত এক অভিযান। কোন সত্য লুকিয়ে আছে ভেতরে? জানা যাবে তো?জান নিয়ে ফেরা হবে?এদিকে তারা আবার একা নয়,তাদের পিছেও আরেক দল আছে,সেই সত্যের নাকি গুপ্তধনের সন্ধানে।আবার দলের মাঝেই লুকিয়ে আছে বিশ্বাসঘাতক! ওইদিকে আমেরিকায় জেলাল ক্লার্কের মৃতদেহ থেকে ছড়িয়ে পড়েছে এক ভয়ঙ্কর জীবাণু তা থেকে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়ঙ্কর এক মহামারীর। যে মহামারীর কোন প্রতিষেধক বিজ্ঞানীদের জানা নেই।সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে শিশু আর বৃদ্ধরা।গ্লোবাল প্যানডেমিক হতেও দেরি হবেনা।প্রতিষেধক বা ভ্যাক্সিন লুকিয়ে আছে ঐ আমাজনেই,যেখান থেকে অলৌকিকভাবে ফিরে এসেছে,নাথান র্যান্ড আর বয়ে নিয়ে এসেছে ভয়ংকর মহামারী। কি হবে এখন?
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
ঠিক রিভিউ না। অনুভূতি শেয়ার বলা যায়। কারণ এই বই নিয়ে প্রচুর রিভিউ আছে। জেমস রলিন্স এর বইটি নামেই বিখ্যাত।আমার পড়া রলিন্সের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বই হচ্ছে এটি। বইটি কেনা হয়েছিল আজ থেকে প্রায় তিন মাস আগে কিন্তু কিন্তু একেবারে বসে পড়া হয়ে উঠছিল না। একে তো আমি মারাত্মক স্লো রিডার তারপর আবার বই এর সাইজটাও মাশাল্লাহ বেশ বড়। যাইহোক পড়ে এটা অন্তত বলতে পারি যে নিখাদ আনন্দ পেয়েছি। অনেক দিন পর এরকম টানটান উত্তেজনাময় অ্যাডভেঞ্চার এর একটি বই পড়লাম বইয়ের শুরু করতে একটু দেরি হচ্ছিল কারণ শুরুর দিকের কয়েকটা চ্যাপ্টারে চরিত্রগুলোর ইন্ট্রোডাকশন এ ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু যখন তারা ওই দল গঠন করে অ্যামাজনে ঢুকে গেল তারপর থেকে আর কোনভাবেই পিছু তাকানোর মত উপায় ছিল না। যতই গভীর হচ্ছে মনে হচ্ছে আমি তাদের দলের একজন মেম্বার। আমিও তাদের সাথে ভিতরে ঢুকছি। পদে পদে উত্তেজনা,পদে পদে মৃত্যুর হাতছানি। নেইল বাইটিং থ্রিল। আর তার সাথে অন্ধকার আমাজনের বৈচিত্র্যময় গাছপালা আর প্রাণীর নিখুঁত বর্ণনা গুলো আছে যে বই পড়তে পড়তে মাঝে মাঝেই আমি থামিয়ে গুগলে চেক করছিলাম যে আসলেই এগুলোর অস্তিত্ব আছে কি নেই। দেখলাম যে এখানে লেখক খুব বেশি বাড়াবাড়ি করেননি তিনি মূল বিষয় ঠিক রেখে তার ওপর কিছুটা কল্পনার রং ছড়িয়েছেন। সবচেয়ে ভালো লেগেছে মেডিকেল কন্ডিশন গুলোর পুরোপুরি নিখুঁত বর্ণনা পড়ে, কারণ আমার নিজের সাবজেক্টের সাথে একেবারে মিলে যায় এবং এক্ষেত্রে মনে হচ্ছিল যে আমি আমার সাবজেক্ট রিলেটেড কোন কেসের বর্ণনা শুনছি। জঙ্গলে ঢোকার পর থেকে যে ফিলিং অ্যাডভেঞ্চার শুরু হয়েছিল একদম শেষের দিকে অ্যাডভেঞ্চার শেষ হওয়া পর্যন্ত একই তাহলে তা বজায় থাকে।
খারাপ যেটা লেগেছে সেটা হলো যে চরিত্রগুলো একমাত্রিক। খুব বেশি ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট সেভাবে গড়ে উঠেনি। চরিত্রগুলোর সাথে মানে রিলেট করতে কষ্ট হচ্ছিল। শুধুমাত্র কেলি আর তার মেয়ের ক্যারেকটার ছাড়া অন্য গুলো ঠিক ইমোশনালি এটাচ করতে পারেনি। আর ক্লাইমেক্সের সিন গুলো একটু বেশি সিনেমাটিক হয়ে গেছে।ঠিক ভাল লাগেনি আর আর জোর করে মিলিয়ে দেয়ার মতো লেগেছে।
এই বইয়ের অনুবাদ নিয়ে দুই রকম বক্তব্য অনেকেই হয়তো চোখে পড়েছে। আমার কাছে অনুভূতি হচ্ছে মিশ্র।কোন কোন জায়গায় খুব সুন্দর অনুবাদ হয়েছে আবার কোন কোন জায়গায় ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে কঠিন কঠিন শব্দ বা বাক্য গঠন আছে,পড়তে বিরক্ত লাগে। আমি সব সময় অনুবাদ পড়ার সময় মূল বইয়ের ইবুক থেকে মাঝেমধ্যে মিলিয়ে পড়ার চেষ্টা করি।এজন্য মনে হচ্ছিল যে এত কঠিন সব শব্দ ব্যবহার না করে আরও সহজ শব্দে বা বাক্যে অনুবাদ করা যেতো। তবে গল্পের মধ্যে একবার ঢুকে গেলে পড়তে কোন সমস্যা হবে না।
আমার রেটিং-৩.৯/৫
গুডরিড রেটিং-৪/৫।
আমাজনিয়া-জেমস রলিন্স।
অনুবাদঃ রাকিব হাসান। (তিন গোয়েন্দার রকিব হাসান নন)
বাতিঘর প্রকাশনী।
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৪১৫।
মূদ্রিত মূল্যঃ ৪০০/-।
Views: 152