আলি কেনানের উত্থান-পতন: সামাজিক বাস্তবতার স্বরূপ
◾
“আমার কাছে যত টাকা আছে, শেখ মুজিবের ব্যাংকেও এত টাকা নাই।”
কার কাছে আছে এতবেশী টাকা? যে একসময় সদরঘাটে ভিক্ষা মাগে এই বলে “দে তর বাপরে একটা ট্যাহা!”
“ভিখারীরা সাধারণত ভিক্ষাদাতাকেই বাবা বলে ডাকে। আলি কেনান দাবি ছেড়ে বসল সম্পূর্ণ উল্টো। অর্থাৎ সে ভিক্ষাদাতার বাবা…”
“একজন আলী কেনানের উত্থান-পতন” বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরের সময়কে ঘিরে কিছু বিষয় উপস্থিত হয়। ক্ষমতাচর্চার প্রভাব, গোঁড়ামি, ধর্মের মুখোশ পড়ে করা জমজমাট ব্যাবসা, সে সময়কে কেন্দ্র করে মানুষের উত্থান-পতন, অহংবোধ এবং রাজনীতি সহ অন্যান্য। ছফা ধর্মের নামে অধর্মচর্চার সংস্কৃতিকে উপজীব্য করে গল্পের প্লট সাজিয়েছেন। মাজার সংস্কৃতির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আলী কেনানের উত্থান পতনের কাহিনী বর্ণনা করেন। আমাদের সমাজের মানুষ গোঁড়ামির ঘোরে ধর্মের নামে অধর্মচর্চায় বেশী করে। একটা বিশেষ ধর্মীয় কাজ টাকা খরচ করে সাধারণ মানুষের অভাব অনটন মিটানোর দিকে কোন দৃষ্টি এদের না থাকলেও ধর্মের নামে অধর্মচর্চার প্রতি এদের আগ্রহের কমতি নাই। আমার দেখা স্বামীহারা একমহিলার কথা বলি, ‘অাগুন লেগে উনার ঘর পুড়ে ছারখার হয়ে গেল। অবশিষ্ট বলতে উনাদের প্রাণ, শ’কয়েক টাকা এবং মুরগির ঘরে থাকা ছয়টি মুরগী বাকি আছে। তিনি পরের জীবনে কীভাবে উঠে দাঁড়াবেন সে চিন্তা না করে আগুন নিবানোর সাথে সাথেই মুরগীগুলো নিয়ে চলে গেলেন এক দরবারে। তাকে একসময় জিগ্যেস করেছিলাম, আপনি চাইলে ছয়টি মুরগী বিক্রি করে কিছুটা কাজ করতে পারতেন অথবা এগুলো লালন পালন করে বড় করলে সামনের জীবনে উপকৃত হতেন। তিনি আমার দিকে চোখ টকটকে লাল করে তাকিয়ে বললেন, উনাদের হাতেই তো সবকিছু ওদের কৃপা কারবারিতে আমাদের চলাফেরা, জীবনযাপন সব। ওদের খুশি রাখতে পারলেই তো আমরা খুশি থাকি। কী অদ্ভুত চিন্তা!’ উনি উনার জীবনযাপন কেমন হবে এটা অন্যের উপর পরিপূর্ণ ছেড়ে দিলেন। ঐদিকে দরবারী মুরগীগুলো খেয়ে উনার জন্য সামান্য পরিমাণ চিন্তাও করলো কি না জানি না! অতিবাহিত সময়ের বাস্তবতা এটাই সাক্ষ্য দেয় যে এ ব্যাবসায়ীগুলোর মূলত একশ্রেণীর সর্বস্ব শোষণ করার জন্যই উত্থান। ওদের জমজমাট ব্যবসা দেখে আমার যতটুকু না খারাপ লাগে তার চেয়ে বেশি খারাপ লাগে এ-সবে বিশ্বাসী মানুষগুলোকে দেখলে। ওরা ভালোবাসা মতো পবিত্র, চক্ষুর মতো পরিষ্কার ধর্ম পেয়েও গোঁড়ামির ঘোরে অধর্মচর্চা করে যায়। চুর, জুয়াড়ি, বাটপার, বদমায়েশের সাথে সাথে অনেক মানুষ দেখা যায় উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত, আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছে, বর্তমান অর্থব্যবস্থার উপর মোটামুটি জানাশোনা আছে, ইতিহাস থেকে মোটামুটি/পরিপূর্ণ জানে তবুও তারা গোঁড়ামির ঘোর থেকে বের হয়ে আসতে পারে না। লেখক লিখেছেন, “মাজারে মানুষ আসবেই। মানুষ আসবে কারণ সে দুর্বল অসহায় এবং উচ্চাকাঙ্খী।” “স্বর্গবাসী পুরুষের মুক্ত চেতনার সঙ্গে পৃথিবীর শকুনিদের লোভলালসা এক করে না দেখার আশ্চর্য ক্ষমতা মানুষের আছে। তাই তারা মাজারে আসে।” এদের অসহায়ত্ব ধর্মকে না জানা, এরা দুর্বল ধর্মে মানুষ যতই উচ্চাকাঙ্খা পোষণ করুক যদি সে ধর্মকে ভালোভাবে জানে তবে সে এসব গোঁড়া ভণ্ডামি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। আমাদের অনেকেই মনে করেন, বর্তমান সমাজে প্রচলিত গোঁড়ামি ও ভণ্ডামিকে মুছে দিতে মানুষকে উন্নত সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান নিয়ে জানতে হবে এবং তার শরণাপন্ন হতে হবে। অথচ এরচেয়ে বড় বাস্তবতা এবং সঠিকতা হচ্ছে, এসব গোঁড়ামি ও ভণ্ডামি বন্ধ করতে সবচেয়ে বেশি কার্যকারিতা পাওয়া যাবে মূল ধারার ধর্মে এবং ধর্মীয় দর্শনে। এদেশে ধর্ম নিয়ে ব্যবসার স্বরূপ উন্মোচন করে লেখক সমাজের কিছু অসাধু মানুষের মুখোশ উন্মোচন করেছেন। লেখক দেখিয়েছেন কীভাবে মানুষ ধর্মের নামে অধর্ম চর্চা করে। পুঁজিতন্ত্রের বিষাক্ত থাবায় জীর্ণশীর্ণ সমাজে ধর্ম আর মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে ব্যবসা গড়ে তুলে দুর্নীতি ও ভণ্ডামি করতে থাকা ব্যক্তিদের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন। উপন্যাসে দেখতে পাই, ধর্ম সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ একজন ব্যক্তি ধর্মকে ব্যবহার করে কী করে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়ে যায়।
আলী কেনান গ্রামের এক সাধারণ দখলদার ব্যাক্তি। পাকিস্তানি গভর্নরকে মৃত্যুর মুখ হতে বাঁচালে গভর্নর সাহেব তাকে নিয়ে আসে ঢাকায় তার অফিসে এবং নিজের পিয়ন বানিয়ে দেয়। আলী কেনান হয়ে যায় গভর্নর সাহেবের প্রিয় সখা এবং গভর্নর সাহেবের মতো শহরের সবচাইতে সর্বশক্তিমান ব্যাক্তির দ্বিতীয় সত্ত্বা। আলী কেনানের কাজ কারবারিতে পড়ে ক্ষমতাচর্চার চাপ। যেকোনো সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী, প্রশাসন সহ সাধারণ মানুষকে হারে হারে বুঝিয়ে দেয় তার প্রচুর ক্ষমতা সে গভর্নরের প্রিয় লোক। গভর্নরের পরে দেশে যেন তার-ই রাজত্ব। সে সুযোগকে ব্যবহার করে আলী কেনান নিজেদের দখলদারত্বের কাজে, নিজের স্বজনের জন্য এবং নিজের জন্য। বর্তমান সমাজেও আমরা এমন দৃষ্টান্ত দেখতে পায়। মূলত ছফার লেখা জুড়ে যেন মিশানো থাকে ভবিষ্যৎবাণীও। আমরা দেখতে পাই আমাদের সমাজে সরকার দলীয় লোক হলেই তারা সমাজে ক্ষমতাচর্চার প্রভাব বিস্তার করে। এরকম নজিরের বাংলাদেশে অভাব নাই। একবার মিডিয়া মারফতে দেখেছিলাম, দেশের সর্বোচ্চ নেতার এক পিএস প্রশাসনের লোককে হুমকি দিচ্ছিল। আমি অমুকের পিএস বলে। রাজনৈতিক ছাত্র দলের দিকে তাকালেই দেখা যায় এরা সিনিয়র ক্ষমতাশালী নেতাদের নাম নিয়ে যেকোনো কাজ করে যেতে কোন কুণ্ঠাবোধ করে না। এমনই আলী কেনান গভর্নরের পিয়ন হয়ে নিজের ক্ষমতা প্রকাশ করে তার প্রভাব বিস্তার করে যায়। এক মন্ত্রী একবার গভর্নরের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে আলি কেনান তাকে অপমানিত করে। কিন্তু অতিরঞ্জিত সবকিছুই মানুষের জীবনে অবনতি ঘটায়। যে গভর্নর একসময় তাকে এত উপরে তোলে সেই একসময় তাকে সর্বহারা করে পথে ছেড়ে দেয়। “এই হল আলি কেনানের স্বর্গ হতে পতনের কাহিনি।”
সর্বহারা আলি কেনান লজ্জার মুখে পড়ে ফিরে যেতে পারে না বাপের বাড়িতে। ঢাকার অলিগলি ঘুরেতে থাকা আলী কেনানকে একসময় সিদ্ধান্ত নিতে ভিক্ষাবৃত্তির। চতুর আলি কেনান চতুরতার সাথে শুরু করে ভিক্ষাবৃত্তি। প্রথমে এক লঞ্চযাত্রীর কাছে টাকা চাইতে গিয়ে সে আবিস্কার করলো তার নিজের নির্দেশ দেবার এক অদ্ভুত ক্ষমতাবল আছে। গভর্নরের পিয়ন থাকায় হয়তো সে ক্ষমতাবলের অর্জন। সে বলে বসে বিনয়ের সুরে নয় বরং প্রায় হুমকির সুরে, “দে তর বাপরে একটা ট্যাহা!” না দিয়ে যেন কোন উপায় আর থাকে না। এই ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সে হয়ে ওঠে প্রতাপশালী দরবেশ। লালসালুর মতো সে শুরু করে মাজার ব্যাবসা। দিনে দিনে তার প্রভাব বাড়তে থাকে। নতুন এ ধরনে উন্নতি নিয়ে আলি কেনানের উত্থান হয় নতুন জীবনে। আলি কেনানের প্রভাব-প্রতিপত্তি এতটাই বেড়ে যায় যে, ব্রিটিশ টেলিভিশনের কোনো এক চ্যানেল তাকে নিয়ে তথ্যচিত্রও তৈরি করে। আলি কেনান আবারো ক্ষমতাধর হয়ে ওঠে। তার প্রভাবে পুরো এলাকার মানুষজন প্রভাবিত হয়। তার দরবারে এখন দেশের সমস্ত ক্ষমতাশালীরা মাথা ঠুকে। সে তার এই জীবন গভর্নরকে দেখাতে চাই। সে এই জীবনটি কিছুর বিনিময়ে খোয়াতে চাই না। এই জীবনটি আলি কেনানের মাঝে তৈরি করে অহংবোধ।
তার এই জীবনে অনেকের আগমন ঘটে আসে কুকুর, পথের শিশু, জেলফেরত মাস্তান, দরবেশি শিখতে চাওয়া লোকসহ আরও অনেকে। তার এ জীবনে ছরমিন ও তার মেয়ের আগমন ঘটে। একদিন ছরমিন ও তার মেয়ে কেনানের কাছে আশ্রয় চাইলে সে জিগ্যেস করে “তুই কী সব কাম করতে পারবি?” সেই থেকে ছরমিন কেনানের গৃহ পরিষ্কার, রান্নাবান্না এবং রাতে কেনানের যৌন ক্ষুধা মিটানো সহ সব কাম করে যায়। তার জীবনে ছরমিন ও বিলেতফেরত এক মেয়ের আগমনের মধ্যে আবার বেজে উঠে পতনের সুর!…
প্রতাপশালী ব্যাক্তির প্রতি এদেশের মানুষের মনে প্রোথিত দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে আলি কেনানের গভর্নরের পিয়নগিরি যেমন সুবিধা ভোগ করে তেমন এদেশের মানুষের অন্ধবিশ্বাস এবং সত্যসন্ধানী বিমুখ মনোভাবের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আলি কেনানের ভণ্ডামিগিরিও খুব সহজেই ধোঁকা দিয়ে যায়। আলি কেনান খুব সহজেই দোকানদারের কাছে চাঁদাবাজি করে, তাকে চাঁদা দিতে ফুলতলীর দোকানদারদের অন্ধবিশ্বাস যেন বাধ্য। আবার কেনানের দুনো রূপই দেশের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মানুষকে বিপাকে ফেলে। গভর্নরের পিয়ন কেনানের দখলদারিত্বে যেমন অসহায়ত্ব লালন করে কেনানের ভোলার মানুষগুলো, ধর্মের পোষাকে ছদ্মবেশী রূপধারণ করা কেনানের কুচক্রান্তের ও ছলনার শিকারে শিকার হয়ে যায় ফুলতলী মসজিদের ইমামের অর্থনৈতিক দুর্বলতা। এসব চক্রান্তগুলো তারা যেন চিনতে পেরেও চিনতে চাই না। তারা এর সত্যতা জেনেও জানতে চাই না।
যুদ্ধ শুরু হলে সময়ের প্রথমপ্রান্তে আলি কেনান নিজেকে প্রকাশ করে “জয় বাংলার দরবেশ” হিসেবে। কেন সে এ নতুন পরিচয়ে আত্মপ্রকাশ করে? নিজের ব্যাবসাতে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে? না, গভর্নর তাকে বের করে দিয়েছিল সে ক্ষোভের বশে আলি কেনান পাকিস্তানের বিরোধীতা করে? হয়তো যুদ্ধচলাকালীন সময়ে তাকে সবাই ছেড়ে চলে যাওয়ায় সে একদম অসহায় হয়ে পড়ে তাই এই নতুন পরিচয়ে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করে আবার উত্থিত হতে চাই। না কি শেখ মুজিবের মতো আলী কেনানও জয় বাংলার দরবেশ বলে নিজের আত্মশক্তির পরিচয় দিতে চাই?
চিন্তাবিদ সলিমুল্লাহ খান আলি কেনানকে শেখ মুজিবুর রহমানের রূপক মনে করেন। সাধারণ পাঠক হিসেবে আমাদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। দ্বিধান্বিত হই। এটা বোধগম্য হয় না যে, এরকম ধূর্ত, ঠকবাজ ও ভণ্ডের সাথে শেখ মুজিবের সাথে লেখক কেমনে? কেন মিল রাখে? তবে আমরা কিছুটা বুঝতে পারি যে, উপন্যাসে লেখক অনেকসময় আলি কেনানকে শেখ মুজিবের সাথে মিল রেখেছে। আমরা দেখতে পাই, শেখ মুজিবের বিপুল পরিমাণে সমর্থক ছিল, যারা শেখ মুজিবের কথায় যুদ্ধে লাফিয়ে পড়ে, নিজের যান মাল সমস্ত কিছু নিয়ে জীবন উৎসর্গ করতে তৈরী হয়ে যায়। এদিকে আলি কেনানের অনেক ভক্ত সাগরেদ তারাও আলি কেনানের জন্য সবসময় যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত ছিল। তবুও দুজনের’ই দুঃসময়ে তারা খুব অল্প মানুষ কাছে পেয়েছিল হয়তো কাউকে পায় নি এবং দুজনকেই খুব কাছের মানুষ সর্ববিনাশের দারে নিয়ে দাড় করেছিল। আলী কেনান এবং শেখ মুজিবের ক্ষমতার দিকেও কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। শেখ মুজিব তার ক্ষমতাবলে যুদ্ধের সময় এবং এর পরের সময়ে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে। যদিও যুদ্ধের সময়কার এবং এর পরবর্তীকালীন সময়ের পরিস্থিতিতে কিছুটা পার্থক্য আছে। এদিকে আলী কেনানও নিজের ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। ক্ষমতার ওজনে নিজেকে শেখ মুজিবের সমতুল্য মনে করে আলী কেনান জোর গলায় উচ্চারণ করে,
“বাংলাদেশে আমি আর শেখ মুজিব ছাড়া আর কুনু বাঘের বাইচ্চ্যা নাই।”
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে দুজনেই নিজের স্থানে অবিচল থাকতে পারে না। শেখ মুজিব এবং আলি কেনান দুজনেরই জীবনে মিল রেখে লেখক “১৯৬৯-১৯৭২” পর্যন্ত সময়ের গল্প টানে। ১৯৭২ সালে যেমন বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে নিজের ক্ষমতায় আসীন হয় তেমন আলি কেনানও নিজের মাজারে ফিরে কর্মকাণ্ড চালু করে, “বাবা”র আসনে বসে। দুজনের জীবন চলতে থাকে, তবে এর মধ্যে তাদের জীবনে আর তেমন সাদৃশ্যতা খুঁজে পাওয়া যায় না। শুধুই নিজেদের ক্ষমতার কিছুটা সাদৃশ্যতা পাওয়া যায়। ১৯৭৫! বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে শহীদ করা হয়। বঙ্গবন্ধু পরিবার নিজেদের আপনদের অনেককে খুঁজে পায় না এদিকে আলি কেনানও দুঃসময়ে নিজের আপনজনকে খুঁজে পায় না। বঙ্গবন্ধু হত্যার শিকার হয় নিজের কাছের মানুষের দ্বারা, আলি কেনানের পতনও ঘটে নিজের আপনজনদের দ্বারা।
বঙ্গবন্ধু নিহত হলে আলী কেনান চিৎকার দেয়,
“শেখ মুজিব বাইচ্যা নাই, আমি ঢাকায় থাকুম কেরে? হের সমাজতন্ত্র অইল না, আমি হইলদ্যা পাখিরে হারাইলাম।”
সমাজবিজ্ঞানী ছফা উপন্যাসে গল্পের আদলে যে সামাজিক বাস্তবতার বর্ণনা দিয়েছেন। দক্ষতার সাথে আমাদের সামনে যে বিষয়াবলি উপস্থাপন করেছেন, পাঠক একটু মনোযোগ দিলেই বুঝতে পারবে আমাদের পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় তার অবস্থান এখনো বিদ্যমান। সমাজব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন না আসলে এ সমস্যাগুলোর সমাধানও সম্ভব হবে বলে মনে হয় ন।
ছফা নিজের অন্য উপন্যাস “আলাতচক্র, ওঙ্কার”এর মতো এখানেও বর্ণনা ও বিষয়বস্তুর প্রকাশভঙ্গীতে মুন্সিয়ানার পরিচয় দেয়। একেবারে সাধারণ ভাষায় অনন্য বৈশিষ্ট, নতুনত্বের স্বাদ, শব্দ ও রচনাশৈলীর দক্ষতা এবং পরিমিতিবোধ নিয়ে ছফা তার অস্তিত্বের প্রমাণ দেয়। দরবেশী কারবারে এটা “লালসালু’, ‘বহিপীর’, অথবা ‘শাহজাদা”এর মতো মনে হলেও পাঠক দৃষ্টিতে গল্পের স্বকীয়তা ধরা দিবে। লেখক উপন্যাসের গল্প খুব সাধারণভাবে সমানতালে বলে যান। অতিনাটকীয় কোন অবস্থা নাই। একদম সাধারণ গল্পের আবহে অসাধারণ একটি উপন্যাস।
▪▪▪
বই: একজন আলি কেনানের উত্থান-পতন
লেখক: আহমদ ছফা
ধরন: উপন্যাস
প্রচ্ছদ: সমর মজুমদার
প্রকাশক: খান ব্রাদার্স এন্ড কোম্পানি
মুদ্রিত মূল্য: ৳১৫০
▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪
—খোবাইব হামদান
১০/০৭/২০২১ | ০১:২৩ রাত
Views: 332