বই – পার্থিব
লেখক – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
প্রকাশকাল – ডিসেম্বর ১৯৯৪
আনন্দ পাবলিশার্স
পৃষ্ঠা সংখ্যা – ৭১৪
বিষ্ণুপদের বসবাস বিষ্ণুপুর গ্রামে। তার তিন ছেলে কৃষ্ণজীবন, রামজীবন এবং বামাচরণ এবং মেয়ে সরস্বতী এবং বীণাপাণি। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। আর কৃষ্ণজীবন থাকেন কলকাতায় সপরিবারে। গ্রামের বাড়িতে বিষ্ণুপদ তার স্ত্রী নয়নতারা, দুই ছেলে বামাচরণ ও রামজীবন আর তাদের স্ত্রী সন্তান সহ থাকেন। সাধারণ বিষ্ণুপুরে সাধারণ বিষ্ণুপদের ঘরে জন্ম হলেও কৃষ্ণজীবন মস্ত মানুষ , সে কথায় পরে আসছি। বিষ্ণুপদ এর কথা বলে নিই।
চিরকালই বিষ্ণুপদ খুব শান্ত স্বভাবের ছিলেন, এই বৃদ্ধ বয়সে এসেও তা-ই। সারাদিন শুধু দাওয়ায় বসে মেঝো ছেলে রামজীবনের অসমাপ্ত পাকা বাড়িটির দিকে চেয়ে থাকেন। বৃদ্ধ বাবা মা কে শেষ বয়সে একটু ভালো রাখবে বলে রামজীবন পাকা ঘর তুলছে। যদিও রামজীবন মদ খায়, খারাপ সঙ্গে পড়েছে, কিন্তু বাবা মায়ের প্রতি তার অগাধ শ্রদ্ধা ভালবাসা। বিষ্ণুপদ রামজীবনকে খারাপ ভাবতে পারেননা। তিনি চিরকাল অভাবের সঙ্গে বসবাস করেছেন, করেছেন অকথ্য পরিশ্রম। কিন্তু এখন আর তিনি কিছুই করেননা, শুধু বসে থাকেন, চেয়ে থাকেন। সংসারের নানা অশান্তির মধ্যেও তিনি বলা যায় একপ্রকার নিশ্চুপ থাকেন। একদিন স্বপ্নে কালঘড়ি দেখেছেন, যেটা দেখার অর্থ নাকি আয়ু ফুরিয়ে আসা। এ কথা শুনে বিষ্ণুপদের স্ত্রী নয়নতারার কাঁদো কাঁদো অবস্থা। যদিও নয়নতারা বিষ্ণুপদ অনেক অভাবের সঙ্গে লড়েছেন কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো শতেক অভাবেও তাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কখনো কলহ হয়নি, চিরকাল সবচেয়ে কাছের বন্ধুর মতো দুজন পাশাপাশি আছেন। আর এই অভাব তাদের অন্য ছেলেমেয়েরা যত না দেখেছে তার চেয়েও এই অভাবের সাথে লড়ে বড় হয়েছে তাদের বড় ছেলে কৃষ্ণজীবন। এখন তার দুনিয়াজোড়া খ্যাতি। দেশে বিদেশে বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান। কৃষ্ণজীবন যখন বিদেশ যান বৃদ্ধ বিষ্ণুপদ তখন নাতি পটলের ভূগোল বইটা নিয়ে ম্যাপ দেখতে বসে যান তার ছেলে এখন কোথায় আছে।
বিষ্ণুপুর গ্রামেই কৃষ্ণজীবনের বেড়ে ওঠা এবং বড় মানুষ হওয়া। ছেলেবেলা থেকেই ছিলেন অসাধারণ মেধাবী। ক্ষিধের কষ্ট, জামাকাপড়ের কষ্ট, একবেলা খেয়ে আরেকবেলা না খেয়ে ,একজোড়া স্যান্ডেল দিয়ে বছর পার করে দিনরাত জেগে পড়াশোনা করে প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি প্রথম হতেন। বর্তমানে তিনি পরিবেশ বিজ্ঞানী। দেশ বিদেশে তার খ্যাতি। পৃথিবীর প্রতি তার সীমাহীন ভালোবাসা, ভবিষ্যত পৃথিবিকে নিয়ে তার সীমাহীন উদ্বেগ।
অধ্যাপনা জীবনের শুরুতেই কৃষ্ণজীবন বিয়ে করেছিলেন রিয়া নামে তারই এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে। কিন্তু রিয়া বিষ্ণুপুরে গিয়ে ঠিক খাপ খাওয়াতে পারেনি, প্রতিদিনই কৃষ্ণজীবনের বাড়ির মানুষদের সাথে চলতে থাকে দ্বন্ধ। তারা কলকাতায় চলে আসেন, এরপর ভাইবোনেরা অপমানই করেছিলো কৃষ্ণজীবনকে, একপ্রকার তাড়িয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু কৃষ্ণজীবন জানেন ভাইবোনদের কতটা অহংকার আশা ভরসার জায়গা ছিলেন তিনি। কিন্তু বিষ্ণুপুরকে কি তিনি ছাড়তে পারেন? ভুলতে পারেন?
আজ দুনিয়াজোড়া তার খ্যাতি, তিনি ভাবেন পৃথিবী নিয়ে। পৃথিবীর কথা ভাবতে গেলে তার মনে সবসময় হানা দেয় বিষ্ণুপুর। দরিদ্র আর দশটা গ্রামের মতোই , তবুও কি যেন আছে বিষ্ণুপুরে, দরিদ্র এই গ্রামের প্রতি ভীষণ টান গভীর ভালোবাসা অনুভব করেন পৃথিবীর বিখ্যাত পরিবেশ বিজ্ঞানী কৃষ্ণজীবন।
তিনি ভাবেন হুমকির সম্মুখীন ভবিষ্যত পৃথিবীতে তিনি কিভাবে রেখে যাবেন তার তিন সন্তানকে, তার প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র দোলনকে! কৃষ্ণজীবনের তিন সন্তান। তবে স্ত্রী এবং বড় দু-সন্তানের সাথে যেন তার সেভাবে সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। তার ভাব ছোট ছেলে দোলনের সাথে। দোলনের সাথে তিন ছাদে গল্প করেন, তারা চেনান, এমনকি পৃথিবীর পরিবেশ নিয়েও কথা বলেন।
ভবিষ্যত পৃথিবীকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে তিনি যেসব কথা বলেন সেসব অনেকের কাছেই অবাস্তব শোনায়। কিন্তু কৃষ্ণজীবনের কথা তারা ফেলতেও পারেননা, মন্ত্রী বা শিল্পপতি সবাই তার কথা মনোযোগ দিয়েই শোনেন। দেশে বিদেশে বিভিন্ন সেমিনারে তার ডাক পড়ে। তার বই বের হয়, সেসব বই দুনিয়াজোড়া সাড়া ফেলে দেয়, আলচনা হয় , হয় সমালোচনা। প্রায়ই উপরের মহল থেকে বিভিন্ন পুরস্কার পান তিনি, তবুও কৃষ্ণজীবন থাকেন নিঃস্পৃহ। এই নির্লিপ্ততা কি কৃষ্ণজীবন তার বাবা বিষ্ণুপদের কাছ থেকেই পেয়েছেন! স্ত্রী সন্তান টাকা খ্যাতি সব থকেও এই ভাবুক পরিবেশ বিজ্ঞানী যেন নিঃসঙ্গ।
কৃষ্ণজীবনের স্ত্রী রিয়ার বান্ধবী চারুশীলা। আবার তাদের প্রতিবেশী মনীশদের পরিবার। চারুশীলা খুবই ছটফটে মহিলা। তিনি সবসময় হইচই ভালোবাসেন।তার বাড়িতে তিনি প্রায়ই মানুষকে নিমন্ত্রণ করেন। আর এ কারণে কয়েকটি পরিবার খুব কাছাকাছি এসে যায়। চারুশীলার বাড়িতে প্রায়ই একসাথে হতে দেখা যায় কৃষ্ণজীবনের স্ত্রী সন্তানদের, মনীশ এবং অপর্ণার মেয়ে ঝুমকি অনুকে, কৃষ্ণজীবনের মেয়ে মোহিনীর টিউটর চয়ন আর চারুশীলার খুব প্রিয় এক ছোট ভাই হেমাঙ্গকে। হেমাঙ্গ’র প্রসঙ্গে আসি।
হেমাঙ্গ পরিবারের ছোট সন্তান। বংশানুক্রমে তারা বড়লোক, হেমাঙ্গ নিজেও প্রতিষ্ঠিত। সে একা থাকতে ভালোবাসে আর ভালোবাসে নতুন নতুন ইলেকট্রনিক্স জিনিস কিনে ঘর ভরিয়ে ফেলতে, এটা নিয়ে তাকে তার মা এবং দিদি দের কথা শুনতে হয়। গড়চার একটা নিজস্ব বাড়িতে সে একা থাকে। এই একা বাড়িতে থাকতে দিতে যদিও মা প্রথমে আপত্তি করেছিলেন, কিন্তু বাড়ির দখল ঠিক রাখার জন্য হেমাঙ্গর বাবাই তাকে সেখানে থাকতে দিতে রাজী হন। কিন্তু একা থেকেও হেমাঙ্গর শান্তি নেই, সেখানে প্রায়ই হানা দেয় তার দুটি দিদি, তার মধ্যে একজন চারুশীলা। চারুশীলা যদিও তার আপন দিদি নয় কিন্তু সে হেমাঙ্গদের বাড়িতেই বড় হয়েছে। আর ছোটবেলা থেকেই হেমাঙ্গ এই দিদিটির ন্যাওটা। আর চারুশীলাও বলাবাহুল্য হেমাঙ্গকে ভীষণ ভালোবাসে, সবসময় চিন্তায় অস্থির হয়ে থাকে তার এই ভাইটা বুঝি সন্ন্যাসী হয়ে যাবে!
একঘেয়েমি কাটাতে হেমাঙ্গ মাঝেমাঝে গাঁয়ের স্কুলে অডিট করতে যায়। একবার কৃষ্ণজীবনের গ্রামের তার শৈশবের স্কুলেও গিয়েছিল। সে গল্প যখন কৃষ্ণজীবনের কাছে এসে করেছিলো কি অভিভূত হয়েই না তিনি শুনেছিলেন!
আরেকবার রবিবারে এক গ্রামের স্কুলে অডিট করতে গিয়ে হেমাঙ্গর পরিচয় হয় রশ্মি রায়ের সাথে। কথায় কথায় হেমাঙ্গ জানতে পারে রশ্মি রায় আসলে বিলেত ফেরত, বিলেত থেকেই সে উচ্চশিক্ষা নিয়েছে। গ্রামের স্কুলে চাকরি করা তার একরকম মিশনের মতো, সে বুঝতে পেরেছে এদেশের গ্রামে আসলে পরিবর্তন আনা কঠিন। সে আবার বিলেতেই ফিরে যাবে এবং সেখানেই স্থায়ী হবার ইচ্ছে।
অবাক করার ব্যাপার ছিল কলকাতায় রশ্মি রায়দের বাড়ি হেমাঙ্গর বাড়ি থেকে খুব দূরে নয়। সেদিন তারা একসাথেই কলকাতায় ফিরলো, এবং আরো একদিন রশ্মি রায়দের বাড়িতে নিমন্ত্রণ ও খেয়ে ফেললো। আর এই ঘটনা দিদি চারুশীলাকে বলার পর রিনি আঁচ করলেন রশ্মি রায় হয়তো হেমাঙ্গকে পছন্দ করে। চারুশীলা তার নিয়মিত অতিথিদের সহ রশ্মি রায়কে দাওয়াত দিলেন নিজের বাড়িতে। বলাবাহুল্য রশ্মি রায় খুব সুন্দরী, চারুশীলার তাকে খুবই পছন্দ হলো। তিনি হেমাঙ্গের সাথে রশ্মি রায়ের কিছু একটা ঘটিয়ে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। হেমাঙ্গ তার এই দিদিকে ভালো বাসে, আবার তার কার্যকলাপকে মাঝেমাঝে ভয়ও পায়। রশ্মি রায়ের সাথে কিছু কি ঘটিয়ে ফেলবে! তার একা ঝঞ্জাটহীন জীবন কি থাকবেনা!
মনীশ এবং অপর্ণার পরিচয় হয়েছিলো অদ্ভুতভাবে। তারপর প্রেম, বিয়্ সন্তান। তাদের তিন সন্তান ঝুমকি, বুবকা এবং অনু। মনীশ এবং ছেলেমেয়েরা টাকা ওড়াতে ভালোবাসে। এই স্বভাব মূলত তারা বাবা থেকেই পেয়েছে। অন্যদিকে অপর্ণা একটু হিসেবী। মনীশ অত্যন্ত হুল্লোড়বাজ ছিল, স্ত্রী ছেকেমেয়েদের নিয়ে সবসময়ই হই হুল্লোড়ের মধ্যে থাকতো। এজন্যই হয়তো ছেলেমেইয়েরা অপর্ণার চেয়ে বাবাকেই বেশি ভালোবাসে। হার্টে সমস্যা হবার পর থেকে মনীশ আগের চেয়ে কিছুটা চুপচাপ হয়ে গেছে। অনেকদিন সিরিয়াস অবস্থা নিয়ে হসপিটালেও ছিলেন। আর তাই বড় মেয়ে ঝুমকি বাবাকে সাহায্য করতে চায়, যদিও মনীশ মনে করেন ঝুমকির চাকরির কোনো দরকার নেই, কিন্তু ঝুমকি চাকরির চেষ্টা করতে থাকলো। আগেই বলেছি ঝুঙ্কিরা চারুশীলাদের প্রতিবেশী, তাই ঝুমকিদের চারুশীলাদের বাড়ি যাতায়াত আছে, ঝুমকিকে চারুশীলা অত্যন্ত ভালোও বাসেন। তিনি ভাবলেন হেমাঙ্গ হয়তো ঝুমকির চাকরির একটা ব্যবস্থা করতে পারবে। হেমাঙ্গর উপর চারুশীলার খুব অধিকারবোধ। ঝুমকিকে তিনি হেমাঙ্গর কাছে পাঠান। এভাবে ঝুমকি এবং হেমাঙ্গর চেনাজানা। তবে শধু এভাবেই নয়, এর আগেও তাদের চারুশীলার বাড়িতে দেখা হয়েছিল, এবং পরেও মাঝে মাঝেই তাদের চারুশীলার বাড়িতে দেখা এবং চোখাচোখি হয়। ঝুমকি একটু রোগা, যে কেউ এক দেখায় হয়তো সুন্দরী বলবেনা, কিন্তু একটু ভালো করে দেখলে ঝুমকির সৌন্দর্য বোঝা যায়, তার মুখটা খুব লাবণ্যময়।
রশ্মি রায় সুন্দরী এবং শিক্ষিতা। চারুশীলার যেমন রশ্মির সাথে হেমাঙ্গর কিছু ঘটিয়ে তুলতে আগ্রহ, তেমনি রশ্মি এবং তার পরিবারেরও হেমাঙ্গকে খুব পছন্দ। তারা হেমাঙ্গের বাড়িতে প্রস্তাব পাঠিয়েছে, এবং তারা রাজিও হয়েছে, কারণ এমন পাত্রী পাওয়া আসলেই দুর্ল্ভ ব্যাপার। রশ্মিকে যে হেমাঙ্গর পছন্দ নয় তাও নয়, রশ্মির সাথে তার একটা ভাল বন্ধুত্বও আছে। কিন্তু বিয়ে? আর রশ্মি বিলেত ফিরে যাবে। সেখানেই স্থায়ী হবে। বিলেতবাস কি তার পক্ষে সম্ভব। তার মন ঠিক সায় দিচ্ছেনা। সে নিজের সাথে বোঝাপড়া করতে সুন্দরবনের কাছে নিশিপুর নামে এক গ্রামে নদীর পাশে কিছু জায়গা কিনে বাড়ি করে ফেললো এবং সেখানে মাঝেমাঝে একরকম পালিয়ে থাকতে লাগলো। তবে চারুশীলার বাহিনী সেখানেও স্বয়ং রশ্মি সমেত হাজির হয়ে যায়, এমনকি সেই দলে ছিল ঝুমকিও!
মা’কে নিয়ে দাদার বাড়ির এক তলাতে থাকে চয়ন। তবে দাদা অয়নের কাছে চয়ন এবং মা বোঝাস্বরুপ। চয়নের এপিলেপসির সমস্যা। মাঝেমাঝেই সে পথেঘাটেও অজ্ঞান হয়ে যায়। অংক এবং ইংরেজিতে ভালো বলে তার টিউশনির অভাব হয়না আর টিউশনি করে তার একরকম চলেও যায়। আর টিউশনি করতে গিয়েই তার সম্পর্ক রচিত হয় কৃষ্ণজীবনের পরিবার, চারুশীলা এবং ঝুমকিদের সাথে, চারুশীলার বাহিনীতে চয়নও আছে। হেমাঙ্গ এই ছেলেটার প্রতি খুবই মমতা অনুভব করে।
বিষ্ণুপদের ছোট মেয়ে বীণাপাণি। নিমাইয়ের সাথে মেয়ের বিয়েটা বিষ্ণুপদই দেন। যদিও নিমাইয়ের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিলনা, কিন্তু স্বভাব চরিত্র ভালো আর বাবা মায়ের প্রতি নিমাইয়ের খুব শ্রদ্ধা ভালোবাসা এটুকু জেনেই বিষ্ণুপদ কিশোরী মেয়ে বীণাপাণিকে বিয়ে দেন নিমাইয়ের সাথে। বিয়ের প্রথম প্রথম নিমাইয়ের সাথে বীণাপাণির ভাব ভালোবাসা হয়েছিল। কিন্তু অভাবে অনটনে একসময় নিমাইয়ের সততাই বীণাপাণির চোখের কাঁটা হয়। নিমাই একবার খারাপ অসুখে পড়লে বীণাপাণিকে যাত্রায় নামতে হয়েছিল। তারপর ঘটনাচক্রে তার হাতে এলো পগা নামে একজনের রেখে যাওয়া ডলার আর পাউন্ডের বক্স। যেদিন বীণাপাণির কাছে বক্সটা রেখে যায় সেই রাতেই খুন হয় পগা। বীণাপাণি মনে করে এই ডলার রাখা অন্যায্য নয়, এর সত্যিকার দাবিদার যেহেতু কেউ নেই, এটা তার। কিন্তু সৎ নিমাইকে এটা জানাতে তার ভয় হয়। কিন্তু নিমাই জানতে পারে এবং এই ডলার পাউন্ড সে ফিরিয়ে দিতে চায়, আর এ নিয়েই তাদের মধ্যে একরকম ছাড়াছাড়ির মতো হয়ে যায়। মাঝেমাঝে বীণাপাণির নিমাইকে আহাম্মকও মনে হয়। কিন্তু তার বাবা বিষ্ণুপদ, দাদা কৃষ্ণজীবন, যাত্রাদলের মালিক কাকা এবং সবাই কেনো নিমাইকে ভালো বলে?
মণীশের ছোট মেয়ে অনু, কৃষ্ণজীবনের মেয়ে মোহিনীর বান্ধবী। সেই সুত্রে অনুর মোহিনীদের বাড়িতে যাওয়া আসা। এবং ক্রমে অনেকটা নিশ্চুপ কৃষ্ণজীবনকে অনু বন্ধু বানিয়ে ফেলে। তাদের সম্পর্কটা এমন যে যেটা হেমাঙ্গর ভাষায় – অসম বয়সী এই দুটি নারী পুরুষ- এদের একজনের চোখে ভক্তি শ্রদ্ধার স্মমোহিত দৃষ্টি , অন্যজনের চোখে অনুকম্পা মেশানো প্রশ্রয়।
#পাঠ_প্রতিক্রিয়া
৭১৪ পৃষ্ঠার বিশাল পরিসরের বই ‘পার্থিব’। এই নিয়ে তৃতীয়বার পড়লাম। এ থেকেই নিশ্চয়ই ধারণা করা যায় বইটা আমার কত প্রিয়। কারণ প্রিয় বইগুলোই আমি বারবার পড়ি। বইটা প্রথমবার যখন পড়েছিলাম ২০১৬ তে, মাত্র তিনদিন দিনরাত এক করে পড়েছি। এত চমৎকার একটা বই, এতগুলো চরিত্র। যখনই বিষ্ণুপদ, নয়নতারা, রামজীবন, পটলের কথা পড়ি মনে হয় পড়তেই থাকি।
আবার যখন পৃথিবীপ্রেমী কৃষ্ণজীবনের কথা আসে তখন মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়েছি। সত্যি কথা পার্থিবের কোনো চরিত্রই খারাপ লাগেনি, বাহুল্য মনে হয়নি, কিন্তু সবচেয়ে অসাধারণ চরিত্র কৃষ্ণজীবন।
এরপর যখন হেমাঙ্গ, চারুশীলা, রশ্মি, রিয়া রায়, ঝুমকি, চয়নের কথা আসে তখনো বিভোর হয়ে পড়েছি।
কখনো কখনো মনীশ অপর্ণার সংসারের , তাদের ছেলেমেয়েদের হাসি আনন্দ, মিষ্টি সম্পর্ক, বুবকার বাবা মণীশের প্রতি ভালোবাসার কথা পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। আরো মুগ্ধ হয়েছি আঠারো বছর বয়সী আপার সাহসিকতা দেখে।
হেমাঙ্গ যে নদীর ধারে বাড়ি করে একা থাকে মাঝেমাঝে , ব্যাপারটাকে খুব রোমাঞ্চকর মনে হয়েছে।
শীর্ষেন্দুর লেখা আমাকে বরাবরই টানে। আমি মনে করি ‘পার্থিব’ শীর্ষেন্দুর সেরা কাজগুলোর একটি। এই বই শেষ হলে মনে হয়, যদি শেষ না হতো, যদি এভাবেই চলতে থাকতো!
এটুকুই বলবো- পড়ে নিখাঁদ আনন্দ পাওয়ার মতো একটা বই ‘পার্থিব’।
ছবি আগের, গতবছর সাতদিন সাত বইয়ের ছবি খেলার সময় তুলেছিলাম।
Views: 217