মানুষের মেডিসিন
_______________সুফিয়া ডেইজি
পাশের ফ্ল্যাটে নতুন ভাড়াটিয়ার তিন বছরের বেবিটা অসম্ভব রকম দুরন্ত যেমন চলাফেরায় ভীষণ স্বাভাবিকতা তেমন ই উচ্চ আওয়াজে নিজের মাঝে নিজেই গল্প বলার দারুণ পটুতা।আমি নিজ বাসা থেকে ই তার অনেক না বুঝা শব্দ পায়, বেশ লাগে আমার, মনে হয় কেউ যেনো আমায় ঘিরে আমার ক্ষেত্র প্রসস্থ করছে।যাইহোক আসলে আমি বরাবর ই মনে করি প্রত্যেক টা মানুষ সে শিশু কিংবা বুড়ো তার নিজের ব্যবহার দিয়ে ই অনেক কিছু অর্জন করে ফেলে বাকি যেটা রয়ে যায় তা হলো নিয়তি।বেবি শিশুটির নাম কখনো ই শুনতে পায়না কারণ তার মা তাকে ডাকে বলে শোনা যায় না আর বাবা যতবারই বাসার গেট খুলে ততবারই সাথে সাথে উচ্চ আওয়াজে বলতে শুরু করে কই, কই আমার মা কই রে, এভাবে যতক্ষণ রুমে না যায় চলে উনার আদর আর রুমে ঢুকেই বেবিটি আলদো আধভাঙ্গা বাক্যে বলে আইছো আইছো ঠিক তখন কি এক শুন্যতা আমায় ঘিরে ধরে মনে হয় একজন বাবা হিসেবে দুনিয়ায় আর তো কোন দায়িত্ব দরকার হয় না এমন আদর কেয়ার আর ভালোবাসা একটা শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট। আমরা ভাবি অনেক টাকা পয়সা প্রাইভেট খাওয়া আর ভবিষ্যৎ সম্পদ দিয়ে ই সুসন্তান পাবো আর এই মরিচীকা ই আমাদের সর্বহারা করে! মা বাবা হিসেবে যেমন পিতামাতা সন্তানের একটু আদর আর কেয়ার টা ভীষণ রকম দরকার তেমন ই সন্তানের আবদার আর আদরের উপর ও অনেক কিছু অজান্তেই দেয়া হয়ে যায়।একটা সুস্থ কেয়ার সবাই কে সুস্থতা দেয়। জানি পেটের দায় পিঠে টানতে মানুষ অনেক টাই বেরসিক হয়ে যায় তবে বিশ্বাস করি এটা মানুষের খুব দরকার। অনেকে ই তার কেয়ার গুলো প্রকাশ করতে পারে না আবার অনেকের ভিতরে সেই রকম অনুভূতি ই অনুপস্থিত কিন্তু এটা অনেক মুল্যবান তাই আত্মসচেতনতা খুব খুব প্রয়োজন। আজ কথাগুলো ডেস্কে দাঁড়িয়ে বলার সময় থেকে ই সুনিতার ভিতরে চরম একটা তোলপাড় চলছে, বরাবরের মতো সুনিতা আজও এই মুহুর্তে একা অচেনা নিরিবিলি পথের তাগিদ অনুভব করছে,এজন্যই দ্রুত বিদায় নিলো সবার মাঝে থেকে, খানিকটা এগিয়ে একটা গাছের নিচে পেপার পেতে বসলো সুনিতা।আচ্ছা পাড়ার জাবিদ আর জুথির কি দোষ ছিলো? কেনো তাদের সব থেকে ও কিছু নেই? কতটুকুই বা বয়স তাদের? বড় জোর একটা ১৩ আর আরেকজন ১১ বছরের। আমি যদি কিছুদিন ওদের পাশের বাসায় না থাকতাম এতো সুক্ষ্ম বিষয় টা কখনো ই বুঝতাম না,তার বাবা একজন অতি শান্ত আর ভদ্র মানুষ তার উপর উনি কখনো ই পান সিগারেট তো খান না বরং আড্ডায় বসেও কখনো চা নাস্তা খেয়ে পয়সা নষ্ট করেন না,অথচ এমন একটা শুন্যতা বাচ্চাগুলোর মাঝে যা সহজে চোখে পড়ে না।বাবা টা প্রতিদিন বাসায় ফিরে এক ব্যাগ সইদা নিয়ে, ভীষণ ধার্মিক ও পাচ ওয়াক্ত নামাজ আর এলাকায় সবার সাথে ভালো আলাপ। কিন্তু মা ও অনেক হাসিখুশি সারাক্ষণ তার ঠোঁটে চোখে হাসির ঝলক থাকে। বাইরে থেকে মনে হয় এমন পরিবার পাওয়া দুরুহ কিন্তু প্রশ্ন আমার অন্য খানে ছিলো, আর তা হচ্ছে বাচ্চাদের সব কিছুতেই ভয় ভীতি আর নিজেকে আড়াল করে রাখার প্রবণতায়।বাচ্চারা বেশ মেধাবী কিন্তু কখনো ই নিজে থেকে উত্তর দেয় না কিংবা অন্য কোন এক্টিভিটি তে তারা অংশ নিতে চায়না। শুধু তাই নয় তারা তাদের একটা ভুল ধরলে কিংবা বকা দিলে কোন রকম সৌজন্যতা দেখিয়ে বা আবদার করে বায়না করতে জানে না,একজন ভালো ছাত্রছাত্রীদের মাঝে এমন সকল ছোট ছোট কার্টিসির অনুপস্থিতি একটু চিন্তার বিষয় বৈকি!একদিন এক ছাত্র জাবিদকে বকাবকি করছে তার বই ছিঁড়ে ফেলেছে বলে আর কি অবস্থা! রেগে জাবিদ অস্থির হয়ে উঠেছে এক পর্যায়ে চড়াও হয়েছে ছাত্র টির উপর আমি সেখানে গিয়ে বললাম এটা তুমি ঠিক করোনি সাথে সাথে চোখমুখ লাল করে এমন ভাবে উত্তর দিলো যে আমি এটা করিনাই আমি অবাক হলাম একটা ভালো ছাত্রর এমন বলার আওয়াজ হবে কেনো? তারপর দেখলাম আমি চলে আসার পরে নিজের হাতের ব্যাগ নিজেই মাটিতে ছুড়ে ফেলে কিছুক্ষণ পরে চলে গেলো বাসায়। একদিন সুযোগ বুঝে জাবিদের মায়ের সাথে গল্প করলাম বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানতে পারলাম, জাবিদের বাবা খুব ভালো মানুষ কিন্তু সমস্যা একটা ই নিজে বাচ্চাদের সাথে বিভিন্ন কাজে অংশ গ্রহণ করে না,বাচ্চাদের কখনো ই গোসল করানো, খাইয়ে দেয়া,ঘুম পাড়ানো এমন কোন কাজ উনি করতে জানেন না,,যার ফলে বাচ্চারা একটু আবদার করা বাবা মায়ের সাথে জিদ করা বিভিন্নভাবে অভিমান করা এগুলো পুরো ই অনুপস্থিত। যার ফলে তারা কিছুটা বোরিং লাইফ লিড করে। তারা কোন কিছুর জন্য বাবার উপর আস্থা রাখে না।যেমন ধরুন বাবাকে বলেছে বাবা আইসক্রিম এনো কিন্তু বাবা মনে রাখবে না যে তার ছেলে মেয়ে স্ট্রবেরির ফ্লেবার পছন্দ করে না,দোকানদার যা দিবে নিয়ে আসবে।আর এমন নয় যে পরবর্তীতে খেয়াল রাখেন।সব কিছুই নিয়ে আসেন কিন্তু ভুলভাল।আমি জিজ্ঞেস করলাম তাহলে আপনি কেনো সেগুলোর প্রতি নজর রাখেন না?আমি এসব বুঝে উঠেছি এইমাত্র যে এগুলো আমার ছেলে মেয়ে র জন্য কোন ইফেক্ট হচ্ছে,এখন কোন মতে চলছে অতীত সমাধানে নিজের ও ক্লান্তি চলে আসে। আমরা কেনো দৌঁড়ায়।
Views: 65